বিটিআরসিতে চলছে দুই দিনব্যাপী ‘আর্লি ওয়ার্নিং ফর অল’ কর্মশালা

১৮ জুন, ২০২৫  
১৮ জুন, ২০২৫  
বিটিআরসিতে চলছে দুই দিনব্যাপী  ‘আর্লি ওয়ার্নিং ফর অল’ কর্মশালা

প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগেই জিও লোকেশন ভিত্তিক আগাম সতর্ক বার্তা প্রদান (সেল ব্রডকাস্ট আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম) এবং আপদকালীন সময়ের জন্য জাতীয় জরুরী টেলিযোগাযোগ পরিকল্পনা (এনইটিপি) প্রণয়ন এবং ঝুঁকি কমাতে রাজধানী ঢাকায় শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী কর্মশালা। ১৮ জুন, বুধবার রাজধানীর প্রশাসনিক এলাকা আগারগাঁওয়ের বিটিআরসি ভবনের বসেছে ‘আর্লি ওয়ার্নিং ফর অল’ শীর্ষক এই বহুপক্ষীয় কর্মশালা। 

কর্মশালায় আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, রেডক্রস, ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক, মোবাইল অপারেটরস, টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্ট লাইসেন্সিসমূহ, তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, একাডেমিয়া, দেশি-বিদেশি সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিটিআরসি ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

সকালে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ এমদাদ উল বারী (অবঃ) এর সভাপতিত্বে কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন আইটিইউ এর কানেক্ট টু রিকোভার এর প্রজেক্ট অফিসার ( Karen Woo) কারেন ‍উ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান,  সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগাম এর পরিচালক আহমেদুল হক এবং বিটিআরসি’র ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইকবাল আহমেদ। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এমটব) মহাসচিব  লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম সহ টেলিকম শিল্পের নেতারা। অনুষ্ঠানে আইএসপিএবি সভাপতির সঙ্গে সংগঠনটির কার্য নির্বাহী কমিটির পরিচালক রাশেদুর রহমান রাজন, মো. মিঠু হাওলাদার ও সাব্বির আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। 

দুর্যোগকালীন টেলিযোগাযোগ সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কৌশল প্রণয়নের অংশ হিসেবে আলোচনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণ, ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস এবং ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীসহ সকল অংশীদারদের কাছে আগাম সতর্কতা পৌঁছে দেওয়ার জন্য টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তির টেকসই ব্যবহারের ওপর আলোকপাত করেন বক্তারা। 

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ এমদাদ উল বারী (অবঃ) বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে বাংলাদেশ অপরিচিত নয়। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং অন্যান্য জলবায়ু-সৃষ্ট দুর্যোগ জীবন, জীবিকা এবং জাতীয় উন্নয়নের জন্য বারবার হুমকির সৃষ্টি করেছে। এই ধরনের প্রেক্ষাপটে, নির্ভরযোগ্য, বাস্তব-সময়ের এবং সহজলভ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবেশাধিকার কেবল গুরুত্বপূর্ণই নয়, বরং জীবন রক্ষাকারীও হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার চারটি ধাপ তথা- দুর্যোগ প্রশমন, প্রস্তুতি, প্রতিক্রিয়া এবং পুনরুদ্ধারে টেলিযোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বেশি এবং ঘন জনসংখ্যার কারণে, সেল ব্রডকাস্ট ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে সরাসরি সতর্কীকরণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিক এবং নির্ভরযোগ্য টুলস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

বাংলাদেশের মত দুর্যোগপূর্ণ দেশে মোবাইলকেন্দ্রিক আর্লি ওয়ানিং সিস্টেমের গুরুত্ব তুলে ধরে এই সিস্টেমকে ত্বরান্বিত করতে আইটিইউ বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) প্রতিনিধি কারেন ‍উ। তিনি জানান, আর্লি ওয়ানিং ফর অল পিলার থ্রি এর মূল লক্ষ্য হলো সতর্কতা প্রচার এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সক্রিয় রাখা। এই পিলারের মাধ্যমে যে কোনো দুর্যোগ শনাক্ত ও সতর্কতা জারি করা হলে দ্রুত ঝুঁকিতে থাকা সকলের কাছে বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে সময়োপযোগী, বোধগম্য এবং কার্যকর পদ্ধতিতে  আগাম সতর্কতা জানিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়। সবার জন্য প্রাথমিক সতর্কীকরণউদ্যোগটি জাতিসংঘের নেতৃত্বে একটি বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা, যার লক্ষ্য হল ২০২৭ সালের মধ্যে পৃথিবীর সকল মানুষ যাতে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করা। এর ৪টি মূল পিলারের এর মধ্যে (পিলার ১) দুর্যোগ ঝুঁকি জ্ঞান এবং ব্যবস্থাপনা, (পিলার ২) পর্যবেক্ষণ এবং পূর্বাভাস, (পিলার ৩) সতর্কতা প্রচার এবং যোগাযোগ ও (পিলার ৪) প্রস্তুতি গ্রহণ এবং দ্রুত রিসপন্স টিম সক্রিয় করা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা আসন্ন বিপদের পূর্বাভাস দেয়া এবং তা নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে ও যথাসময়ে প্রচার করা।  যার মাধ্যমে ঝুঁকিতে থাকা জনগণ সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে। ইতোমধ্যে নদী ভাঙ্গন ও সাইক্লোনের ক্ষেত্রে আগাম সতকর্তায় অগ্রগতি সাধন করেছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বর্তমানে ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে বর্জ্যপাত আগাম সনাক্ত করতে পারে, তাই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সতর্কতা প্রদানের জন্য বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের এগিয়ে আসতে হবে।

২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আর্লি ওয়ানিং সিস্টেম ফর অল’ কর্মসূচিতে যোগ  দেয় জানিয়ে সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগাম এর পরিচালক জনাব আহমেদুল হক বলেন, সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সচল থাকার গুরুত্ব উপলব্ধি করা গেছে। , ১৯৭০ ও  ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে মানুষ ও জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই সময় ১৯৭০ সালে ভোলায় হতাহতের পরিমাণ ছিলো ১০ লাখ। অথচ ২০২৪ সালে টেলিসেবার বদৌলতে এই ক্ষতি নেমে এসেছে মাত্র ১২০-এ। তাই যত আগে সতর্কতা, তত বেশি ক্ষয় ক্ষতির সম্ভবনা কমবে। 

স্বাগত বক্তব্যে দুর্যোগকালীন দুর্গত এলাকায় আগাম সতকর্তা জারির জন্য টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার যুগপৎ ব্যবহারে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইকবাল আহমেদ। 

সূত্রমতে, দুই দিনের কর্মাশালা শেষে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অংশগ্রহণে আপদকালীন সময়ের জন্য একটি জাতীয় জরুরী টেলিযোগাযোগ পরিকল্পনা (এনইটিপি) প্রণয়ণ করে একটি কৌশল বাস্তবায়ন পত্র প্রকাশ করা হবে। 

সে লক্ষ্যেই দুই দিনের কর্মশালায় বাংলাদেশের জন্য জাতীয় জরুরি টেলিযোগাযোগ পরিকল্পনা, সেল ব্রডকাস্ট আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম সংক্রান্ত মোট ৭ টি সেশনে আলোচনা করছেন বক্তারা। এতে নিজেদের মতামত তুলে ধরবেন অংশগ্রহণকারীরা। তাদের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে- সেল ব্রডকাস্ট আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম (CB-EWS) এর আওতায় বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পের জন্য সেল ব্রডকাস্টিং সতর্কতা সম্পর্কে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ, প্রদর্শন , মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের সাথে সমন্বয় ও দেশব্যাপী বাস্তবায়ন সংক্রান্ত নানা প্রযুক্তি ও কৌশল। এভাবেই থবদ্ধতার মধ্য দিয়ে জাতীয় জরুরি টেলিযোগাযোগ পরিকল্পনা (NETP) এর আতওায় জরুরি টেলিযোগাযোগ কাঠামো মূল্যায়ন, দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ তথা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে সমন্বয় সাধন এবং জরুরি পরিস্থিতিতে স্থিতিশীল টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো নিশ্চিত করা করতে চায় সরকার ।