নগরে নতুন অতিথি ‘রোবট ডিসপ্লে সেন্টার’

৭ জুলাই, ২০২৫  
৭ জুলাই, ২০২৫  
নগরে নতুন অতিথি ‘রোবট ডিসপ্লে সেন্টার’

রাজধানীর সোবহানবাগে গড়ে উঠেছে একটি রোবট ডিসপ্লে সেন্টার। ড্যাফোডিল প্লাজায় ২,০০০ বর্গফুটের এই রোবট হাবটি চালু হয় গত জুনের মাঝামাঝি সময়ে। ব্যস্ত রাস্তার পাশে ভবিষ্যতের এই ল্যাবে প্রদর্শিত হচ্ছে চার ক্যাটাগরির আট সুবিধার ২৫ রকমের রোবট। এর কোনোটি শিক্ষামূলক রোবট। কোনটি আবার ব্যবহৃত হয় পরিস্কার পরিচ্ছনতার মতো গৃহস্থলীর কাছে। কয়েকটি আছে পণ্য ডেলিভারির মতো বাণিজ্যিক কাজের। কিছু রয়েছে ভারী শিল্পের কাজে সহায়ত পিক এন্ড প্লেসমেন্ট ররোবট।

দেশে প্রথমবারের মতো বিশেষ রোবট ডিসপ্লে সেন্টার চালু করেছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ও ড্যাফোডিল কম্পিউটারস পিএলসি। বাণিজ্যিক দৃষ্টি কোন থেকে এটিকে নিছক বিক্রয় কেন্দ্র মনে হলেও এই শপটির রয়েছে তিনটি বৈশিষ্ট্য। নতুন প্রজন্মকে রোবটিকসের চালকের আসনে নিয়ে আসা, আগামীর স্মার্ট সল্যুশন প্রদান এবং টেকসই উদ্ভাবনের প্রত্যয় নিয়ে তাই কেবল প্রদর্শনী বা বিপনন নয় ড্যাফোডিল রোবটিক্স নামের গবেষণা ল্যাবও শুরু করেছে উদ্যোক্তারা।

 

প্রদর্শনীকেন্দ্র বলা হলেও এখান থেকে রোবট বিক্রিও করা হচ্ছে বলে জানালেন ড্যাফোডিল রোবটিকস অ্যান্ড এআই সেন্টারের সহকারী ব্যবস্থাপক মোঃ রোকন উজ্জামান। জানালেন, প্রদর্শনীর প্রথমভাগেই দুইটি শিক্ষামূলক রোবট বিক্রি হয়েছে। এটি কিনেছে একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। আমাদের ইউগট এর একটা রোবটিক কিটস বক্স আছে। সেটিতে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।

আলাপকালে জানাগেলো, শিক্ষামূলক তিন ধরনের রোবট সহ ১২ রকমের ইউগট রোবট থাকলেও বর্তমানে ডিসপ্লে সেন্টারে বাংলাদেশে বানানো কোনো রোবট নেই। তবে দেশীয় প্রযুক্তির রোবট প্রদর্শনীতে রাখতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী ড্যাফোডিল। সে কারণেই হয়তো রোবটের পাশাপাশি এআই রোবোটিকস কিটও পাওয়া যায় রোবট ডিসপ্লে সেন্টারটিতে। এসব শিক্ষামূলক রোবোটিকস কিট ব্যবহার করে হাতে–কলমে রোবট তৈরি করা যায়। এই কিট ব্যবহার করে প্রোগ্রামিং, এআইয়ের বিভিন্ন ধারণা ও সমস্যা সমাধানে দক্ষতা গঠনে সহায়তা করতে পারে।

সরেজমিন রোবট ডিসপ্লে সেন্টারে প্রবেশ করতেই দেখা মিলবে মানব ও প্রাণীর আকৃতির বিভিন্ন রোবট। ২০ থেকে ২৫ ইঞ্চি লম্বা রোবটগুলো মনে করিয়ে দেয় ‘ট্রান্সফরমার’ সিনেমার কথা। দেখা যাবে দুটি রোবট এদিক–সেদিকে ঘুর ঘুর করছে। ৪০ কেজি ধারণক্ষমতার এ রোবটে ২১ ইঞ্চির এইচডি বিজ্ঞাপন ডিসপ্লে রয়েছে। এগুলো না কি ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশনের কাজে। এদেরই একটি ক্যাডেবট এল ১০০। এই রোবটটিতে আছে ৪টি ট্রে। প্রতিটি ট্রে ১০ কেজি পর্যন্ত ভার বহন করতে সক্ষম। মোট ধারণক্ষমতা ৪০ কেজি।

এছাড়াও স্বয়ংক্রিয় ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের কাজ করতে সক্ষম এয়ার রোবো টি২০, পি২০ ও পিসি ১০ মডেলের মতো রোবট রয়েছে এই ডিসপ্লে সেন্টারটিতে। শিপবিল্ডিং, পেইন্টিং, মেশিন পার্টস হ্যান্ডেলিং, লেজার ওয়েল্ডিং, স্ট্রাকচার ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রনিক্স শিল্প, ফুড প্রসেসিং লাইন, অটোমোবাইল শিল্প, ওষুধ উৎপাদন, ই-কমার্স ও লজিস্টিকসের মতো ভারী ও ঝুঁকি পূর্ণ কাজের জন্য এই রোবট হাবটিতে রয়েছে পিক অ্যান্ড প্লেস রোবট। তিন বাহুর এই হান্স রোবটগুলো ১৫ কোজির মতো ভার সহ্য করতে পারে।

একটু সামনে বাড়ালে চোখ আটকে যেতে পারে চার পায়ের সারমেয় রোবটের দিকে। সাথে দেখা যাবে রোবট গাড়ি। এগুলো আসলে রূপান্তরিত রোবট। ইউবিটেক এর সঙ্গে মিতালি করে এই শিক্ষামূলক রোবট বানাতে রয়েছে ইউগট লেগোর এক বাক্স রোবট সরঞ্জাম। এগুলোর মাধ্যমে ৭ ধরনের ইউনিক রোবট বানানো যায়। কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক রোবট নির্মাণের জন্য এটি এক অনন্য সংযোজন। ডিসপ্লে সেন্টারটির সব কিছুই এসেছে বর্তমানে বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র ও টেকনোলজিতে সারাবিশ্ব খ্যাত চায়না থেকে। সেখানে তৈরি Industrial Pick and Place Robot, Industrial Welding Robot, AI enabled cleaning robot, AI featured Delivery robot, Educational Robotic Kits & AI Robot গুলো দেশের প্রয়োজনেই আনা হয়েছে বলে জানলেন ড্যাফোডিল কম্পিউটারস পিএলসির মহাব্যবস্থাপক জাফর আহমেদ পাটোয়ারী। বললেন, প্রতিদিন আশাতীত বিপুল দর্শনার্থী, বিশেষ করে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি এই সেন্টারে বেশ সময় কাটাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। সম্ভাব্য ক্রেতাদেরও আনাগোনা বাড়ছে।


তার মতে, ‘দেশে রোবোটিকসের চর্চা এখন আর বিলাসিতা নয়। উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, খরচ কমানো আর মানুষের পরিশ্রম হ্রাসের কার্যকর মাধ্যম হতে পারে রোবটের কার্যকর ব্যবহার। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনে রোবটের উপস্থিতি বাড়াতে আমরা এই ডিসপ্লে সেন্টার তৈরি করেছি। এখানে বিভিন্ন কাজের ধরন অনুসারে বিভিন্ন রোবট রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নত রোবটপ্রযুক্তি আমরা এখানে প্রদর্শন করছি। এসব রোবট বিদেশে তৈরি হলেও এদের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশের প্রকৌশলীরাই কাজ করছেন। আমরা ধীরে ধীরে দেশের রোবট বাজার বিকাশের জন্য সেন্টারটি তৈরি করেছি।’

রোবট সেন্টারে প্রদর্শিত ডেলিভারি রোবটগুলোর দাম ৬ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকার মধ্যে। ইউভি লেজার ও কার্বন ডাই–অক্সাইড লেজার, ফাইবার লেজার রোবটের মাধ্যমে সহজেই পণ্য বা যন্ত্রাংশে লেজার দিয়ে লোগো, বারকোড, সিরিয়াল নম্বর যুক্ত করতে সক্ষম শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত রোবটগুলোর দাম ১০ লাখ থেকে ১৮ লাখ টাকার মধ্যে। আর প্রোগ্রামিং, এআইয়ের বিভিন্ন ধারণা ও সমস্যা সমাধানে দক্ষতা অর্জনে ব্যবহৃত শিক্ষামূলক রোবটিক কিটস এর মূল্য পড়বে ৩৫ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা। তবে ভবিষ্যতকে হাতের মুঠোয়ে আনতে এসব রোবট কিনতে কিস্তি সুবিধার পাশাপাশি ক্ষেত্র বিশেষ ছাড়ও দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ও ড্যাফোডিল কম্পিউটারস পিএলসি

০৭-জুলাই/ডিজিবিটেক/ইএম