বায়োটেক, এআই ও রোবটিক্সে নিজস্ব ধারায় চলবে বাংলাদেশ

১৭ জুলাই, ২০২৫  
১৭ জুলাই, ২০২৫  
বায়োটেক, এআই ও রোবটিক্সে নিজস্ব ধারায় চলবে বাংলাদেশ

বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ উদ্ভাবক ও গবেষকদের নানা উদ্ভাবন, শিল্প উদোক্তাদের সেবার পসরা তুলে ধরার পোশাপাশি দুই দিন ধরে নানা বিষয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা, বৈশ্বিক চুক্তি এবং বায়োটেকনোলজি, ইলেকট্রনিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবটিক্সসহ সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে স্বকীয় অবস্থানের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে  সরকার- উদ্যোক্তা-উদ্ভাবক -শিক্ষাবিদ এবং প্রবাসী মেধাবীদের যুথবদ্ধ পদক্ষেপের মাধ্যমে তরুণদের ভবিষ্যত কর্মজীবনের জন্য দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং নিজেদের প্রয়োজন নিজেরাই মেটানোর পাশাপাশি রফতানিতে অবদান রাখার শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হলো প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত বিয়ার সামিট ২০২৫ ও সেমিকন্ডাক্টর সিম্পোজিয়াম। 

১৭ জুলাই রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্সে ‘বাংলাদেশ ডিক্লারেশন’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই সম্মেলন।  

সিম্পোজিয়ামের আহ্বায়ক ও পাড্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তাফা হোসাইনের নেতৃত্বে সমাপনীতে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর (টিএসএমসি) এর গবেষক ও ইউনিভার্সিটি অব বার্কলে’র অধ্যাপক সাইফ সালাউদ্দিন, অ্যাপলাইড ম্যাটেরিয়ালস এর সাবেক ভিপি ড. আনিসুল খান, ইনোভিক্স ভিপি ড. শাতিল হক, গ্লোবাল ফাউন্ডার্স ভিপি ড. মাহবুব রাশেদ, এনএক্সপি ডিরেক্টর সৈয়দ বদরুদ্দোজা এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ডক্টর মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বাংলাদেশ ডিক্লারেশনে একেকটি অংশ পাঠ করেন। 

ঘোষণায় বাংলাদেশ ডিপ টেকনোলজি লিডারশিপের জন্য প্রস্তুত উল্লেখ করে দেশের উদ্যোমী তারুণ্যের মেধার স্ফূরণের জন্য সংকল্প ব্যক্ত করা হয়।  

বলা হয়েছে, বায়োটেক, এআই ও রোবটিক্স-এ কাউকে অনুসরণ করে নয়; সার্বভৌমত্ব ও সৃজনশীলতাই প্রাধান্য পাবে। নিজস্বতা দিয়েই আন্তর্জাতিক ইকোসিস্টেমে দেশের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করা হবে। এজন্য মানবিক, ন্যায্য ও অন্তর্ভূক্তিমূলক একটি জাতীয় রোডম্যাপ প্রণয়ের মাধ্যমে নাগরিক বান্ধব সেমিকন্ডক্টার ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা হবে। এই ইকোসিস্টেমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষমতায়ন এবং করদাতাদের ন্যায্যতা ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান গড়ে তুলে জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন করা হবে। সে  লক্ষ্যেই ২ হাজার বিয়ার প্রফেশনালদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে একটি ন্যাশনাল ট্যালেন্টফোর্স মিশন চালু করা হয়েছে। তিন বছরের ভিএলএসএ প্রোগ্রাম ও ডিজিটাল টুইন অবকাঠামো গড়ে তুলে ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ হাজার ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম প্রকৌশলী, ডিজাইনার ও গবেষক প্রস্তুত করা হবে। এরাই শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিল্পে বিপ্লব বয়ে আনবেন। 

ঘোষণায় স্বচ্ছ ও শক্তিশালী জবাবদিহিতার ভিত্তিতে পূণর্জাগরণের শক্তিতে গবেষণা নির্ভর পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্বে ফলদায়ক ও পরিবেশগতভাবে দায়িত্বশীল এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক বেঞ্চমার্ক উদ্ভাবন কৌশল নির্ধরাণের পরিকল্পনা গ্রহণের কথাও রয়েছে। এজন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্বকে স্বাগত জানালেও সেখানে ন্যায্যতা, দায় ভাগভাগির শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অংশীদারিতে আগ্রহী সকল বিদেশী সুবিধাভোগীকে অবশ্যই প্রতিযোগিতায় আসতে হবে। কোন একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ, পাবলিক তহবিলে অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকার পাবেন না। তবে চিন্তা, উদ্ভাবন এবং উদ্যোগের স্বাধীনতা সমুন্নত থাকবে। একইভাবে উদ্ভাবনার ক্ষুধা, মুক্ত পরিবেশ এবং প্রশ্ন, পরীক্ষা এবং তৈরির স্বাধীনতা থাকবে। এছাড়াও দেশে একটি ডিপ টেক ভবিষ্যত বিনির্মাণে মেধাসত্ব এবং উদ্যোক্তা স্বাধীনতা সুরক্ষার অঙ্গীকার করা হয়েছে।  

অঙ্গীকারের শেষ ভাগে অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তাফা হোসাইন বলেন, আমরা এই  ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ থেকে ১৯৯০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শহীদ এবং আগামীকালের নির্মাতাদের উৎসর্গ করছি। আমাদের ইতিহাস রচিত হয়েছে সাহসিকতায়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালে, আমরা আবার জেগে উঠব। এই ঘোষণাপত্রটি সেই সাহসীদের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি যারা নিহত হয়েছেন এবং সেই সাহসীদের প্রতি যারা ন্যায়সঙ্গত উদ্ভাবনাময় এবং সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য জেগে উঠেছেন।

এর আগে ইলেকট্রন ডিভাইস এবং ন্যানোটেকনোলজির নিয়ে কাজ করা ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক প্রকৌশলীদের পেশীদার বৈশ্বিক সংগঠন আইট্রিপলই ইডিএস এর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই করে বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআইএ)। বিএসআইএ প্রেসিডেন্ট এম এ জব্বার এবং আইট্রিপলই ইডিএস প্রেসিডেন্ট বিন ঝাও নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। 

চুক্তির মাধ্যমে বৈদ্যুতিক প্রকৌশল এবং ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশলের ক্ষেত্রে গবেষণা, উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করণ, বৈশ্বিক প্রযুক্তিগত তথ্য এবং শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে ইলেকট্রন ডিভাইস এবং ন্যানোটেকনোলজির জন্য মান উন্নয়নে সহায়তা, বৈজ্ঞানিক সম্মেলন এবং কর্মশালা আয়োজন, পেশাদার নেটওয়ার্কিং এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি  এবং তরুণ প্রকৌশলী এবং বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে আইট্রিপলই ইডিএস। 

সিম্পোজিয়ামে  স্থানীয় সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যত রূপরেখা তুলে ধরবে বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআইএ)। স্থানীয় সেমিকন্ডাক্টর শিল্প উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসআইএ সভাপতি এম এ জব্বার। এআই যুক্ত সেমিকন্ডাক্টরের ফ্রন্ট এন্ড থেকে ব্যাকএন্ড এর নকশা, এমবেডেড সিস্টেম এবং প্রটোটাইপ, প্যাকেজিং ও টেস্টিংসহ ডিজিটাল টুইন, নন সলিকন ডিভাইসের নকশা-কে কেন্দ্র করে প্যানেল আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন এনএক্সপি ডিরেক্টর ড. সৈয়্যদ বদরুদ্দোজা।  এছাড়াও অপর একটি সেশনে অ্যাপলাইড ম্যাটেরিয়ালস এর সাবেক ভিপি ড. আনিসুল খানের সঞ্চালনায় বিদেশী অতিথিদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এসকে হাইনিক্স সিভিপি জিন লিম, মিডিয়াটেক সিভিপি প্যাট্রিক উইলসন, স্যানডিস্ক ও ওয়েস্টার্ন ডিজিটালের টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ভিপি ফুমিতোশি ইতো গ্লোবাল ফাউন্ডার্স ভিপি ড. মাহবুব রাশেদ, টোকিও ইলকট্রনিক্স এর ভিপি বৈদ্য ভরদ্বাজ এবং ইনোভিক্সভিপি ড. শাতিল হক অংশ নেন।