চিরঘুমে দেশের জীবপ্রযুক্তি গবেষণার পথিকৃৎ

শতবর্ষী বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন বাংলাদেশে আধুনিক জীবপ্রযুক্তি গবেষণার অগ্রপথিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আহমদ শামসুল ইসলাম। সোমবার (১৪ এপ্রিল) বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদ তার রুহের মাগফেরাত করে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর চিরঘুমে শায়িত হয়েছেন বনানী কবরস্থানে।
এর আগে সকালে ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন) দেশে টিস্যু কালচার ও বায়োটেকনোলজি গবেষণার এই পথিকৃৎ। জিবদ্দশায় তিনিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে স্থাপন করেন প্রথম ‘প্ল্যান্ট টিস্যু কালচার ও জেনেটিকস ল্যাবরেটরি’; গড়ে তুলেন বাংলাদেশি বায়োটেকনোলজিস্টদের সংগঠন জিএনওবিবি।
মৃত্যকালে অসংখ্য গুণগ্রাহী ও শিক্ষার্থীসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেলেন আহমদ শামসুল ইসলাম। তার বড় ছেলে অধ্যাপক ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ছোট ছেলে খালিদ ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এর একমাত্র মেয়ে মেয়ে অধ্যাপক জেবা ইসলাম সিরাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য।
অধ্যাপক আহমদ শামসুল ইসলাম ১৯২৪ সালের ৬ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৪১ সালে ম্যাট্রিক, রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৪৩ সালে ইন্টারমিডিয়েট (বিজ্ঞান বিভাগ), প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা থেকে ১৯৪৫ সালে বোটানিতে অনার্স এবং ১৯৪৭ সালে এমএসসি সম্পন্ন করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ব্রিটিশ কাউন্সিলের আর্থিক সহায়তায় যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বোটানিতে (সাইটোজেনেটিকস) পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বীজবিহীন স্ট্রবেরি নিয়ে তার অনন্য গবেষণার জন্য একই বছর কারি মেমোরিয়াল পুরস্কার লাভ করেন।
এছাড়াও শিক্ষা ও গবেষণায় অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে কৃষিতে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক, ১৯৮৬ সালে শিক্ষায় একুশে পদক পেয়েছেন অধ্যাপক আহমদ শামসুল ইসলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার গবেষণা-ফলাফল তিনি 'নেচার' জার্নালে প্রকাশ করেছিলেন গত শতকের ৫০ এর দশকে। বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে দেশের বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে পাটের জিনোম নিয়ে গবেষণাপত্রটি উৎসর্গ করা হয়েছিলো তার নামে। ওখানকার ছোট্ট একটা প্যারাগ্রাফ এরকম- "One can cite several important papers of Prof Islam to justify his pioneering role in the foundation of biotechnology in Bangladesh, including the early work on jute genomics and breeding. In a paper published in 1960 in the Nature journal, he and his colleague were the first in the world to successfully produce a hybrid between two jute-yielding species, which continues to make impact in current research. Between 1952 and 1964, he produced three more papers in Nature on cytogenetics and embryo culture by use of plant hormones."
কর্মগুণে প্রেরণার বাতিঘর হয়ে রইলেন অধ্যাপক আহমদ শামসুল ইসলাম।