ইন্টারনেট সেবায় দেশীয় উদ্যোক্তা বনাম বিদেশী আধিপত্য

Mar 5, 2025 - 10:21
Mar 5, 2025 - 14:29
ইন্টারনেট সেবায় দেশীয় উদ্যোক্তা বনাম বিদেশী আধিপত্য

মোবাইল অপারেটরদের ফিক্সড ওয়্যারলেস অ্যাক্সেসের কারণে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে দেশের ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা। বহুজাতিক ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে তিলে তিলে গড়ে তোলা নেটওয়ার্ক হারাতের বসেছে দেশী উদ্যোক্তারা। অজ্ঞাত শক্তিতে মোবাইল ডোমেইন থেকে ফিক্সড ডোমেইনকেও দখলে নিতে আমলে নেয়া হচ্ছে না দেশের স্বার্থ। 

এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিআরসি’র বর্তমান লাইসেন্স পূর্ণমূল্যায়ন কমিটির কয়েকজন সদস্য ঊষ্মা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, কমিটি গঠনের পর কেবল একটি মাত্র বৈঠক হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু বিষয়ে দ্বিমত দেখা গেছে। তারপরও যদি আপত্তিকর বিষয়গুলো ঘটে যায় তহলে বলার কিছু থাকবে না। বিটিআরসি’র ওপর প্রচ্ছন্ন ভাবে এমএনওরা ছড়ি ঘোরাচ্ছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। তাদের মতে, ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলে বর্তমান এবং সাবেক মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সদস্যরা থাকলেও বিভিন্ন লেয়ারে থাকা ইন্টারনেটে সেবার মূলধারার প্রতিনিধিদের সংখ্যা একে বারের নগন্য। ফলে যত আলোচনাই হোক না কেন ফল এখন তাদের ঝুঁড়িতে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এক্ষেত্রে একটি জাতীয় নীতিমালার মূলসুর  দেশী শিল্প সুরক্ষা ভূলুণ্ঠিত হলে বলার কিছু থাকবে না। 

এমন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, অবৈধ ভিওআইপি ও গো ব্রডব্যান্ড চালু করে জরিমানা গোনার পরও ফিক্সড ওয়্যারলেস ব্যান্ড উন্মুক্ত করার আগেই কিভাবে একটি এসএমপি মোবাইল অপারেটর ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বা ভয়েস ওভার ইন্টারনেট চালু করতে সক্ষম হলো? তাহলে নিয়মের বাইরে গিয়ে ফ্যাসিবাদি কায়দায় চালু করা সেবাটিকে স্বীকৃতি দিতেই কি বিটিআরসি কাজ করছে?    

বিষয়টি নিয়ে আইএসপিএবি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম ইকবাল বলেছেন-

 এখনো তো তারা ব্রডব্যান্ড ক্যাবল সংযোগ নিয়ে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। আইএসপি আবেদন করায় তারা নিজেদের ব্যবসা রেখে অন্যদের ব্যবসায় ভাগ বসাতে যাচ্ছে। কল ড্রপ, মিসড কল, শুভঙ্করের ফাঁকি ও সেবা মান ঠিক না করে, এখন তারা বাড়ি বাড়ি ইন্টারনেট দেয়ার নামে আইএসপি ব্যবসা করতে চাচ্ছে। এটা উচিত হবে না। তাদের ফাইবার ক্যাবল টানার অনুমতি দিলে আইএসপি ব্যবসা এমএনওদের মাধ্যমে রিপ্লেলস হয়ে যাবে। বাজারে অসম প্রতিযোগিতা ডেকে আনা হবে। দেশীয় উদ্যোক্তারা হুমকীর মুখে পড়বে। তারা তৃণমূল থেকেও হারিয়ে যাবে। এটা দেশের জন্য অশনি সঙ্কেত। এটা করা হলে বাজারে কেবল জায়েন্টরাই থাকবে। জনবহুল দেশে এই ধরনের বিজনেস মডেল ঠিক নয়। কেননা, এতে বিপুল সংখ্যক তরুণ বেকার হয়ে পড়বে। 

মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন,

 মোবাইল অপারেটরদের লাইসেন্স এবং এসএমপি নীতিমালা ভেঙ্গে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতিমন্ত্রী পলকের বন্ধু এবং মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের ভাতিজা পরিচয় ব্যবহার করে গ্রামীণফোন সিইও ইয়াসির আজমান বিটিআরসি থেকে ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস অনুমতি বাগিয়ে নিয়েছে। অথচ আগের আমলের অপরাধের বিচার না করেই বিটিআরসি এখন গত সরকারের সুবিধাভোগীদের রক্ষা করে চলেছে। মোবাইল নেটওয়ার্কের কোয়ালিটি, কমিশনে জমা পড়া অভিযোগের সমাধান না করে এমন অনুমতি দিয়ে বিটিআরসি নিজেই দোষ করেছে। অপরাধী প্রতিষ্ঠান নতুন করে আরো রেগুলেশন করছে। পক্ষপাত মূলক আচরণ করছে। আরো অপরাধ করা জন্য কাজ করছে। এ ধরনের আবেদন নেয়ার সুযোগ আছে কি না তা যাচাই না করেই এ কাজ করেছে।

পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ইন্টারক্লাউড লিমিটেড সিইও  প্রযুক্তিবিদ হাসিবুর রশিদ বললেন-

২০০৭ সালের আইএলডিটিএস নীতির মূল লক্ষ্য ছিল টেলিযোগাযোগ খাতে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা। স্থানীয় উদ্যোক্তারা আশা করেন যে, ভবিষ্যতে যে কোনো নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। গত ১৭ বছরে বিভিন্ন পর্যায়ের আইএসপি এবং অন্যান্য টেলিযোগাযোগ লাইসেন্স প্রদান করে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের গড়ে তোলা হয়েছে। উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে আইএসপি লাইসেন্স থাকায় এসব উদ্যোক্তা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছে। তারা স্থানীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছেন এবং যুবসমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছেন। এই বিনিয়োগের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের চাহিদা বাড়ায় আইএসপি সেবা এখন গ্রাম পর্যায়েও পৌঁছে গেছে।

বিভিন্ন স্তরের ছোট ও মাঝারি আইএসপিগুলো এই সেবা দিতে ইতোমধ্যেই নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে। এমতাবস্থায়, যদি বিদেশি মোবাইল অপারেটরদের আইএসপি লাইসেন্স প্রদান করা হয়, তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে। আইএসপিগুলো যে ধরনের সেবা প্রদান করে, তা যদি মোবাইল অপারেটরদের প্রয়োজন হয় (যেমন লাস্ট মাইল কানেকটিভিটি টু টাওয়ার বা ডাটা সংযোগ)।  তবে তারা চাইলে বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে আইএসপিগুলোর সঙ্গে পার্টনারশিপ করতে পারে। বাংলাদেশ অবশ্যই বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়। অবশ্য টেলিযোগাযোগ খাতের যেসব ক্ষেত্রে বড় পরিসরে বিনিয়োগ প্রয়োজন, সেসব ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানির অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ, যেমন মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও), টাওয়ার কোম্পানি, এনটিটিএন, ডাটা সেন্টার কোম্পানি ইত্যাদি। সুতরাং, বর্তমানে প্রচলিত আইএসপি লাইসেন্সের যোগ্যতাকে উপেক্ষা করে বাংলালিংক মোবাইল অপারেটরের আইএসপি লাইসেন্স আবেদনটি বিবেচনার কোন সুযোগ নেই।

সূত্রমতে, গত সরকারের আমলে আইএসপিএবি নির্বাচনের সময় ইন্টারনেট শাটডাউনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে আলোচিত এবং বর্তমানে কারা অন্তরীণ তৎকালীন আইসটি ও টেলিকম প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদে পলককে দিয়ে ইন্টারনেট সেবাকে করায়ত্ব করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই সময় ইন্টারনেট বন্ধে সরকারের সঙ্গে যারা অগ্রভাগে থেকে দোসরের ভূমিকা পালন করেছে তারা ইন্টারনেটের ওপর একক আধিপত্য রচনায় এই খাতটির প্যারালাল ভূমিকা বিচ্ছিন্ন করতে কাজ করছে। এক্ষেত্রে আইএসপিএবি নেতাদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকাকেও সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।  পর্যবেক্ষকদের মতে, আইএসপিএবি’র ব্যর্থতার কারণে আজ বিষয়টি অস্তিত্বের সংকটের পর্যায়ে পৌঁঁছেছে। নেতাদের ভাতঘুমের কারণে এতো দিনেও ফ্রাঞ্চাইজি মডেল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। তারা জানান, বিটিআরসি এসব বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কনসালটেশন করছে। কিন্তু এতো দিনেও আইএসপিএবি’র পক্ষ বিটিআরসি’র কাছে একটি প্রাঞ্জল ও যৌক্তিক কোনো প্রস্তাবনা দেয়া হয়নি। এটা করা হলে আজকের পরিস্থিতিতে পরতো না।   

অনুসন্ধানে প্রকাশ, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করলেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু ছিলো। পরে এই খাতের নেতারা সরকারের সঙ্গে একই তালে চলার ফলে বাসা-বাড়ির ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেশে ইন্টারনেট ব্লাক-আউট করা হয়। তখন ডেটা সেন্টার পোড়ানোর গল্প ধোপে না টেকায় সঞ্চালন লাইনের ক্যাবল কাটার সাজানো নাটক উপস্থাপন করা হলেও তৎকালীন আইএসপি নেতারা ছিলেন নিশ্চুপ। তবে নাগরিক সেবা বিবেচনায় তখন ঢাকার মধ্যে বিশেষ কিছু স্থানে বিশেষ করে যাত্রাবাড়ি, রামপুরা, উত্তরার বিশেষ কিছু স্থানে শাট-ডাউন সময়ে সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া গেছে। এতে প্রশ্নের মুখে পড়ে মোবাইল অপারেটররা। এরপরই তারা ইন্টারনেটের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে ফিক্সড ব্রডব্যান্ডে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে ওঠে। গত ২৯ জানুয়ারি আইএসপি লাইসেন্সের জন্য বিটিআরসি’র কাছে লাইসেন্সিং গাইড লাইন সংশোধন করার আবেদন করে মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক। এরপর টেলিযোগাযোগ খাতের নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং কাঠামো সংস্কারের জন্য বহুপক্ষীয় সভা করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর নামে দেশের ইন্টারনেট বাজারের দেশীয় উদ্যোক্তা সুরক্ষা এবং প্রতিযোগিতা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সব ব্যবসাই নিজেদের কব্জায় আনতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে তোরজোর শুরু হয়। আইএসপিদের দীর্ঘ দিনের অ্যাক্টিভ শেয়ারিং দাবি উপেক্ষিত থাকলেও লাস্টমাইল কানেক্টিভিটিতে মোবাইল অপারেটরদের নিজস্ব ফাইভার স্থাপন নতুন প্রযুক্তি ও প্ল্যাটফর্মের জন্য নমনীয় রেগুলেশন করতে দূতিয়ালী দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এতে ফুঁসে ওঠেন সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা। নেটওয়ার্ক সংশোধনের নামে দেশীয় উদ্যোক্তাদের অস্তিত্ব বিলীন করার কূটকৌশল বাস্তবায়নের আগাম আভাস পেয়ে ১ মার্চ থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত আইএসপিএবি’র বনানী অফিসে জরুরী বৈঠক করেছেন সারা দেশের বিভিন্ন লেয়ারের সহস্রাধিক ইন্টারনেট ব্যবসায়ী। ৪ মার্চ এ নিয়ে বিটিআরসি-তে বৈঠকও করেছেন। ৫ মার্চ কমিশনে একটি প্রস্তাবনাও পেশ করতে পারেন ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা। 

এ বিষয়ে বাংলাফোন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসেন খান বলেন-

ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল দুটো আলাদা স্পেস। MNO আর ISP ব‍্যবসার নির্দিষ্ট সীমনা আছে এবং APNIC সেটা ঠিক করে দিয়েছে। তাই সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে উভয়কেই নিজ নিজ জায়গায় থাকা উচিত। একজন আরেকজনের জায়গায় যাওয়া উচিত নয়। BTRC কে সেটা পালন করার জন‍্য উদবোধ‍্য করতে হবে, সাহায‍্য করতে হবে। BTRC থেকে লাইসেন্স নিয়ে ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দিতে বিনিয়োগ করেছে। তারা বিদেশ থেকে টাকা এনে করেনি, নিজের সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগ করেছে। কেউ জায়গা বিক্রি করে, কেউবা গরু বিক্রি করে, কেউ ধান বিক্রি করে এই ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে। প্রায় ২ লক্ষ পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। এটা সরকারকে এবং নীতি নির্ধারকদের বলতে হবে, বুঝাতে হবে। এই বলাটা হয়নি, বোঝানো হয় নি। ISPAB এই কাজটা আরো ভালভাবে করতে পারত। তাই বলছি, প্রান্তিক পর্যায়ে আইএসপি ব্যবসায়ীরা যাতে ব‍্যবসা করতে পারে সে সুযোগ থেকে যেন তারা বঞ্চিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ISPAB কে সে দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।


একইভাবে আইআইজিএবি’র সহ-সভাপতি এবং আইএসপিএবি’র সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক বলেছেন,

ইন্টারনেট দেশীয় উদ্যোক্তাদের একটি সামাজিক ব্যবসা। কিন্তু এই খাতে দীর্ঘ দিন ধরে রেভিনিউ শেয়ারঅতিরিক্ত এসওএফ’ আরোপ এবং দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্স আপগ্রেডেশন বন্ধ রাখা এবং সবশেষ এখন এই ব্যবসায়টি বিদেশী উদ্যোক্তাদের হাতে তুলে দিয়ে দেশী শিল্প বিকাশের পথে শেষ পেরেক ঠোকার বন্দবোস্ত চলছে। এক বা একাধিক কোম্পানিকে সুযোগ করে দিয়ে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার উদ্যোক্তাকে পথে বসানোর অপচেষ্টা চলছে। বেআইনিভাবে আগে একটি মোবইল কোম্পানিকে ওয়ারলেস ব্রডব্যান্ড সেবার নামে ঘরে ঘরে উচ্চমূল্যে ডেটা ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা দিয়ে প্রান্তিক মানুষকে শুভঙ্করের ফাঁকির সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এখন আবার আরো একটি কোম্পানি আবদার তুলেছে। এটা কিছুতেই হতে দেয়া হবে না। আমরা আইএসপি অপারেটররা তা মেনে নেব না। আমরা চাইব না এই লেয়ারে তারা ব্যবসা করুক। তারা তাদের ঘরের সমস্যা আগে সমাধান করুক। ডেটা প্যাকের নামে গ্রাহক অসন্তোষের সমাধান করুক

তারা একাই যদি সবার ব্যবসা করতে চায় তাহলে তো ব্যবসায় অবশিষ্ট বলতে কিছু থাকবে না। দেশীয় উদ্যোক্তারা পথে বসবে। অপরদিকে বাংলাদেশ বিপুল অংকের ডলার হারাবে।তাই এসব বাদ দিয়ে বিদ্যমান আইনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে বরং বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে আইএসপিরা যেমনটা এমভিএনও হয়ে মোবাইল সার্ভিস দেয় সেটা করা উচিতআমাদের ভুলে গেলে চলবে না, দেশে তিন হাজার আইএসপি লাইসেন্স আছে। এই ব্যবসার মাধ্যমে ১০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। আমরা আইএসপিকে সোস্যাল ব্যবসার পর্যায়ে নিয়ে গেছি। এতো স্বল্পমূল্যে মাত্র ৫০০ টাকায় আমরা আনলিমিটেড ও গুড কোয়ালিটির ইন্টারনেট সেবা বিশ্বের আর কোথাও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হয় না। অথচ মোবাইল ইন্টারনেটে অভিযোগের অন্ত নেই।

লাইসেন্স আবেদন পরবর্তী সমালোচনা নিয়ে বাংলালিংক এর চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার তাইমুর রহমান মনে করেন-

বর্তমান টেলিকম ইকোসিস্টেমটি দক্ষ নয় কারণ মোবাইল অপারেটররা বাংলাদেশের জনগণের জন্য উন্নত পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করতে পারছে না। সেই কারণেই একটি কমপ্লায়েন্স কোম্পানি হিসেবে, আমরা বিটিআরসিকে অনুরোধ করেছি, আমরা ফিক্সড আইএসপি পরিষেবা প্রদান করতে পারি কিনা। একটি ছোট অপারেটর হিসেবে বাজারে প্রতিযোগিতা টিকে থাকার জন্য আমাদের বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করা আরও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করি, যে অংশীদারিত্বের মডেলের মাধ্যমেও এই পরিষেবাগুলি প্রদান করা যেতে পারে। এজন্য আমরা আইএসপি, এমএফএস লাইসেন্স চেয়েছি। 

এই খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ইন্টারনেট নির্ভর সেবাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিতেই এই আবেদন। ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস উন্মুক্ত করে দেয়ার পর আমরা এটা করিনি। আইন মেনে লাইসেন্সিং অধিকার পেতে আবেদন করেছি মাত্র। এ জন্য বিভিন্ন মডেল নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

প্রতিযোগিতা কমিশন এর সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের বললেন,

সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবে ইন্টারনেটকে মানবাধিকার করা হয়েছে। আবার ফ্রান্সের আদালত এটাকে মৌলিক মানবাধিকার বলে রায় দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই সেবাটি যেন মনোপলি ও অলিগোপলি বাজারে পরিণত না হয় সে বিষয়টিতে দৃষ্টি দিতে হবে। দেশে টেলিটক ক্ষতিতে থাকলেও বাংলালিংক লাভ-লসের মাঝখানে এবং বাকি দুইটি অপারেটর লাভ করছে। টেলিকম ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে নলেজ না থাকায় বাজার ভারসাম্য হারাচ্ছে। ‘ভ্যালু ফর মানি’ নলেজ ঘাটতিতে গ্রাহকের ঠকার সম্ভবনা তৈরি হচ্ছে। ওটিটি’র মতো নতুন নতুন সেবার ব্যবসা করলেও সরকার এ থেকে রাজস্ব পাচ্ছে না। তারা ডেটার ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। 

বিদেশী বিনিয়োগ থাকায় লাভের টাকা ডলারে দেশের বাইরে যাচ্ছে। অপরদিকে দেশজুড়ে  আনলিমিটেড ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে সাড়ে তিন হাজার আইএসপি। এরা দেশীয় উদ্যোক্তা। ফলে তাদের টাকা দেশেই থাকছে। একইসঙ্গে এই খাতের বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তবে নতুন প্রযুক্তির বিকাশে এই খাতে বিপুল বিনিয়োগ দরকার। তাই কারিগরি এবং বাজার ভারসাম্য ‍দুই দিকে খেয়াল করে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। 

সব মিলিয়ে খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, একটি কোম্পানিকে সব ধরনের টেলিকম সেবার অধিকার দিলে একচেটিয়া বাজার প্রতিষ্ঠা হতে পরে। এএসএমপি’রা দৈত্য হয়ে উঠবে ও বাজার প্রতিযোগিতা হারাবে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে হারিয়ে যাবে। এতে সেবার মান আরো উন্নত কার এবং খরচও কমানো এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা আদতে ভেস্তে যাবে। তাই বিদ্যমান লাইসেন্সিং কাঠামোতে আইএসপিদের মোবাইল ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমভিএনও) হিসেবে এমএনওদের ঈপ্সিত যৌথ অংশীদারিত্বে সেবা দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা। এ ধরণের অংশীদারিত্ব ভিত্তিক ব্যবসায় মডেলে আইএসপিরা মোবাইল স্পেক্ট্রাম লাইসেন্স ছাড়া একদিকে যেমন প্রান্তিক পর্যায়ে মোবাইল সেবা পৌঁছে দেবে অপরদিকে মোবাইল অপারেটররা আইএসপিদের নেটওয়ার্ক অবকাঠামো ব্যবহার করে তাদের সেবাগুলোর বাজার বিস্তার করতে পারবে।