সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ পাশ

২২ মে, ২০২৫  
২২ মে, ২০২৫  
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ পাশ

সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ ও বিচারে এবং অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।  বৃহস্পতিবার (২২ মে) এই অধ্যাদেশ জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।  অধ্যাদেশটি এরই মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। সংসদ ভেঙে যাওয়ায় এবং পরিস্থিতি জরুরি মনে হওয়ায় রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করেছেন। গেজেটে বলা হয়, ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। তবে ওই আইনের ১৭,১৮,১৯,২০,২২,২৩,৩০,৩২ ও ৩৫ ধারাসমূহ বলবৎ থাকবে।

এর আগে বুধবার (২১ মে) রাতে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন বিচারক ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিব ডক্টর হাফিজ আহমেদ চৌধুরী  অধ্যাদেশে এ  স্বাক্ষর করেন। সাইবার সুরক্ষার নিশ্চিতকরণ, সাইবার স্পেসে সংঘটিত অপরাধ সনাক্তকরণ, অপরাধের বিচার এবং আনুষাঙ্গিক বিষয়ে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশটি জারি করা হয়। অধ্যাদেশ নং ২৫, ২০২৫।

এতে বলা হয়, সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এ নাগরিক সুরক্ষার প্রয়োজনীয় বিধান ছিল না, যার ফলে সেই আইন অপব্যবহার ও নিপীড়নের সুযোগ তৈরি করেছিল এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছিল। তাই ওই আইন বাতিল করে সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করা, অনলাইনে সংঘটিত অপরাধ শনাক্ত, প্রতিরোধ, দমন ও এসব অপরাধের বিচারসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জন্য নতুন অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।

নতুন অধ্যাদেশে বলা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ রহিত ক্রমে সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিতকরন এবং সাইবার স্পেসে সংগঠিত অপরাধ সনাক্তকরণ প্রতিরোধ দমন ও উক্ত অপরাধের বিচার এবং আনুষাঙ্গিক বিষয়ে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশ জারি করা হল।

গত ৬ মে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সেদিন তিনি জানান, ২৫ বার খসড়া পরিবর্তন করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের পর এই সপ্তাহে চূড়ান্ত গেজেট জারি হবে।

এতে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো নারী-শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানির জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নয়টি ধারায় কুখ্যাত মামলা হতো। এসব ধারায় মামলাগুলো এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এছাড়া কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মতামত বা কথা বলায় যে অপরাধ হতো, সেখানে মাত্র দুটি বিষয় রাখা হয়েছে। একটি নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নিপীড়নমূলক কনটেন্ট প্রকাশ বা হুমকি দেওয়া। আরেকটি হলো, ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানোর মধ্য দিয়ে সহিংসতা উসকে দেওয়া। এই মামলা হলে আমলি আদালতে যাবে, তারপর তিনি যদি দেখেন, কোনো ভিত্তি নেই তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা বাতিল করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, কথা বলা বা মতামত প্রদানের জন্য যে মামলা হতো সেগুলো জামিনযোগ্য করা হয়েছে। কথা বলা বা মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের সাজা। মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে সাজার বিধান আরও বেশি আছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমবারের মতো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) এর মাধ্যমে কোনো সাইবার অপরাধ করা হয় সেটাকে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কনটেন্ট এবং বঙ্গবন্ধু সংক্রান্ত ধারায় প্রচুর মামলা করা হতো, এই ধারা বাতিল করা হয়েছে। মানহানিকর মামলায় হতো সে ধারা বাতিল করা হয়েছে।