বৃষ্টি বাধায় ঝিনাইদহে চাকরি মেলা 

মেলা ভাঙ্গলেও চলছে বেকার যুবকদের স্বপ্নপূরণের কাজ

৩০ এপ্রিল, ২০২৫  
৩০ এপ্রিল, ২০২৫  
মেলা ভাঙ্গলেও চলছে বেকার যুবকদের স্বপ্নপূরণের কাজ

কারিগরি ও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন নতুন ও অভিজ্ঞ প্রার্থীদের চাকরির সুযোগ করে দিতে ঝিনাইদহে অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী  ‘জব ফেয়ার’। ঝিনাইদহ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে অনুষ্ঠিত এই চাকরি মেলায় বৃষ্টি বাধার আগ পর্যন্ত মাত্র চার ঘণ্টায় জমা পড়েছে ৬ হাজারের বেশি সিভি। 

আর আয়োজনে অংশ নেয়া ১১টি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ছিলো ১২ হাজারের মতো চাকরি প্রত্যাশীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়ার। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো জোহান ড্রিম ভ্যালি, জোহান এগ্রা ফুড, সিও, সৃজনী ফাউন্ডেশন, ওয়ালটন, এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালস, সার্ফ এগ্রো, ফ্রিডম অ্যাডভান্সমেন্ট, আয়ান এন্টার প্রাইজ ও ই-লানিং এন্ড আর্নিং।

এই খবরে সকাল থেকে চাকরিপ্রার্থীরা প্রতিষ্ঠানগুলোর বুথে গিয়ে প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে সিভি বক্সে নিজেদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। পাশাপাশি ই-মেইলে ও স্ক্যান করে নেওয়া হয় সিভি। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোয় মোবাইল সার্ভিসিং, অটোমোবাইল ফার্ম মেশিনারি, কম্পিউটার, ইলেক্ট্রিক্যাল, আইটি ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট পদের জন্য সিভি জমা নেন। ঝিনাইদহ শহর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামের শত শত শিক্ষিত যুবক ভীড় করেন মেলায়।

কিন্তু বৃষ্টি বাধায় চাকরি প্রত্যাশীদের চোখের কোনের আশার আলো যেন নিভে যায়। দমকা হাওয়ায় গুটয়ে নিতে হয় পুরো আয়োজন। ফলে অনস্পট নিয়োগের জন্য সিভি বাছাই করে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে ভাইভা পরীক্ষা নিতে পারেননি চাকরিদাতারা। তবে এতে হতাশ হবার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ও আয়োজক মোঃ মনির হোসেন। মুঠোফোনে তিনি ডিজিবাংলাটেক-কে জানিয়েছেন, জমা পড়া সিভি থেকে প্রার্থীদের ডেকে ইন্টারভিউ নিয়ে চাকরি দেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছেন মেলায় অংশ নেয়া চাকরিদাতারা। 

তিনি বলেন, যারা ইন্টারভিউতে যোগ্য বিবেচিত হবেন তারা ঠিকই চাকরি পেয়ে যাবেন। আশাকরি প্রকৃতিক দুর্যোগ তাদের জন্য কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। এজন্য আমরা মেলা শেষ হলেও আমাদের কার্যক্রম বা উদ্যোগ বাস্তবায়নে থেমে থাকছি না। আমরা চাকরিদাতাদের সঙ্গে কথা বলে জমা পড়া সিভি থেকে প্রার্থীদের অন-স্পট চাকরির ব্যবস্থা করতে না পারলেও শিগগিরই নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে লেগে থাকবো। 

এদিকে মেলা চলার সময় সাধুহাটী থেকে আসা চাকরিপ্রার্থী নাজমুস সাকিব গণমাধ্যম কর্মীদর বলেন, আমি স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির জন্য জন্য মেলায় এসেছি। তিনটি প্রতিষ্ঠানে তিনি সিভি দিয়েছি। এ ধরনের আয়োজন বেকারত্ব দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।

নিয়মিত এ ধরনের মেলার আয়াজনের দাবি জানিয়ে শৈলকূপা থেকে অংশ নেয়া আরিফ বললেন, আজ আমরা অনেক আশা নিয়ে মেলায় গিয়েছিলাম। সিভিও জমা দিয়েছি। কিন্তু তুমুল বৃষ্টিতে শেষ পর্যন্ত মেলা গুটিয়ে নিতে হয়েছে। এজন্য এখন যদি সিভি দেখে আমাদের চাকরির জন্য কল করা হয়, তাহলে অনেক বেকার যুবকই উপকৃত হবে।  

এর আগে বুধবার (৩০ এপ্রিল) বেলা ১১টায় কলেজ ক্যাম্পাসে মেলার উদ্বোধন করেন ঝিনাইদহ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন।

এ সময় ঝিনাইদহ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. আনিচুর রহমান মৃধা, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি আসিফ কাজল, মডার্ন ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিনিধি এবিএম জাহাঙ্গীর হোসেন, জিএম আলমগীর হোসেন, আইডিইবির সভাপতি ইয়াসিন আলী, শৈলকূপা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সামায়ান হোসেন, ঝিনাইদহ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক হাদিউজ্জামান, আবু সাইদ, মনিরুজ্জামান ও হুমায়ন কবীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

মেলা নিয়ে  ঝিনাইদহ সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. আনিচুর রহমান মৃধা জানান, প্রতিষ্ঠানটি কারিগরী শিক্ষার একটি মডেল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে, যাতে এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজে কর্ম করে পরিবারে সচ্ছলতা আনতে পারেন। 

তিনি জানান, ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় তিন’শ যুবক কারিগরী দক্ষতা অর্জন করে বিদেশে গেছেন। সম্প্রতি শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে ৪০ জন চীনে গেছেন। পাকিস্তান আমলে এখানে যে ওয়ার্কসপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা অন্য কোথাও নেই। 

এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষামুখী বা শ্রেণিমুখী করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের কো-কারিকুলার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সংশ্লেষবিহীন বিভিন্ন ইস্যুতে আয়োজিত সভা-সমাবেশ ও মিছিল কমবে বলে আশা প্রকাশ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।