নাসা রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২৫
বিশ্বের সেরা দশে ‘ড্রিমস অব বাংলাদেশ’; দুই পুরস্কার হোপ স্কুলের

বাংলা নতুন বর্ষের প্রাক্কালে এলো গর্বের ফল। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) আয়োজিত ‘হিউম্যান এক্সপ্লোরেশন রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২৫’ (এইচইআরসি) প্রতিযোগিতায় হাইস্কুল ক্যাটাগরিতে ফিওনিক্স অ্যাওয়ার্ড জিতেছে বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল। একইসঙ্গে হাইস্কুল হিউম্যান পাওয়ার্ড রোভার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডও জিতেছে দলটি।
এছাড়াও বিশ্বের সেরা দশ রোভার নির্মাতার দলে জায়গা করে নিলো বাংলাদেশের ড্রিমস অব বাংলাদেশ দল। যুক্তরাষ্ট্রের হান্টসভিল, অ্যালাবামায় অবস্থিত ইউএস স্পেস অ্যান্ড রকেট সেন্টারে ১১ ও ১২ এপ্রিল দুই দিন ধরে অনুষ্ঠিত চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশের নাম অবিস্মরণীয় করে রাখলো দামাল চন্দ্রাভিলাষীদের তৈরি চন্দ্রযান ‘মাইরেজ ১’।
পরামর্শদাতা শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ এবং মো. মুনজুর মোর্শেদ, টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার শাহিদুল হাসান মন্টি ও ইফতেখার হোসাইনের দিকনির্দেশনায় হোপ ইন্টারন্যাশনাল দলে নেতৃত্ব রয়েছেন শাহজাদি আয়মান সুলতানা ও মাহজাবিন আলম রোশনী। দলের সঙ্গে স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন উত্তরা সিনিয়র সেকশন এর প্রধান কামরুল আহসান, গুলশান শাখার ডেপুটি হেড রকিবুল করিম, শিক্ষক আদনান শিহাব আহমেদ ও সাইমা সামাদ।
অপরদিকে হানস্যানভ্যালির ইউএস রকেট সেন্টারের ট্র্যাকে চাঁদের পৃষ্ঠের আবহে তৈরি রাস্তা ও বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ মুন রোভার চ্যালেঞ্জ দলের তৈরি চন্দ্রযানটি। ২০টি বাধাই মুন্সিয়ানার সঙ্গে অতিক্রম করেছে। প্রথম ভ্রমণে ১৫ নম্বরের মধ্যে ১০ পেলেও দ্বিতীয় রানে পূর্ণ নম্বর পেয়েছে। ৫০ এর মধ্যে মোট স্কোর করেছে ৪৫।
কিউরিওসিটি রোভারের মতো অনেকটা, রকার-বগি সাসপেনশন সিস্টেম ব্যবহার করে দূর নিয়ন্ত্রিত রোভারটিতে রয়েছে ছয়টি চাকা। রোভারটির দৈর্ঘ্য ৭০০ মিমি, প্রস্থ ৪৬০ মিমি, উচ্চতা ২৮০ মিমি। ফ্রেম ও ভার বহনকারী কাঠামো তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম বার। এর চাকার ব্যসার্ধ ১৮০ মিমি, গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ৩৬০ মিমি। কার্বন ফাইবার টিউব ব্যবহার করা হয়েছে এর কাঠামোগত শক্তি বাড়াতে। পলিল্যাকটিক এসিড ব্যবহার করা হয়েছে প্রোটোটাইপিং ও হালকা কম্পোনেন্টের জন্য। আর থার্মোপ্লাস্টিক পলিউরেথেন ব্যবহার করা হয়েছে চাকার নমনীয় জয়েন্ট ও প্রভাব প্রতিরোধী অংশের জন্য। রোভারটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর অত্যাধুনিক সেন্সিং এবং নেভিগেশন সিস্টেম। এতে ইন্টিগ্রেটেড স্ল্যামটেক আরপি-লাইডার সিস্টেম রয়েছে, যা ৩৬০ ডিগ্রি দৃষ্টিকোণ থেকে আশপাশের জমি ম্যাপ করতে পারে। টাইম অব ফ্লাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই লাইডার লেজার রশ্মি ছড়িয়ে বিষয়বস্তুর দূরত্ব পরিমাপ করার মাধ্যমে বিস্তৃত পয়েন্ট ক্লাউড তৈরি করে, যা প্রক্রিয়াকরণের ফলে তৈরি হয় ২ডি মানচিত্র। ইএসপিভিত্তিক মাইক্রোকন্ট্রোলার রোভারের মস্তিষ্ক হিসেবে কাজ করে এবং সব ডেটা প্রসেসিং ও রোভার নিয়ন্ত্রণের কাজও করে এটি। এর সঙ্গে সংযুক্ত একটি রিসিভার ইউনিট আছে, যা প্রধান রিমোট কন্ট্রোলারের সঙ্গে বেতার যোগাযোগ স্থাপন করে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বা ওয়াই-ফাই প্রটোকলের মাধ্যমে। রোভারটিতে আরো সজ্জিত ছয়টি ডিসি মোটর, মোটর ড্রাইভার মডিউল, উচ্চ রেজল্যুশনের দৃশ্য ধারণের ক্যামেরা সিস্টেম এবং বিশেষভাবে ডিজাইন করা পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দিয়ে, যা লিথিয়াম পলিমার ও ১৮৬৫০ ব্যাটারির সমন্বয়ে তৈরি। এটি অন্ধকারে, ধুলাচ্ছন্ন অবস্থায়, এমনকি বৈরী আবহাওয়ায়ও সঠিকভাবে ডেটা সংগ্রহ করতে পারে। পরীক্ষাগারের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এটি তথ্য সংগ্রহে ৯৮ শতাংশ নির্ভুলতার হার অর্জন করেছে।
প্রতিযোগিতায় অবিস্মরণীয় ফল নিয়ে নাসা এইচইআরসি মিশনের বাংলাদেশের সেনাপতি বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী মাহদির ইসলাম জানিয়েছেন, চ্যালেঞ্জে কারা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফিল্ড স্কোর করেছেন। এই অর্জন দলের সতীর্থদের উৎসর্গ করে তিনি বলেছেন, এটা আমাদের সম্মিলিত কঠোর পরিশ্রম এবং লেগে থাকার ফসল। তবে এখানেই শেষ নয়, এটা কেবল শুরু। এ যাত্রা অব্যাহত থাকবে। আমাদের দৃষ্টি আরো প্রসারিত হয়েছে। স্বপ্নছোঁয়ার তৃষ্ণাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
ড্রিমস অব বাংলাদেশ দলটির নেতৃত্বে আছেন ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার্থী সানজিম হোসাইন। দলের সেফটি অফিসার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী আন নাফিউ, মেকানিক্যাল লিড ঢাকার সিপিআই পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী মো. রিফাত হোসাইন, টেকনিক্যাল লিড বিএএফ শাহীন কলেজের শিক্ষার্থী মো. ইয়াসিন আরাফাত, সফ্টওয়্যার লিড হিসেবে আছেন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী অর্কপ্রতীক আচার্য, দলের ইলেকট্রিক লিড হিসেবে আছেন সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মার্জিয়া আফিফা পৃথিবী। মাইরেজ-১ এর ডিজাইন লিড হিসেবে আছেন ঢাকা ইমপিরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল জুনায়েদ। অন্য সদস্যরা হলেন- ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আয়েশা জাহার সাফা, ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থী ফাতেমা জাহান শিফা, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত এইচ রহমান ও হাসিন ইশরাক চৌধুরী তাহা।
প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গত ২৮ মার্চ দলের ১২ সদস্য এবং ৭ এপ্রিল আরো ৩ জন সদস্য বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৭২টি দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত হয়েছিলো ড্রিমস অব বাংলাদেশ।