ডিএনএ পরীক্ষায় ৭ মরদেহ থেকে একজনের পরিচয় সনাক্ত, বাকিদের সনাক্তে নিখোঁজ পরিবারের প্রতি আহ্বান

ডিএনএ পরীক্ষার (প্রোফাইলিং) মাধ্যমে সাতটি মরদেহের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতের নাম মো. হাসান (১৯)। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত হয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ে মরদেহগুলী ছয় মাস ধরে ঢাকা মেডেকেল হাসপাতালের মরদেহে পড়ে রয়েছে।
এর মধ্যে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হাসানের জানাজা হয়েছে । পরে জুলাই অভ্যুত্থানে হাজারো ছাত্র-জনতার মৃত্যুর জন্য দায়ী, গণহত্যার মূলহোতা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে কফিন মিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সাত মাস নিখোঁজ থাকার পর ছেলের লাশ বুঝে নিতে এসেছিলেন হাসানের বাবা মনির হোসেন ও মা গোলেনুর বেগম। সেখানে হাসানের বাবা-মা ও স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছিলো। ছেলের নামাজে জানাজা শেষে ছেলে হত্যার বিচারের দাবি জানান বাবা মনির হোসেন। আর সন্তান হারানোর শেকে আহাজারি করছিলেন হাসানের মা গোলেনুর বেগম। ছেলের সঙ্গে নানা স্মৃতি তুলে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। অশ্রু শিক্ত কন্ঠে তিনি বলেন, কোন পাষন্ড আমার ছেলেকে এভাবে হত্যা করলো। তার কি একটা বারও বুক কেপে ওঠেনি। আমার ছেলের অপরাধ থাকলে আমাদের জানাই তো কিন্তু এভাবে হত্যা কোনো করলো।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের দুইটা নাম রেখেছিলাম হাসান আর ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ। আমার ছেলেকে ছাড়া কীভাবে বাঁচবো। যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে আল্লাহ তাদের বিচার করবে।
হাসানের বাবাব বলেন, আমার ছেলে গত ৫ই আগস্ট যাত্রাবাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছে। নিখোঁজের খবর পেয়ে ঢাকায় আসি। এরপর ঢাকা মেডিকেল, মিডফোর্ট, সোহরাওয়ার্দী, আন্জুমান মফিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন স্থানে ৫ মাস ধরে আমার ছেলের সন্ধান করে আসছিলাম। কিন্তু কোথাও আমার ছেলেকে পাচ্ছিলাম না।
শুরুতে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার অবস্থা ছিলো না। পুলিশ জিডি নিচ্ছিলো না। পরবর্তীতে ১৯ দিনের মাথায় জিডি করি। আমার ছেলের কাছে দুইটি মোবাইল ফোন ছিলো সেগুলো কারা যেন নিয়ে গেছে।
অপরদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জানাজা শেষে একটি মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ভিসি চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এসময় তারা ‘ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ’; ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; আমার ভাই কফিনে, খুনি কেন বাহিরে’; ‘ছাত্র-জনতার অ্যাকশন, ডাইরেক অ্যাকশন’; ‘হৈ হৈ রৈ রৈ, খুনি হাসিনা গেলি কই’; ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’; ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এছাড়াও বাকি ছয় শহীদের লাশ সনাক্তে যেসব পরিবারের কেউ না কেউ ওইসময়ে নিখোঁজ হয়েছে তাদের মেডিকেল ফরেনসিকে উপস্থিত হয়ে লাশ সনাক্তের জন্য আহ্বান জানানো হয়।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত হাসান চার ভাই বোনের ভেতরে দ্বিতীয়। যাত্রাবাড়িতে বড় বোনের বাসায় থাকত। কাপ্তান বাজারে বোন জামাইয়ের ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকানে কাজ করত। তার গ্রামের বাড়ি ভোলার সদর কাছিয়া এলাকায়। সেখানে হাসানের দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের কথা রয়েছে।