দুই বছরে ব্যাংকের আইটিতে বিনিয়োগ কমেছে ১৩৩ কোটি টাকা

তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) অবকাঠামো উন্নয়নে দুই বছরের ব্যবধানে দেশি–বিদেশি ৩৩টি ব্যাংকের বিনিয়োগ কমেছে ১৩৩ কোটি টাকা। ২০২২ সালে ২ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও। ২০২৪ সালে এই খাতে দেশের কার্যক্রম পরিচালনাকারী দেশি–বিদেশি ৩৩টি ব্যাংকের বিনিয়োগ কমে ২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকায় নেমেছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালে ব্যাংকগুলো হার্ডওয়্যার কিনতে এ খাতে মোট বিনিয়োগের প্রায় ৪১ শতাংশ অর্থ ব্যয় করে। আর সফটওয়্যার কিনতে ব্যয় করে ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থ। আর আইটি নিরাপত্তা, নিরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ হয় এ খাতে ব্যয় করা অর্থের ৯ শতাংশেরও কম।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে ১৬ জুলাই, বুধবার অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়। দেশের ৩৩টি ব্যাংকের আইটি খাতে বিনিয়োগ পর্যালোচনা করে এই তথ্য পেয়েছে বিআইবিএমের চার শিক্ষক ও বেসরকারি একটি ব্যাংকের প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি কর্মকর্তা।
গবেষণাপত্রে বলা হয়, দেশের অনেক ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। যার প্রধান কারণ প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, ঋণখেলাপি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা। ঋণ অনিয়ম, অর্থ লুটপাট ও বড় অঙ্কের ঋণ ফেরত না আসার মতো ঘটনায় ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিপত্রে চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে ব্যাংকগুলোর তথ্যপ্রযুক্তি খাতসহ দীর্ঘমেয়াদি খাতে বিনিয়োগের সক্ষমতা কমেছে। এ ছাড়া সুশাসন ও তদারকির অভাব ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল রূপান্তরের সম্ভাবনা ব্যাহত করছে।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে বলা হয়, ব্যাংক খাতে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবার বেশ অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৫ সালে ৫২ শতাংশ ব্যাংক এই সেবা দিলেও ২০২৪ সালে দেশের প্রায় সব ব্যাংক লেনদেনভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে ২০২০ সালে গ্রাহকসংখ্যা ছিল প্রায় ৩২ লাখ ৪৫ হাজার। লেনদেনের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৪৪ লাখ। ২০২৪ সালে এই সেবায় গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ। আর লেনদেনসংখ্যা বেড়ে ১৫ কোটি ছাড়িয়েছে।
কর্মশালায় পাঁচ গবেষকের পক্ষে গবেষণার এসব তথ্য উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের শিক্ষক শিহাব উদ্দিন ও ফয়সাল হাসান। প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে শিহাব উদ্দিন বলেন, নতুন প্রজন্মের গ্রাহকেরা আধুনিক লেনদেনে বেশি আগ্রহী। তাই ব্যাংকগুলোর দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তি পরিচালনব্যবস্থা থাকা জরুরি। ব্যাংক ও আর্থিক সেবায় অটোমেশনের মাধ্যমে সেবা আরও নির্ভুল করতে হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে আরেক উপস্থাপক ফয়সাল হাসান বলেন, ব্যাংকগুলোর তথ্যপ্রযুক্তি খাতে একটি বড় অংশ হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারে কিনতে ব্যয় হয়। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তা, নিরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ কম। তাই এই খাতগুলোর বাজেটের বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশে উন্নীত করা উচিত।
বিআইবিএম আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার বলেন, ‘ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামোতে আরও বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল হলেও আমাদের কার্পণ্য করা উচিত নয়। ২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরির ঘটনা মনে রেখে ভবিষ্যতের আর্থিক খাতে দুর্ঘটনা রোধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন বিআইবিএমের এ কে গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ার অধ্যাপক ফারুক এম আহমেদ, বিআইবিএমের মহাপরিচালক আবদুল হাকিম, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায়, পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
কর্মশালায় উপস্থাপিত গবেষণাপত্রে ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ১৪টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে খাতভিত্তিক বরাদ্দ বাড়ানো, নিরীক্ষা, নিরাপত্তা ও এমআইএসে পর্যাপ্ত জনবল নিশ্চিত করা, গ্রামাঞ্চলে ক্যাশ রিসাইকেল যন্ত্র বাড়ানো ও তথ্য ব্যবস্থাপনায় সুরক্ষা বাড়ানো।