চিকিৎসায় কোনো কাঠামো নেই; বাদানুবাদের কিছু নেই ; মুচলেকা নিজের কাছেই

আমরা আর গুহাবাসী নই

১২ মে, ২০২৫  
১২ মে, ২০২৫  
আমরা আর গুহাবাসী নই

চিকিৎসকরা নিজের প্রচেষ্টাতেই ২৫ শতাংশ সেবার মান বাড়াতে পারেন বলে মনে করেন  প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এজন্য তিনি চিকিৎকদের প্রতি কোনো বাদানুবাদে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। 

সোমবার (১২ মে) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রথম সিভিল সার্জন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান ‍উপদেষ্টা বলেন, স্বাস্থ্যসেবার কোনো কাঠামো লাগে না। পথে যাওয়ার পথে ‍যদি দেখি, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছে তবে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান এমন কথা বলতে পারি না। আমি চিকিৎসক, আমাকে এখনই তাকে চিকিৎসা দিতে হবে। এখান থেকে পরিত্রাণ নেই। আমার হাতে সব কিছু থাকলে। আমি চিকিৎসা দেবো না তা কোনো ডাক্তার বলতে পারবে না। 

তিনি আরো বলেন, আমাদের ওপর অনেক দায়িত্ব। অনেক ক্ষমতা। আমরা আর গুহাবাসী নই। কোনো ব্যাখ্যা দিয়ে কাউকে বোঝাতে পারবো না। অন্তর্বর্তী সময়ে পরিবর্তনের অনেক কিছুই স্বাস্থ্য কমিশন তুলে ধরেছে। আমরা এটাকে সম্মান করি। কিন্তু দ্রুত চলে যাওয়া মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে। আজকের কাজ আজকেই করতে হবে। আমরা যা আছে; যেটুকু দিয়েছে তা নিয়ে যেটুকু সেবা দেয়া যায় দিতে হবে। এখন দুর্নীতির সুযোগ চলে গেছে। পুরোনো অভ্যাসের ইতি টানতে হবে। আপনাদের মনে করতে হবে, আমার কাছে মানুষ অনেক ক্ষমতা আছে। স্বাস্থ্য এমন একটা জিনিস এখানে বাদানুবাদের কিছু নেই; রাজনৈতিক মতাদর্শের কিছু নেই। মানুষ মারা যাচ্ছে আমি তাকে সেবা দিচ্ছি। তার জীবন রক্ষার চেষ্টা করছি। 

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, আপনি ডাক দিলে সবাই ছুটে আসবে। তাই আলাপ আলোচনা করে নিজেরা কি করতে পারি তা নির্ধারণ করতে হবে। কারো কাছে প্রতিজ্ঞা করার কিছু নেই। মুচলেকা দেয়ার কিছু নেই। নিজের মুচলেকা নিজের কাছে। আমাদের যা আছে তা দিয়েই বিরাট পরিবর্তন করা সম্ভব।  আমরা যা করি তাই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা। আমি আমার মন ঠিক করলেই ২৫ শতাংশ সেবার মান বাড়বে। 

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে জেলা পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নিয়ে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির প্রকট অভাব রয়েছে। এ অভাব দূর না হলে চিকিৎসক ও নার্সসহ জনবল যতই নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাওয়া যাবে না। 

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সাত হাজার সুপারনিউমারি পদ সৃষ্টি ও নতুন তিন হাজার চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সাত হাজার সুপারনিউমারি পদ সৃষ্টির মাধ্যমে বঞ্চিত চিকিৎসকদের পদোন্নতি দেওয়া হবে।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে চলমান সম্মেলনে ১৩টি মন্ত্রণালয়ের ১১টি কার্য অধিবেশন হবে। অধিবেশনগুলোতে খোলামেলা আলোচনা হবে স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা ও উন্নয়ন নিয়ে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতি বছর ৬৪ জেলা প্রশাসকদের নিয়ে ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জেলার নানা বিষয় উঠে আসে। এবার সেই আদলে ৬৪ জেলার স্বাস্থ্য প্রশাসকদের নিয়ে প্রথমবার সিভিল সার্জন সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলনের আগে সেবার ক্ষেত্রে সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। সিভিল সার্জনরা তাদের মতামত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।