নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি বাস্তবায়নে ১১ দাবি বিএসআরইএ’র

সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ প্রণয়ন করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমিতি (বিএসআরইএ)। তবে একই সাথে শুল্ক জটিলতা, বিনিয়োগে অনাস্থা এবং প্রক্রিয়াগত ধীরগতির দূর করতে ১১টি পরামর্শ দিয়ে বিদ্যমান বাধা দূর করার আহ্বান জানিয়েছে। এটা করা না হলে ২০৪০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছে তারা।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে ৫ জুলাই, শনিবার অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সমিতির পক্ষ থেকে এই উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, "দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট মোকাবেলা এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির কোনো বিকল্প নেই। আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ এবং সরকারি ভবনে সৌর প্যানেল স্থাপনের ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এই খাতের অগ্রযাত্রায় কিছু গুরুতর বাধা রয়ে গেছে, যা দূর করা জরুরি।"
বিনিয়োগে অনাস্থা ও প্রকল্প বাতিলের দাবি তুলে সংগঠনটি জানায়, সরকার সম্প্রতি ৫৫টি নতুন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এর মূল কারণ হিসেবে অতীতে ৩৭টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল হওয়াকে দায়ী করা হয়।
বিএসআরইএ’র তথ্যমতে, বাতিল হওয়া ওই প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগকারীরা প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ক্ষতির শিকার হয়েছেন, যা নতুন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র অনাস্থা তৈরি করেছে। সমিতির পক্ষ থেকে বাতিল হওয়া প্রকল্পগুলো পুনঃবিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শুল্ক কাঠামো নিয়েও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে বিএসআরইএ। এ বিষয়ে মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, "সোলার প্যানেল ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে কেজিভিত্তিক শুল্ক মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে, যা অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক। যেখানে অন্যান্য পণ্যের মূল্যায়ন হয় চালানপত্রের (Proforma Invoice) ভিত্তিতে, সেখানে আমাদের ক্ষেত্রে কেজি দরে শুল্কায়ন করায় পণ্যের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি কর দিতে হচ্ছে।"
বক্তব্যে ট্রেডারদের অতিরিক্ত ৭.৫% ট্রেড ভ্যাট দিতে হওয়ায় খরচ আরও বাড়ছে উল্লেখ করে সংগঠনটি কেজিভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি বাতিল এবং সোলার পণ্যের ওপর থেকে ট্রেড ভ্যাট প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছে। এছাড়া ইনভার্টারের শুল্ক কমানোকে স্বাগত জানালেও সোলারের মাউন্টিং স্ট্রাকচার, ডিসি ক্যাবল, কন্ট্রোলার ও ব্যাটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ওপর থেকেও শুল্ক কমানোর দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে:
নেট মিটারিং: দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা নেট মিটারিং গাইডলাইনটি দ্রুত গেজেট আকারে প্রকাশ এবং সংযোগ প্রক্রিয়া সহজ ও সময়োপযোগী করা।
রুফটপ সোলার: উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল (রুফটপ সোলার) বাস্তবায়নে কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ, অর্থায়ন কাঠামো বা তদারকি সেল নেই। এটি বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক সেল গঠনের দাবি জানানো হয়েছে।
নিম্নমানের পণ্য: আমদানি পর্যায়ে কাস্টমস ও বিএসটিআই-এর দুর্বল নজরদারির কারণে নিম্নমানের সোলার পণ্যে বাজার ছেয়ে যাচ্ছে, যা পুরো খাতের জন্য হুমকি। এটি রোধে কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়।
সবুজ কর্মসংস্থান: নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে লক্ষাধিক ‘সবুজ কর্মসংস্থান’ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় উৎপাদকদের সুরক্ষা এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সহায়ক নীতি গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
বিএসআরইএ মনে করে, উল্লিখিত বাধাগুলো দূর করে একটি স্থিতিশীল ও বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।
০৫-জুলাই/ডিজিবিটেক/আমোখা