সোশ্যাল ট্যাবু কাটিয়ে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে বাজেট বৃদ্ধির আহ্বান
কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প নেই

সোশ্যাল ট্যাবু কাটিয়ে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে বাজেট বৃদ্ধি এবং অন্তর্গত দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের মাধ্যমে নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক, বাস্তবভিত্তিক ও ভবিষ্যতমুখী নীতিচিন্তার ভিত্তি তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন থাদ সংশিলষ্টরা। তারা মনে করেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা শ্রম বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। যার ফলে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে বের হওয়ার পরেও চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে যত বেশি শিক্ষিত হচ্ছে, তত বেকারত্ব বাড়ছে। তাদের মাতে, এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প নেই। সরকারি চাকরির পেছনে না ছুটে কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায়, সে বিষয়ে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, প্রযুক্তিগত দিক থেকে পিছিয়ে থাকার কারণে বেকারত্ব দিন দিন বাড়ছে। বিশাল বেকারত্বের চাপ, বিশেষ করে তরুণদের ওপর বেশি পড়ছে। সরকারি চাকরির নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদার প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ এবং বিসিএস নির্ভর মানসিকতা তরুণদের বিকল্প কর্মসংস্থান থেকে দূরে রাখছে। অন্যদিকে আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলো যেসব পদের চাহিদা তৈরি করছে, তার তুলনায় দক্ষ জনবল খুব কম। আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলোয় প্রচুর পরিমাণে ডিজাইনার দরকার, প্যাটার্ন মাস্টার দরকার। ভাষা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি আমাদের সার্টিফিকেট নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থাকে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষায় রূপান্তর করতে হবে। দেশে কেবল ম্যানেজার নয়, প্রয়োজন কার্যকর চ্যানেল, যারা দক্ষতা দিয়ে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।
তিনি বলেন, যুব সমাজকে চাকরির প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন নিরীক্ষার দিকে যেতে হবে। বিসিএস কিংবা একটি নির্দিষ্ট সরকারি চাকরি পাওয়ার স্বপ্নে আটকে না থেকে নিজস্ব দক্ষতা ও আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে হবে মন্তব্য করেন ফাহমিদা। তিনি আরও বলেন, দেশের উচ্চশিক্ষা শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তার মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যা শেখানো হচ্ছে, তার বাস্তব প্রয়োগ নেই, বাজারেও চাহিদা নেই। ফলে যত বেশি শিক্ষিত হচ্ছে, তত বেকারত্ব বাড়ছে।
‘তুমি মাল্টিবিলিনিয়ার হতে পারো। তুমি অনেক ধনী হতে পারো। দেখছেন তো কানাডায়, আমেরিকায়, ইন্দোনেশিয়ায়, মালয়েশিয়ায় বাড়ি করা যায়। ঢাকা শহরে ছোট একটি বাড়ি হলেও হবে, তবে কমপক্ষে যেন ছেলে-মেয়ে বিদেশে পড়তে যায়। বেতন হিসাব করে দেখুন, এসব অ্যাফোর্ডেবল না। আমি সবার কথা বলছি না। তবে অনেক ভালো-সৎ অফিসার আছে’- যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে গত কয়েক বছরে এই ট্রেন্ড হয়ে গেছে। যদি কোনো কিছু কিনতে হয়, দাম যদি ১০০ টাকা হয়, এর মধ্যে ২০০ টাকা ঢোকাও। ২০০ টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়ে যায়। এটা আমার ১০-১১ মাসের অভিজ্ঞতা। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, সমস্যা হলো শিক্ষিত বেকারের কথা যদি বলি, আমেরিকায় গিয়ে আমরা ট্যাক্সি চালাব, রেস্টুরেন্টে কাজ করব, কিন্তু বাংলাদেশে করতে পারি না। এটি বড় সমস্যা। আমাদের দেশে একটা সোশ্যাল ট্যাবু হয়ে গেছে, ট্যাক্সি চালালে বিয়ের বাজারে সে অচল।
শাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রচলিত ধারণা ভাঙতে হবে যে সরকারি চাকরিই একমাত্র গন্তব্য। একটি কারিগরি স্কিল দিয়ে ছোট একটি উদ্যোগ শুরু করলেও সম্মানজনক কর্মসংস্থান সম্ভব। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এই ধরনের উদ্যোগ আরও বেশি প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সৌদি আরবে ৯০ শতাংশ নারী শ্রমিক গৃহকর্মী, কিন্তু কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকের অভাব। অথচ বাংলাদেশে স্ট্রিট ফুড ও ক্ষুদ্র শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও যুবকরা এদিকে আগ্রহী নয়।
গবেষণার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার কথা পছন্দ নাও হতে পারে। সরকারের লোকজন দিয়ে এই ধরনের কোনো চিন্তা-ভাবনা করাতে পারবেন না। কারণ আমাদের মন-মানসিকতা হচ্ছে নয়টা-পাঁচটা। পাঁচটার সময় আমরা অফ। সারাদিন ফাইল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করি, আমাদের গবেষণা বলতে কোনো কিছু নেই।
তিনি শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করেন, যা শ্রম অধিকার ও প্রশিক্ষণে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া নতুন উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘কর্মসংস্থান অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সৌদি আরবে ৯০ শতাংশ নারী শ্রমিক গৃহকর্মী, কিন্তু কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকের অভাব। অথচ বাংলাদেশে স্ট্রিট ফুড ও ক্ষুদ্র শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও যুবকরা এদিকে আগ্রহী নয়।
আয়োজনে আরো উপস্থিত ছিলেন শ্রম উপদেষ্টা ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘দেশে প্রায় ২ কোটি বেকার যুবক রয়েছেন, যাদের উল্লেখযোগ্য অংশের কোনো কারিগরি জ্ঞান নেই। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির পাশাপাশি দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই কারিগরি শিক্ষার প্রসারে এবং এই খাতে বাজেট বাড়ানোর উপর জোর দিতে হবে।’ উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরে কর্মের মর্যাদা এবং সুযোগ নিয়ে চিন্তাভাবনার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সারা বিশ্বে এখন দক্ষ কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’
স্বাস্থ্য খাতের আলোচনায় এনসিপি সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে হেলথ ইনফরমেশন প্ল্যাটফর্ম, ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড, ন্যাশনাল ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন, একটা স্ট্রাকচারাল ডিজিটাল ওয়েলফেয়ার পাথওয়ে, কম্প্রিহেনসিভ ইমার্জেন্সি সার্ভিস এবং মডার্নাইজ হেলথওয়ার্ক ফর স্ট্র্যাটেজি প্রয়োজন। পেটে ব্যথার একটি উদাহরণ দিয়ে পুরো স্বাস্থ্যসেবার সংস্কারের পরামর্শ তুলে ধরে তিনি বলেন, পেটে ব্যথা হলে আমি কী করবো? সিরিয়াস কিছু নাকি ধৈর্য নিয়ে নিজের যত্ন করলেই হবে। এটার জন্য সার্চ করে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য পথ নেই। এ জন্য হেলথ ইনফরমেশন একটা অ্যাপস দরকার।