উচ্চ স্পেকট্রাম মূল্য ডিজিটাল অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারে: গবেষণা

বাংলাদেশের অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ স্পেকট্রাম মূল্য এবং করের বোঝা মোবাইল নেটওয়ার্কে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করছে। কমিয়ে দিচ্ছে ইন্টারনেটের গতি। ‘ফাইভ জি’ বিস্তারে বিলম্ব ঘটাচ্ছে। ‘বাংলাদেশে স্পেকট্রাম মূল্যের প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে মোবাইল অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ। এজন্য স্পেকট্রাম মূল্য, লাইসেন্সিং এবং খাতভিত্তিক কর সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে সরকারের প্রতি ৭০০ মেগাহার্টজ ও ৩.৫ গিগাহার্টজ ব্যান্ড দ্রুত বরাদ্দ – ক্রমবর্ধমান ডেটা চাহিদা ও গ্রামীণ কাভারেজ পূরণে যথেষ্ট স্পেকট্রাম নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছ সংগঠনটি।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে স্পেকট্রাম ফি অপারেটরদের পুনরাবৃত্ত রাজস্বের প্রায় ১৬% দখল করে—যা এশিয়া-প্যাসিফিক গড় (১০%) ও বৈশ্বিক গড়ের (৮%) চেয়ে অনেক বেশি। অন্যান্য রাজস্ব ভাগাভাগি, সারচার্জ এবং ভোক্তা কর যোগ করলে মোট আর্থিক বোঝা দাঁড়ায় বাজার আয়ের ৫৫%, যা বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ। ফলে যদি ২০২৬ সালের নবায়ন ও নতুন ব্যান্ড নিলামে বর্তমান বা পূর্বের উচ্চমূল্য বহাল থাকে, তবে ২০৩৫ সালের মধ্যে স্পেকট্রাম খরচ অপারেটরদের আয়ের ২১%-এ পৌঁছাবে। এতে অপারেটররা স্পেকট্রামের কিছু অংশ ফেরত দিতে বা নতুন ব্যান্ড গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হবে—যা ইন্টারনেট গতি, নেটওয়ার্ক মান এবং ৫জি গ্রহণকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় চারটি অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এগুলো হলো- বাজার বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে রিজার্ভ ও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা এবং ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেওয়া। রাজস্ব ভাগাভাগি ও উচ্চ হ্যান্ডসেট শুল্ক বাতিল করে স্মার্টফোন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে সাধারণ কর কাঠামো প্রবর্তন এবং দীর্ঘমেয়াদি লাইসেন্স নিশ্চিতকরণ ও মেয়াদ বাড়ানো এবং মুদ্রা ঝুঁকি কমাতে টাকা-ভিত্তিক কিস্তি চালু করা।
গবেষণার মূল অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, স্পেকট্রাম ফি এশিয়া-প্যাসিফিক গড়ের সাথে সামঞ্জস্য করলে (প্রায় ৫০% হ্রাস), ২০৩৫ সালের মধ্যে গড় ডাউনলোড গতি ১৭% বৃদ্ধি পাবে, ৯৯% নাগরিক ৫জি কাভারেজ পাবে এবং অর্থনীতিতে ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হবে। স্পেকট্রাম ফি বৈশ্বিক গড়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য করলে (প্রায় ৭৫% হ্রাস), ৪জি গতি ২২% বৃদ্ধি পাবে, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত হবে এবং ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিরিক্ত অর্থনৈতিক সুফল আসবে। স্পেকট্রাম ফি কমানো মানেই সরকারি রাজস্ব ক্ষতি নয়। উন্নত সংযোগ ও বাড়তি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সরাসরি রাজস্ব ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারবে।
জিএসএমএ-এর হেড অব এশিয়া প্যাসিফিক জুলিয়ান গোরম্যান বলেন, “মোবাইল সংযোগই বাংলাদেশের ডিজিটাল স্বপ্নের অক্সিজেন। অথচ অপারেটররা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ স্পেকট্রাম ও করের বোঝা বহন করছে। সাশ্রয়ী, পূর্বানুমেয় মূল্য এবং আধুনিকায়িত লাইসেন্স শর্ত নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে সাশ্রয়ী কাভারেজ বিস্তৃত হয় এবং ট্রিলিয়ন-ডলার অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি সফল হয়। আমরা সরকার ও শিল্প খাতের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, যাতে স্পেকট্রাম নীতি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির অনুঘটক হয়, বাঁধা নয়।”
১০ সেপ্টেম্বর, বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অ এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব; ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আব্দুন নাসের খান; বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (টেলিকম) মো. জহিরুল ইসলাম; বিটিআরসি কমিশনার (স্পেকট্রাম) মাহমুদ হোসেন এবং জিএসএমএ এশিয়া প্যাসিফিকের প্রধান জুলিয়ান গোরম্যান।