বিশ্বজুড়ে স্মার্ট ভবনের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে

স্থপতি ফওজিয়া জাহান
১৭ জুলাই, ২০২৫  
৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  
বিশ্বজুড়ে স্মার্ট ভবনের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে

শহর যত বড় হচ্ছে, ভবন ততো উঁচু হচ্ছে, হচ্ছে জটিল। তবে এই জটিলতা শুধু কাঠামোগত নয়। ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্যুৎ সংকট, পানির অপচয়, বায়ু দূষণ ও তাপমাত্রার বৃদ্ধির মত পরিবেশগত সমস্যা ও। একদিকে যেমন ভূগর্ভস্থ পানি স্তর নামছে, তেমনি বৈদ্যুতিক চাহিদা ও বাড়ছে বহুগুনে। ভবনের ২৪ ঘন্টা জীবনচক্রে বিদ্যুৎ পানি ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দিনে দিনে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় ভবনের ভূমিকা আর শুধু আশ্রয়স্থ হবে মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এখন একটি ভবনকেই হতে হবে স্মার্ট এবং পরিবেশবান্ধব। যা আধুনিক প্রযুক্তি এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে শক্তি ও সম্পদের অপচয় কমিয়ে দেবে। 

বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে স্মার্ট ভবনের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। এই ভবন গুলো বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে, বৃষ্টির পানি ধরে রাখে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন বুঝে নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়। তবে এই প্রযুক্তিগত সুবিধা পেছনে স্থাপত্যের সূক্ষ্ম পরিকল্পনা আর পরিবেশ সচেতন চিন্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

স্মার্ট ভবনের পথ শুরু হয় কাগজে কলমে, স্থপতির ড্রয়িং বোর্ডে। ভবনের অবস্থান থেকে শুরু করে জানালার দিক, ছাদে রোধ করার মাত্রা, এমনকি লিফট কোর কোথায় বসবে সব কিছুই নির্ধারণ করে ভবনের ভবিষ্যতের দক্ষতা। যেমন সূর্যের গতিপথ বুঝে যদি ভবনের অরিয়েন্টেশন পরিকল্পনা করা যায়, তাহলে গরম কম হবে। এসি ব্যবহারের প্রয়োজন হ্রাস পাবে। ভেন্টিলেশন ঠিকঠাক থাকলে আলো-বাতাস ব্যবস্থার উপরে চাপ কমবে। এমনকি ছাদের ছায়া দেওয়া অংশে সৌর প্যানেল বসানো জায়গা রেখেই নকশা করলে পরবর্তী খরচ ও পরিশ্রম অনেকটাই বাঁচে।  কিন্তু সব ক্ষেত্রে অরিয়েন্টেশন সঠিক কিংবা আশানুরূপ না ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

আধুনিক নির্মাণ সামগ্রীর মধ্যে কাচের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ডাবল গ্লেজড কাচ, যেখানে দুই স্তরের কাছের মাঝে ইনসুলেটিভ গ্যাস বা ভ্যাকিউম ব্যবহার করা হয়, যা বাইরের তাপ এবং শব্দ ঘরে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এতে ঘর ঠান্ডা থাকে এবং এসির ব্যবহারের প্রয়োজন কমে যায়। এই কাচ সূর্যের আলো প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে এবং তা ছায়াময় ও আরামদায়ক আলোর পরিবেশ নিশ্চিত করে। ভবনের অরিয়েন্টেশন যাই হোক না কেন, ডাবল গ্লেজড কাচ ব্যবহারের ফলে সূর্য তাপের নেতিবাচক প্রভাব কমানো যায় এবং দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করা সম্ভব হয়। এতে কৃত্রিম আলো ব্যবহারের প্রয়োজন হ্রাস পায়। ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ও নিশ্চিন্ত হয়। এখন ভবনে থেকে সংগ্রহ করা বৃষ্টির পানি পাইপ ও ফিল্টার ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ ট্যাংকে জমা হয়। এই পানির ব্যবহার হয় টয়লেট বাগান কিংবা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায়। ভবনের ডিজাইনে যদি ছাদের স্লোপ ও জল ধারণ ব্যবস্থা ঠিকভাবে পরিকল্পনা করা হয় তাহলে পানি অপচয় করা ছাড়াই তা সংরক্ষণযোগ্য হয়। এছাড়াও ছাদের ছায়ামুক্ত এলাকায় সৌর প্যানেল স্থাপন করলে ভবন দিনের আলোতেই নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সাধারণ লাইটিং, এলিভেটর ও সিসি টিভি চালানো হয়।

স্মার্ট এলিভেটরের ব্যবহৃত লিজেনারিটিভ ড্রাইভ সিস্টেম চলার সময় বিশিষ্ট অতিরিক্ত শক্তিকে আবার ভবনের সিস্টেমে ফিরিয়ে দেয়। আবার এলিভেটরে ডেস্টিনেশন কন্ট্রোল সিস্টেম ব্যবহারকারী লিফটে ওঠার আগেই নির্দিষ্ট ফ্লোর নাম্বার প্রবেশ করান। এবং সিস্টেম সক্রিয়ভাবে তাকে একই গন্তব্য বা কাছাকাছি গন্তব্যে যাওয়া অন্য যাত্রীদের সঙ্গে গ্রুপ করে দেয়। এতে লিস্টের বারবার ওঠা নামা ও থামা কমে হয়।  ভবনের নকশায় যদি এলিভেটরের কোর এমন ভাবে রাখা যায় যে তা প্রাকৃতিক আলো পায় তাহলে দিনের বেলায় করিডোর ও ওয়েটিং এরিয়ায় আলোর প্রয়োজন পড়ে না। করিডোরে মোশন সেন্সর যুক্ত লাইট অপচয় রোধ করে। 

একটি ভবন তখনই স্মার্ট হয় যখন সেটি মানুষ প্রকৃতি ও প্রযুক্তির মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করে। স্মার্ট ভবন শুধুমাত্র এখন ভবিষ্যৎ নয় এটি যুগের চাহিদা ঢাকায় আমরা বেশ কিছু স্মার্ট ভবন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হতে দেখছি। গুলশান এভিনিউতে সিম্পল ট্রি জি এস আর একটি আধুনিক ও ভবিষ্যৎমুখী পরিবেশ বান্ধব ডিজাইন। স্মার্ট ভবন মানে শুধু মোবাইল অ্যাপে চলা লাইট নয়। বরং এটি একটি দায়িত্বশীল জীবনযাপন ও সচেতন স্থাপত্যের বহিঃপ্রকাশ।


লেখকঃ স্থপতি, ভলিউম জিরো লিমিটেড 


দ্রষ্টব্য: অভিমত-এ প্রকাশিত পুরো মতামত লেখকের নিজের। এর সঙ্গে ডিজিটাল বাংলা মিডিয়া কর্তৃপক্ষের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বহুমতের প্রতিফলন গণমাধ্যমের অন্যতম সূচক হিসেবে নীতিগত কোনো সম্পাদনা ছাড়াই এই লেখা প্রকাশ করা হয়। এতে কেউ সংক্ষুব্ধ বা উত্তেজিত হলে তা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়।