বিজ্ঞানপ্রেমীদের উচ্ছ্বাসে ভাসলো একাদশ আইজেএসও বাংলাদেশের জাতীয় পর্ব

রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি(IUBAT)-এর প্রাঙ্গণে প্রায় ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো দেশে বিজ্ঞানচর্চার সবচেয়ে বড় আসর বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড। বিজ্ঞানপ্রেমীদের উচ্ছ্বাসে ভাসলো ১১ তম বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড- এর জাতীয় পর্ব। দিনব্যাপী প্রতিযোগিতা শেষে ৫ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার বিকেলে জাতীয় পর্ব থেকে ৬০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
প্রতিযোগিতায় প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সেন্ট জোসেফ ইন্টারন্যাশনার স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আহানাফ আদিব, সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র বিহান পল এবং জুনিয়র ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রাজশাহী ভোলানাথ বিশ্বেশ্বর হিন্দু একাডেমীর অষ্টম শ্রেণির ছাত্র জ্যোতির্ময় বিশ্বাস। তিন চ্যাম্পিয়নের হাদে তুলে দেয়া হয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।
বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেয়ার মাধ্যমে ইতি টানা হয় প্রথমবারের মতো প্রতি ক্যাটাগরিতে একজন করে চ্যাম্পিয়ন নির্বাচনের এই জাতীয় পর্বে। এই পর্বে বিজয়ী মোট ৬০ জনের মধ্যে প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে ১০ জন, জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ২৮ জন এবং সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে ২২জনকে দেয়া হয় মেডেল ও সার্টিফিকেট।
আগামীতে এদের নিয়ে নিয়ে আয়োজন করা হবে বিডিজেএসও ক্যাম্প, যেখানে তারা নিবিড় প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির সুযোগ পা্বে। ক্যাম্পের বিভিন্ন পারফরম্যান্স অনুযায়ী বাছাই করা হবে সেরা ৬ জন প্রতিযোগীকে, যাদের নিয়ে গঠিত হবে ডিসেম্বরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ২২তম আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড (আইজেএসও)-এর বাংলাদেশ দল ২০২৫।
সকালে বেলুন উড়িয়ে এবং জাতীয় সংগীতের সাথে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। অলিম্পিয়াড পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় রোবটিক্স ও ড্রোন শো। কৌতূহলী শিক্ষার্থীদের দেখানো হয় কিভাবে একটি রোবট ও ড্রোন পরিচালনা করা হয়। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেকনোলজির ডিন অধ্যাপক মোঃ মনিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুশতাক ইবনে আয়ুব, এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান। এক শিক্ষার্থীর প্রশ্ন ছিল, “গাছের পাতার ক্লোরোফিল মানুষের দেহে প্রবেশ করালে কি মানুষও সবুজ হয়ে যাবে?” উত্তরে অধ্যাপক ড. মুশতাক ইবনে আইয়্যুব হেসে বলেন, " তা কখনোই হবে না। ক্লোরোফিল কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি লাগবে।"
দুপুরে খাবারের বিরতির পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে ম্যাজিশিয়ান স্বপন দিনার একটি ম্যাজিক শো পরিবেশন করেন। এরপর বিকাল ৩টায় শুরু হয় আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ১১তম বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি-এর উপচার্য প্রফেসর ড. আব্দুর রব মিয়া। তিনি বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে গর্ব করে বলেন, “ বর্তমান শিক্ষার্থীরা কেবল পাঠ্যবইয়ের জ্ঞানেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের জগতে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করছে। শিক্ষার্থীরা সমাজ ও দেশের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোঃ রাফাত উল্লা খান। তিনি তার বক্তব্যে বিজ্ঞানের গুরুত্বকে তুলে ধরে বলেন, “ আজকের পৃথিবীতে প্রতিটি অগ্রগতির পেছনে বিজ্ঞানের অবদান রয়েছে। শিক্ষার্থীদের উচিত বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনে নিজেদের নিয়োজিত করা। তোমাদের প্রতিটি সাফল্য আমাদের গর্বিত করে এবং আমাদের ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদী করে তোলে।”
এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জালাল আহমেদ, ঢাকা উত্তর অঞ্চলের জোনাল হেড এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ মুজিবর রহমান, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সভাপতি মুনির হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেকনোলজির ডিন অধ্যাপক মোঃ মনিরুল ইসলাম।
২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি নিয়মিত ভাবে এই অলিম্পিয়াডে দল পাঠিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে এ বছরে গত জুলাই মাস থেকে ৫০টিরও বেশি জেলা শহরের দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি প্রচারণা ও প্রস্তুতি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে মোট ১৭,০০০-এর বেশি রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থীর নিবন্ধন সম্পন্ন করে। যাদের অংশগ্রহণে অনলাইন বাছাই পর্বের পর নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা পর্যায়ক্রমে নিজের বিভাগে আয়োজিত অফলাইন আঞ্চলিক বাছাই পর্বে অংশগ্রহণ করেছে। ছয়টি আঞ্চলিক পর্ব, ই-অলিম্পিয়াড এবং স্কুল অলিম্পিয়াড বিজয়ীসহ প্রায় ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে আজকের এই জাতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে।