এনটিটিএন’র ৪ লাইসেন্স আবেদন থেকে বাদ পড়তে পারে ২টি

ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) লাইসেন্স পেতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) আবেদন করেছে চারটি কোম্পানি। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনওয়াইড আইএসপি লাইসেন্সধারী ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড, মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের মূল কোম্পানি ভিওন, আইসিটি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এবং সামরিক খাতের আর্মি ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (এটিসিএল)।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে এনটিটিএন লাইসেন্স পেতে দ্বিতীয় দফায় আবেদনকারী ম্যাংগো টেলিকম ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আবেদন করেছিলো।
সূত্রমতে, লাইসেন্সিং গাইডলাইন অনুযায়ী, কোনো একক নামে কোনো একটি প্রতিষ্ঠান একইসাথে আইএসপি এবং এনটিটিএন লাইসেন্স নিতে পারে না। ফলে ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেসকে এনটিটিএন লাইসেন্স না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি। শিগগিরই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি প্রকাশ করবে নিয়ন্ত্রক কমিশন।
অপরদিকে এনটিটিএন গাইডলাইনের ক্লজ ৫.০৪ অনুযায়ী মোবাইল ফোন অপারেটরের লাইসেন্স পাওয়া কোম্পানির অংশীদাররা ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে না। সে হিসেবে ভিওনের এনটিটিএন লাইসেন্সের আবেদন গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই। তবে ভিওনের আবেদন এখনই বাতিল করেনি বিটিআরসি। নতুন করে নেটওয়ার্ক টপোলজি রিফর্ম কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সুপারিশ করা নীতিমালা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে তারা এই আবেদনের বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ফলে লাইসেন্স দেয়োর পূর্বশর্ত অনুযায়ী, বিটিআরসি এই আবেদনটি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পূর্বানুমোদনের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাকি দুইটি প্রতিষ্ঠান- বিসিসি এবং এটিসিএল নতুন করে এনটিটিএন লাইসেন্স পেতে পারে। তবে আর্মি ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের আবেদনটি বিটিআরসি-এর লাইসেন্স ইস্যুয়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পোর্টালের মাধ্যমে না করে, সরকারের ডিজিটাল ফাইল ব্যবস্থাপনা সিস্টেম ডি-নথির মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়েছে। ফলে সঠিক মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়ার পর বিটিআরসি এটি পর্যালোচনা করবে। এক্ষেত্রে নতুন লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। এই প্রতিষ্ঠানটি বিগত সরকারের সময় ২০২৩ সালের ২২ মে দেশের ২৬০০ ইউনিয়নে দ্রুতগতির ইন্টারনেট অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, আপগ্রেডেশন, প্রতিস্থাপন, পরিচালনা এবং রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের জন্য সামিট কমিউনিকেশন ও ফাইবার অ্যাটহোমের সঙ্গে পিপিপি চুক্তি করেছিলো। ইনফো সরকার-৩ প্রকল্পের অধীনে ব্যাপকভাবে সমালোচিত ২০ বছর মেয়াদী ওই চুক্তি অনুযায়ী, সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড ১২৯৩টি এবং ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড ১৩০৭টি ইউনিয়নে কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) এর বর্তমানে এনটিটিএন লাইসেন্স রয়েছে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফাইবার@হোম লিমিটেড, সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড এবং বাহন লিমিটেড এনটিটিএন লাইসেন্সিং হিসেবে দেশজুড়ে ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশনের কাজ করছে।
বিটিআরসি থেকে প্রাপ্ত নথি অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ছয়টি এনটিটিএন অপারেটর সম্মিলিতভাবে দেশজুড়ে ১ লক্ষ ৪৮ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করেছে।
বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০০৮ সালে দেশের প্রথম এনটিটিএন লাইসেন্সধারী ফাইবার@হোম প্রায় ৫০,০০০ কিলোমিটার, সামিট কমিউনিকেশন্সের প্রায় ৪০,০০০ কিলোমিটার এবং নবেীন এনটিটিএন বাহন লিমিটেডের ৭,৮১৭ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে।
অপরদিকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৪০,০০০ কিলোমিটার, বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩,৮০০ কিলোমিটার এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের প্রায় ৮,৫০০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার রয়েছে।
এছাড়াও, সরকার ইনফো-সরকার ৩ এবং কানেক্টেড বাংলাদেশের মতো প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৩৫,০০০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হেয়েঠে। মোবাইল অপারেটরদের প্রায় ৮,২০০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার অবকাঠামো রয়েছে।