পাশে দাঁড়িয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহও

কারাগারে নুসরাত ফারিয়া, ফেসবুকে পোস্ট!

১৯ মে, ২০২৫  
১৯ মে, ২০২৫  
কারাগারে নুসরাত ফারিয়া, ফেসবুকে পোস্ট!

হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় গ্রেফতারের পর আদালতের নির্দেশে সোমবার (১৯ মে) কারাগারে পাঠানো হয়েছে চিত্রনায়িকা, মডেল ও উপস্থাপিকা নুসরাত ফারিয়াকে। তবে বেলা ১টা ১০ মিনিটে  “পরিবারের জন্য দোয়া করবেন” লিখে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পারিবারিক একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। মুহূর্তেই পোস্টটি ভাইরাল হয়। পোস্টোর নিচে মন্তব্যও পড়েছে হাজারের মতো। 

অনেকেই জানতে চেয়েছেন- জেলে বসে পোস্ট কিভাবে করলেন তিনি। না কি হ্যাক হয়েছে। কেউবা ফোরন কেটে লিখেছেন- ভালোই ত হলো এখন পলক কাকুর সাথে থাকবেন। কেউবা স্বান্তনা দিয়ে লিখেছেন-টেনশনের কিছু নাই, কিছুই হবে না। আগামী সপ্তাহে জামিন পেয়ে যাবেন। 

ওই পোস্টের প্রায় এক ঘণ্টার ব্যাবধানে অ্যাডমিন পোস্ট হিসেবে গতবছরের ‘৯ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই দেশে ছিলেন না নুসরাত ফারিয়া” ফটোপোস্ট করা হয়। ফটপোস্টটিতে দৈনিক কালের কণ্ঠ লেখা থাকলেও নিচে তার লিংক পাওয়া যায়নি।

অবশ্য তার প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা গেছে, হত্যাচেষ্টা মামলার সময়কাল অর্থাৎ ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট সময়ে পুরোটাই ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেছেন ‘হাসিনা’খ্যাত এ তারকা। সবচেয়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয় হলো, হত্যাচেষ্টার সময়কালের পুরোটা সময় দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন এ তারকা। এমনকি আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন ১৬ জুলাই কানাডার ক্যালগারিতে কনসার্ট মঞ্চে ছিলেন। নিজের গানগুলো পরিবেশনায় ব্যস্ত ছিলেন ফারিয়া। ১৭, ১৮ ও ১৯ জুলাই—টানা কয়েকদিন আন্দোলনের পক্ষে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ফারিয়া, যা চলেছে পরবর্তী ৭ আগস্ট অবধি। 

ফারিয়া ১৮ জুলাই পোস্ট করেন ছাত্র আন্দোলন নিয়ে। সে সময় সরকারের ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ‘গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলে’র একটি ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে ফারিয়া লেখেন, ‘এর চেয়ে হতাশার কিছু নেই।’ এরপর তিনি নিয়মিত ছাত্র আন্দোলনের ছবি প্রকাশ করেন।

আন্দোলন চলাকালীন ১৮ জুলাই রাত পৌনে ৯টার পর থেকে দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ১৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে সরকার ফোর-জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করায় দেশের মোবাইল ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ হয়ে যায়। ব্রডব্যান্ড সংযোগ ২৩ জুলাই চালু হলেও মোবাইল ইন্টারনেট তখনও চালু হয়নি। সে সময়টাতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন ফারিয়া। আর দেশের বাইরে থাকাতেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার একাধিক ঘনিষ্ঠজন ।

১৯ জুলাই নিজের অসহায়ত্বের কথাও ফুটে ওঠে ফারিয়ার ফেসবুক পোস্টে। লেখেন, ‘২ দিন হয়ে গেল, বাংলাদেশে ইন্টারনেট নেই। দেশটি বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন। আমরা কি সত্যিই আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান করতে পারি না? এটা এত কঠিন কেন? খুব অসহায় বোধ করছি।’

২৩ জুলাই আবারও ফারিয়া তাঁর উৎকণ্ঠা জানান ফেসবুকে। লেখেন, ‘৬ দিন হয়ে গেল আমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলিনি। আপনারা সবাই জানেন আমার বাবার অবস্থা তেমন ভালো না। কিন্তু আমি আমার সহকর্মী ছাত্র ভাই এবং বোনের জন্য অনুভব করি। সবার সুস্থতা ও দেশের শান্তি কামনা করছি।’

এমনকি ৩ আগস্ট জাতীয় শহীদ মিনারে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে ছবি প্রকাশ করেন এই শিল্পী। যেখানে ঘোষণা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ও নয়া বন্দোবস্ত।

অপরদিকে, ফারিয়ার সেই বিদেশযাত্রা ও অবস্থানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে পাওয়া গেছে ‘ঢাকা টু দুবাই টু কানাডা’ টিকিট এবং রিটার্ন টিকিট। সেখানে দেখা যায়, ফারিয়া কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন ৯ জুলাই, ২০২৪। দেশের ফেরেন ১৪ আগস্ট, ২০২৪। 

এছাড়াও চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, নুসরাত ফারিয়াকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে বোঝাতে চাচ্ছেন আপনারা খুব বিচার করছেন? এগুলো বিচার নয়, এগুলো হাসিনা স্টাইলে মনোযোগ ডাইভারশন। দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে এক পোস্টে সরকারের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন তিনি। লিখেছেন- ইন্টেরিম, ৬২৬ জনের লিস্ট কোথায়? ৬২৬ জনকে নিরাপদে বের করে দিয়ে এখন নুসরাত ফারিয়াকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে বোঝাতে চাচ্ছেন আপনারা খুব বিচার করছেন?

ওদিকে ফেসবুক পোস্টে অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছেন খোদ সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সেখানে তিনি লিখেছেন- আমি সাধারণত চেষ্টা করি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজের বাইরে কথা না বলতে। আমি সাধারণত চেষ্টা করি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজের বাইরে কথা না বলতে। কিন্তু আমার তো একটা পরিচয় আছে, আমি এই ইন্ডাস্ট্রিরই মানুষ ছিলাম এবং দুইদিন পর সেখানেই ফিরে যাব। নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা হয়ে থাকলো আমাদের জন্য।

আরেক নির্মাতা আশফাক নিপুন লিখেছেন, এভাবেই দিনে দিনে প্রকৃত খুনী এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দুর্বল করতে অন্যদের সফট টার্গেট করা হয়ে আসছিল এবং করা হচ্ছে। এটাকে আর যাই হোক, সংস্কার বলে না সরকার। হত্যাচেষ্টার যে মামলা করা হল এবং যে হত্যার সময় তিনি দেশেই ছিলেন না, সেই অভিনেতা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার এবং কারাগারে প্রেরণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ইঙ্গিতই দেয়। আমরা জুলাই গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার চাইছিলাম। কোনরকম প্রহসন চাই নাই, এখনো চাই না। চিহ্নিত অপরাধীদের পালিয়ে যাওয়া/পালাতে দেয়া এবং ঢালাও গায়েবী মামলাবাজির নাটক বন্ধ করেন।

এভাবেই নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার ও বিচার প্রক্রিয়া ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। ভক্ত ও সহকর্মীরাও তার ন্যায়ের প্রত্যাশায় অপেক্ষা করছেন। 

এরআগে সোমবার দেশের বাইরে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নুসরাত ফারিয়াকে। মামলা সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সংশ্লিষ্ট ২৮৩ জন ও অজ্ঞাতনামা তিন-চারশ’ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেন এনামুল হক নামে এক ব্যক্তি। মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থ যোগান দাতা হিসেবে আসামি করা হয় নুসরাত ফারিয়াকে।