শেয়ারপ্রতি ১১ টাকা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দেবে গ্রামীণফোন

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে শেয়ারহোল্ডারদের ১১০ শতাংশ অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোনের (জিপি) পরিচালনা পর্ষদ। অর্থাৎ কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগকারীর শেয়ারপ্রতি ১১ টাকা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ পাবেন।
অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণার পাশাপাশি কোম্পানিটি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। তবে ছয় মাসের হিসেবে মুনাফা কমেছে।
গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ পাওয়ার যোগ্য বিনিয়োগকারী নির্বাচনে রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ আগস্ট। ডিএসই জানিয়েছে, লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে কোনো সার্কিট ব্রেকার থাকবে না। অর্থাৎ শেয়ার দাম যতখুশি বাড়তে বা কমতে পারবে।
এদিকে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৬ টাকা ৫১ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬ টাকা ৩৮ পয়সা। এ হিসাবে গত বছরের তুলনায় শেয়ার প্রতি মুনাফা বেড়েছে ১৩ পয়সা।
আর জানুয়ারি-জুলাই সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ১১ টাকা ২১ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ১৬ টাকা ২৯ পয়সা। সে হিসাবে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে মুনাফা কমেছে ৫ টাকা ৮ পয়সা।
ছয় মাসের হিসাবে মুনাফা কমার পাশাপাশি কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্যও কমেছে। চলতি বছরের জুন শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ৪২ টাকা ১৫ পয়সা, যা গত বছরের জুন শেষে ছিল ৫৩ টাকা ১৮ পয়সা।
২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক: চ্যালেঞ্জিং পরিবেশের মধ্যেও গ্রামীণফোনের স্থিতিশীল পারফরম্যান্স
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মোট ৪ হাজার ১০৩ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে গ্রামীণফোন লিমিটেড যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৮ শতাংশ কম; দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের প্রভাব পড়েছে প্রতিষ্ঠানের আয়ে। দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৬৩ লাখে। এর মধ্যে ৫৮ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৫ কোটি ৩ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) ইয়াসির আজমান বলেন, “গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে অর্থনৈতিক খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি আমরা। টেলিকমসহ ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে। কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও কৌশলগত বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে এ ফলাফল অর্জন করেছি আমরা। গত প্রান্তিকের তুলনায় রাজস্ব বৃদ্ধি পাওয়া এবং সুশৃঙ্খল ব্যয় ব্যবস্থাপনার কল্যাণে গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় মোট কর পরবর্তী মুনাফা ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শেয়ারহোল্ডারদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সুফল নিশ্চিত করতে আমরা সংকল্পবদ্ধ। আমরা ধারাবাহিকভাবে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য লভ্যাংশ প্রদান করতে চাই। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধের জন্য আমরা শেয়ার প্রতি ১১ টাকা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণা করছি।
তিনি বলেন, “এ বছর প্রথমবারের মতো হজ্বযাত্রীরা স্থানীয় মুদ্রার (টাকা) মোবাইল ব্যালেন্স দিয়ে আন্তর্জাতিক রোমিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন। টেলিকম খাত ও সরকারের যৌথ সহযোগিতার এটি এক মাইলফলক অর্জন। আমাদের রূপান্তরের যাত্রায় অন্যতম একটি সূচক হচ্ছে ডিজিটাল প্রবৃদ্ধি। এদিক থেকে টেলিকম খাতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে একটি মানদণ্ড তৈরি করেছে মাইজিপি; এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম স্থানীয় সেলফ সার্ভিস অ্যাপে পরিণত হয়েছে। প্রতি মাসে এই অ্যাপ ব্যবহার করেন ২ কোটি ২৫ লাখ গ্রাহক। আমরা এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি যেখানে সব কিছু হবে এআই ভিত্তিক। এর বিকল্প নেই, এটি অবধারিত। এ প্রেক্ষাপটে কোম্পানির সক্ষমতা বাড়াতে, প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং গ্রাহকদের আরো মানসম্মত সেবা প্রদান করতে আমাদের কর্মী ও লিডারশিপ টিমকে আরো দক্ষ করে গড়ে তুলছি, কার্যক্রমের ধরণ নিয়ে নতুন করে ভাবছি এবং এআই-চালিত মডেল তৈরি করছি আমরা।”
গ্রামীণফোনের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) অটো মাগনে রিসব্যাক বলেন, “অর্থনীতি কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে; কমতে শুরু করেছে মূল্যস্ফীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারও স্থিতিশীল হচ্ছে। অন্যদিকে বৈশ্বিক বাণিজ্যের অস্থিরতা আমাদের জন্য বাড়তি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে; কারণ বাংলাদেশের শক্তিশালী বস্ত্র খাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজার গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিক অর্থনীতির এমন পরিস্থিতিতে মার্জিন নিশ্চিত করতে আমরা সুশৃঙ্খল ব্যয় ও মূলধন ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিয়েছি যাতে শীর্ষ অবস্থান অব্যাহত থাকে। বিক্রিত পণ্য ও সেবার ব্যয় (সিওজিএস) এবং পরিচালন ব্যয় উভয়ই কমায় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমাদের সামগ্রিক ব্যয় ২ শতাংশ কমেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমাদের মোট রাজস্ব আয় কমেছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে মূলত ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি এবং ঈদ ঘিরে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় গত প্রান্তিকের তুলনায় এ প্রান্তিকে রাজস্ব ৭ শতাংশ বেড়েছে। পরপর দুই প্রান্তিকে ইবিআইটিডিএ বৃদ্ধি পেয়েছে, এই প্রান্তিকে যার পরিমাণ ২ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা; পূর্ববর্তী প্রান্তিকের তুলনায় এটি ১১ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। আমি এটা দেখে সন্তুষ্ট যে, ভাল টপ লাইন ডেভেলপমেন্ট এবং সুশৃঙ্খল ব্যয়ের কল্যাণে গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় মোট কর পরবর্তী মুনাফা ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি অব্যহত থাকলে ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে আগের বছরের তুলনায় ভালো একটি প্রবৃদ্ধি দেখতে পাব বলে আমি আশাবাদী।”