ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অনলাইন-অফলাইনে চলছে ‘লাল কার্ড’ প্রদর্শন

বুয়েট-জিডিইউ ও আইসিটি টাওয়ার সহ দেশজুড়ে শিক্ষার্থী-জনতার বিক্ষোভ

৭ এপ্রিল, ২০২৫  
৭ এপ্রিল, ২০২৫  
বুয়েট-জিডিইউ ও আইসিটি টাওয়ার সহ দেশজুড়ে শিক্ষার্থী-জনতার বিক্ষোভ

ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশে সাবাইর আকাশ থেকে ডাক দিয়ে এখন রাজপথেও লাল কার্ড দেখিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থী-জনতা। বুয়েট-জিডিইউ সহ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়লয়গুলো সোচ্চার ছিলো এই প্রতিবাদে। প্রতিবাদ হয়েছে আইসিটি টাওয়ারের সামনে। প্রতিবাদে সতঃস্ফূর্ত অংশ নিয়েছে দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন সংগঠন সহ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। 

রাজধানীর মতিঝিল কমপিউটার সোসাইটি (এমসিএস) সহ রহমানিয়া কমপিউটার মার্কেট ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। একইভাবে বিক্ষোভ হয়েছে ইসিএস কমপিউটার সিটি ব্যবসায়ী মালিক সমিতি ও এলিফ্যান্ট রোড কমপিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির (ইসিএস) উদ্যোগেও। বিক্ষোভ হয়েছে মাল্টিপ্লান সেন্টারের সামনে। 

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবি ও ‘ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।  সোমবার (৭এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তারা জেরুজালেমে ফিলিস্তিনের পূর্ণ অধিকার আছে বলে মন্তব্য করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা দাবি করেন। মানববন্ধনে শতাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন বুয়েটের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। এ সময় তারা-‘ফিলিস্তিন মুক্তি পাক, ইসরাইল নিপাত যাক’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, আল আকসা জিন্দাবাদ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

মানববন্ধনে বুয়েটের উপ-উপাচার্য ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী বলেন, ফিলিস্তিনের দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী পৌনে শতাব্দী ধরে দখলদারত্ব বজায় রেখেছে, গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আরব বিশ্ব ও অন্যান্য ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো নীরব রয়েছে। আমি মনে করি, অতি শিগগিরিই ধ্বংসস্তূপ থেকে স্বাধীন ফিলিস্তিনের উত্থান ঘটবে এবং এই উত্থানই সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশবাদের ঐতিহাসিক পরাজয়ের সূচনা করবে। এ সময় তিনি ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’র প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন।

এছাড়াও সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অফিসে কর্মবিরতি, সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন এবং সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত কর্মসূচি পালন করছে গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, অফিস প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, “আজকে আমরা এমন একটি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি, যেখানে বিশ্বব্যাপী ‘No Work No School’ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে, সে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদস্বরূপ আজকে বিশ্বব্যাপী এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের আহবানে এই কর্মসূচিতে আমরাও একত্রিত হয়েছি, একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

উপাচার্য বলেন, “যে ভাবে ফিলিস্তিনের গাজায় নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে তা সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। বিশ্বের সর্বোচ্চ অভিভাবক জাতিসংঘ, মুসলিম উম্মাহর অভিভাবক ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-এর প্রতি আমাদের উদাত্ত আহবান, আপনারা বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলুন এবং ফিলিস্তিনে আমাদের ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়ান। আমরা সবাই আপনাদের পাশে আছি। ফিলিস্তিনের ভাই-বোনদের যেভাবে বোমা মেরে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে এটি আর মেনে নেয়া যায় না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) রাকিব হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন, পরিচালক শিক্ষার্থী কল্যাণ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফারহানা ইসলাম, পরিচালক গবেষণা ও সম্প্রসারণ অফিস জনাব মো. আশরাফুজ্জামান, সহকারী প্রক্টর জনাব মো. আশিকুচ্ছালেহীন, সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট জনাব মুহাম্মদ শাহীনূল কবীর। 

একইভাবে প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে  ‘শো ইসরায়েল দ্য রেড কার্ড’ প্লাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও। বিক্ষোভ হয়েছে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদেও। 

বিশ্বমোড়লদের ‘ঘুম ভাঙাতে’ বাংলাদেশের জেলায় জেলায় ফুঁসে উঠেছে জনতা। দিচ্ছেন ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক। রাজধানীর ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর থেকে শুরু করে বসুন্ধরা এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ করতে দেখাগেছে সোমবার সকালেই।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেন বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ), ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি), আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এআইইউবি) ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আট নম্বর গেট এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা প্রদক্ষিণ করে আবারও একই জায়গায় এসে শেষ হয়। এতে কয়েক শ শিক্ষার্থী অংশ নেন। মিছিলে ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘বয়কট ইসরায়েল’, ‘ইসরায়েলের কালো হাত-ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ইসরায়েল উইল বি সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ স্লোগান দেওয়া হয়।

ফিলিস্তিনে চলমান বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা  বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এই কর্মসূচি দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে। এসময় তাদের হাতে ‘বয়কট ট্রাম্প, সেভ ফিলিস্তিন’,  ‘বয়কট ইউএসএ’ লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। রাজধানীর সায়েন্সল্যাব, বসিলা ও উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে বিক্ষোভ করেছেন বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরাও।

 

সমাবেশে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মাহাবুবুল হক (অব.), ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান জনাব সাদিক ইকবাল, আর্কিটেকচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার তরিকুল ইসলাম, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার, আইন বিভাগের প্রভাষক রেজাউল আলিম এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন। তারা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা অবিলম্বে ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কাছাকাছি কয়েকটি স্থানে একাধিক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। কাল থেকে প্রেসিডেন্স ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স এবং বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী কলেজ, ঢাকার শিক্ষার্থীরা পরে মার্কিন দূতাবাসের সামনে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। মার্কিন দূতাবাসের উল্টোদিকের পদচারী সেতুর সামনে বিক্ষোভ করেছে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনালে ইউনিভার্সটির একদল শিক্ষার্থী।

এছাড়াও রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারের সামনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন ও মৌন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে।

এদিকে গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিতর্কিত মন্তব্যের পর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক তাহমিনা রহমানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র এবং এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে ফেসবুকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক শরিফুজ্জামান সজল ঘোষণা দিয়েছেন, যেকোনো গণহত্যার বিরুদ্ধে যেকোনো প্রোগ্রামে গেলে আমার ছাত্ররা ‘ডাবল অ্যাটেডেন্স’ পাবে, কারণ এইসব প্রোগ্রামে তারা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে তা কোনো তাত্ত্বিক ক্লাস তাদেরর দিতে পারবে না।

গাজায় গণহত্যা বন্ধে সোমবার অনলাইন-অফলাইনে হরতালের ডাক