নতুন শিক্ষাক্রমে স্টেম শিক্ষায় অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করা হবে

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  
নতুন শিক্ষাক্রমে স্টেম শিক্ষায় অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করা হবে

আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের শিক্ষার্থীদের রোবটিক্স, প্রোগ্রামিং-এর মতো বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সরকারি বেসরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন। দেশের উপকূলের মেয়েদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে পরিচালিত স্টেম এন্ড আইসিটি স্কিলস ফর দ্যা গার্লস অফ কোস্টাল এরিয়া প্রকল্পের ফলাফল পর্যালোচনা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন আলোচক ও অতিথি বৃন্দ। ১৩ সেপ্টেম্বর, শনিবার ঢাকার একটি হোটেলে এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক। প্রকল্পটির পৃস্ঠপোষক মালালা ফান্ড।

 সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল উপকূলীয় অঞ্চলে মেয়েদের STEM শিক্ষায় অংশগ্রহণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রভাব তুলে ধরা এবং ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের টেকসই উন্নয়নের পরিকল্পনার উপর আলোকপাত করা। আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার

প্রকল্পের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে আয়োজন শুরু হয়। প্রকল্পটি গত তিন বছরে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার তিনটি উপজেলার ছয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে প্রযুক্তি ভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। মূলত ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণীর মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কাস্টমাইজড STEM কারিকুলাম ও পোর্ট্যাবল STEM ল্যাবের মাধ্যমে ১টিরও বেশি বিদ্যালয় প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে। বহনযোগ্য ল্যাবের কারণে আলাদা ল্যাব স্থাপন বা রক্ষণাবেক্ষণের বাড়তি খরচ ছাড়াই আশপাশের বিদ্যালয়গুলোও এই সুযোগ পাচ্ছে

প্রকল্পের মাধ্যমে ১২০০ এর বেশি শিক্ষার্থী সরাসরি STEM কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে। ২০০ এরও বেশি শিক্ষক STEM প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে শ্রেণীকক্ষে তা প্রয়োগ করছেন। পাশাপাশি ৫০০ এরও বেশি অভিভাবক ও কমিউনিটি গেটকিপার প্রযুক্তি শিক্ষায় মেয়েদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে উৎসাহিত হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ গণ্ডির বাইরে গিয়ে জাতীয় পর্যায়ের অলিম্পিয়াডগুলোতে অংশগ্রহণ করেছে, প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মক্ষেত্র ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছে এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় নিজেদের সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (KUET) এর শিক্ষার্থীরা প্রকল্পের উপর তাদের পরিচালিত একটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে জানান, STEM বিষয়ে মেয়েদের অংশগ্রহণ ও শিক্ষকদের আত্মবিশ্বাস উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। প্রোগ্রামিং ও রোবোটিক্সে দক্ষতা প্রায় শূন্য থেকে বেড়ে ৬৪ শতাংশে পৌঁছেছে, এবং ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী উচ্চমানের দক্ষতা অর্জন করেছে। অভিভাবকদের সমর্থন বেড়েছে ২১ শতাংশ, আর লিঙ্গভিত্তিক সচেতনতা বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ

প্রকল্পের সাথে যুক্ত ঝনঝনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিষ্ণুপদ বিশ্বাস জানান, “রামপালের দুইটা স্কুল এই প্রকল্পের অংশ হবার সুযোগ পেয়েছে, যেটা আমার প্রতিষ্ঠান পায়নি। কিন্তু এমন লম্বা সময় ধরে এই সুযোগগুলো প্রতিটা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য সময়োপোযোগী এবং অপরিহার্য বলে আমি মনে করি।নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তন্বী জানায়, “আমি ভাবতাম বিজ্ঞান ও প্রোগ্রামিং শুধু শহরের ছেলে-মেয়ের বিষয়। আমাদের জন্য অনেক কঠিন। কিন্তু এখন আমি নিজেই স্ক্র্যাচ থেকে কোডিং শিখছি”। তালা থেকে আগত অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান বলেলো, “এই প্রকল্প থেকে আমি যা শিখেছি তা আমার ছোটদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই”। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “শিক্ষার্থীদের প্রাঞ্জল উপস্থাপনা দেখে আমি অভিভূত। যদিও আমাদের হাতে সময় কম, তবুও ২০২৭ সাল থেকে হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাক্রমে স্টেম তথা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত শিক্ষার ওপর অধিকতর মনোযোগ দেওয়া হবেজিন বিজ্ঞানী ড.আবেদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রকৃতির বিজ্ঞানের কথা ভুললে চলবেনা। শহর এলাকার বাইরে অধিকাংশ প্রান্তিক এলাকা প্রযুক্তি শিক্ষায় পিছিয়ে আছে। তাদের কথা চিন্তা করে এইসকল কার্যক্রম এখন আরো বাড়াতে হবে’। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহমেদ বলেন, “গ্রামীণ ও হাওড় অঞ্চলে এই ধরনের উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জন্যেও পরিচালনা করা জরুরি।

আলোচক হিসেবে মালালা ফান্ডের সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর মোশাররফ তানসেন বলেন, “মেয়েদের STEM শিক্ষায় অগ্রগতি আনতে হলে নীতিমালায় কৌশলগত সহযোগিতা এবং সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় প্রয়োজন।” খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হেলাল আন-নাহিয়ান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা যা শেখে, এই প্রকল্পের স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এখন থেকেই সেগুলোর হাতেখড়ি নিচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রকল্পের অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মেন্টর, অভিভাবক এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, এই উদ্যোগে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক