‘আইসিটি ও টেলিকম খাত ফ্যাসিস্টমুক্ত’ করার দাবি

সরকারি শ্বেতপত্রের ভিত্তিতে আইসিটি ও টেলিকম খাতে জড়িত দুর্নীতিবাজ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, দ্রুত স্বচ্ছ ও লাইসেন্স প্রক্রিয়া ও সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদি লাইসেন্স ব্যবস্থার দাবি তুলেছে ফ্যাসিস্ট বিরোধী জুলাই নেটওয়ার্ক। তাদের দাবি, অনতিবিলম্বে এটুআই, আইডিইএ, স্টাটআপ বাংলাদেশসহ প্রকল্পগুলোর দুর্নীতি প্রকাশ ও তদন্ত, আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা এবং ইডিসি প্রকল্পের টেন্ডার ফের স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে হবে।
বিটিআরসি-কে আওয়ামী স্বৈরাচার মুক্ত করতে শুক্রবার (১৬ মে) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এই প্রতিবাদ সমাবেশে এসব দাবি তোলা হয়। সামাবেশে টানানো ব্যানারে লেখা ছিলো ‘নতুন লাইসেন্স দেয়া এবং স্বৈরাচারের দোসরদের লাইসেন্স কেড়ে নাও’ এবং ‘বৈষম্য বন্ধ করে বঞ্চিতদের লাইসেন্স দাও’ স্লোগান লেখা ছিলো। পাশেই আরেকটি ব্যানারে সারিবদ্ধভাবে এই নেটওয়ার্কের দাবিগুলো লেখা ছিলো।
সেখানে আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দুর্নীতিবাজদের অপসারণ, নতুন উদ্যোক্তাদের লাইসেন্স দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরির দাবি জানানো হয় নেটওয়ার্ক এর পক্ষ থেকে।
প্রধান বক্তা হিসেবে গণ-অভ্যুত্থানের পর গণসার্বভৌমত্ব কায়েম করা প্রধান দায়িত্ব মন্তব্য করে সমাবেশে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, ফরহাদ মজহার বলেন, জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে ডিজিটাল সেক্টরসহ সব খাতকে ফ্যাসিস্টদের সহযোগীদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে হবে।
এসময় তিনি মতাদর্শিক বিভাজন পরিহার করে গণসার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্য গড়ে তুলতে ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আরো বলেন, গণসার্বভৌমত্বকে অবহেলা করে মতাদর্শিক লড়াইকে যারা মুখ্য করতে চায় তারা মূলত ফ্যাসিজমকেই ফিরিয়ে আনতে চায়।
বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রকাশিত আইসিটি খাতের শ্বেতপত্র দেখিয়ে জুলাই ফ্যাসিস্টবিরোধী নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক মো. আবুল কাশেম বলেন, এখানে কোনো কোম্পানি কত টাকা পাচার করেছে নাম উল্লেখ করে তার হিসাব আছে। গত ১৫ বছরে আগামী লীগ, যুব লীগের নেতারা লাইসেন্স পেয়েছে। তারা পলকের সঙ্গে ইন্টারনেট বন্ধে জড়িত ছিলো। ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যায় শামিল হয়েছে। কিন্তু গত ৯ মাসে এদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বিচার হয়নি। দায়ীদের অনেকেই দেশ থেকে ভাগলেও তাদের ব্যবসা এখনো চলছে।
ন্যাপ সেক্রেটারি গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, গত ১৫ বছর বঙ্গবন্ধুর নাতি, ফ্যাসিবাদের জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র একটি চেয়ারে বসে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের হাজার হাজার টাকা লুট করেছে। এখন বোঝা যাচ্ছে ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মা প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে রয়ে গেছে। ফ্যাসিবাদের নায়করা গেলেও তাদের সন্তানেরা কিন্তু এখনো আইসিটি মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। তাদের চিহ্নিত করতে বা দমন না করতে পারলে জুলাই বিপ্লবের ফসল হাতছাড়া হয়ে যাবে।
সমাবেশে আইসিটি ও টেলিকম খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই এই আন্দোলন একদিনের সমাবেশে সীমাবদ্ধ থাকবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে ফ্যাসিস্টবিরোধী জুলাই নেটওয়ার্ক। তারা বলেছে, আইসিটি ও টেলিকম খাত এখনো আওয়ামী সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি। তাই ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের আইসিটি ও টেলিকম খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য তাদের সংগ্রাম চলবে।