প্রোফইলে ফিরছে লাল স্মৃতি

“জুLie মা‌নে, পালাব না ব‌লে পালাই”

১ জুলাই, ২০২৫  
১ জুলাই, ২০২৫  
“জুLie মা‌নে, পালাব না ব‌লে পালাই”

ফিরেছে জুলাই। আন্দোলনের উত্তাল এই মাস বাধা থাকেনি ক্যালেন্ডারের ৩১ দিনে। মাসটি ২০২৪ সালে রূপ নেয় ৩৬ দিনে। প্রতিটি দিন হয়ে ওঠে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দ্রোহ-বিদ্রোহের গর্জন। ছাত্র-জনতার  সেই গর্জনের টুটি চেপে ধরতে বন্ধ ১৭ জুলাই বন্ধ করে দেয়া হয় ইন্টারনেট সংযোগ। কেননা, জুলাইয়ের শুরু থেকেই  সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক প্রোফাইল ধারণ করে ‘লাল বৃত্ত’। কাভার পেজে স্থান পায় দমন-পীড়নের বিভৎসতা, বিক্ষোভ প্রতিবাদের ছবি ও নানা স্লোগান। 

এক বছর পর ফের নেটিজেনদের প্রোফাইল গুলো ফিরছে লাল বৃত্তে। টাইম লাইনে ভেসে আছে এক বছর আগের স্মৃতি। এই স্মৃতি নিয়ে জুলাই ২০২৪ এর অন্যতম যোদ্ধা শিল্পী দেবাশীষ চক্রবর্তী সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে জুলাই কোমেমোরেশন প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে দশটি পোস্টার এঁকেছেন। এই দশটি পোস্টারে ফুটে উঠবে কেন জুলাই অনিবার্য হয়ে উঠেছিল এবং জুলাইয়ে কী ঘটেছিল। জুলাই মাসজুড়ে প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে একটি করে পোস্টার প্রকাশ করার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা’র অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে।  জুলাইয়ের প্রথম পোস্টারটিতে প্রকাশ করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় মদদে গুম।  

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন এর ভেরিফায়েড ফেসবুকের ব্যানারে যুক্ত করা হয়েছে ‘রক্তাক্ত জুলাই’। প্রথম দিনের পোস্টে লেখা হয়েছে- “এই এক বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু, কিন্তু ভোলেনি জাতি তাদের আত্মত্যাগ। ভোলেনি তাদের সেই শ্লোগান, সেই চেতনা, সেই প্রতিজ্ঞা। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন গভীর শ্রদ্ধা জানায় সেই জুলাই যোদ্ধাদের, যারা আমাদের দেখিয়ে গেছে — অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই সত্যিকারের বাঁচা “ আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী রমজান আলী লিখেছেন “জুলাই এলেই স্মরণ করি—"ইন্টারনেট বন্ধ করিনি… হয়ে গেছে!"

ফেসবুকে এমন একটি ছবি শেয়ার করে মোর্শেদ জহির লিখেছেন - “যে প্রজন্ম ’৭১ দেখেনি, সেটি তাদের কাছে গৌরবময় ইতিহাস। ২০২৪ নিজের অংশীদারির ফসল। তাদের আবেগের জায়গা আলাদা হবেই। জুলাই শহীদদের শ্রদ্ধা।” 

মোহসিন বিজয় নামে একজন লিখেছেন, “জুলাই চলে এলো আবারও৷ টাইমলাইনজুড়ে জুলাইয়ের স্মৃতিচারণ করছে সবাই—ছবি, ভিডিও, ফুটেজ। যতবার সামনে পড়ছে, অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠছে চোখজোড়া। আহা, সেই নির্ঘুম রাত, বিষণ্ণতায় কাটানো জুলাইয়ের দিনগুলো!”

এভাবেই জুলাই শহীদ আবু সাঈদের সটান বুক, রিকশায় গুলিবিদ্ধ লাশের ছবি শেয়ার করছেন অনেকেই। হ্যাশট্যাগ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে #জুলাই, #JulyRevolution   #36july2024

রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু জাফরের কবরস্থান থেকে শুরু করা ৬৪ জেলাব্যাপী “জুলাই পদযাত্রা”র ভিডিও নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করছে জুলাই অভ্যূত্থানে প্রথম কাতারে থাকা আন্দোলনকারীদের নিয়ে গঠিত একটি দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।  

প্রথম প্রহরে জাতীয় শহীদ মিনারে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন উপলক্ষ্যে “আলোয় আলোয় স্মৃতি সমুজ্জ্বল” শিরোনামে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পাখির চোখে- “আলোয় আলোয় স্মৃতি সমুজ্জ্বল” শিরোনামে ছাত্রদলের জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। 

একইভাবে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ,আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠান ফেসবুক লাইভ করছে বাংলাদেশ জামাত ই ইসলামী (জামাত)।  

অপরদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোট গুলোর কোনো ভেরিফায়েড পেজ না থাকায় ২১ হাজার ফলোয়ারের বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ফেসবুক পেজে গিয়ে সেভা জুলাই নিয়ে বিশেষ কোনো কর্মসূচি প্রকাশ করা হয়নি। ৫১ হাজার অনুসারির রাষ্ট্র মেরামতের ৭ দফা প্রস্তাবের ব্যানার থাকলেও রাষ্ট্রচিন্তা ফেসবুক পেজেও জুলাই দিবস নিয়ে কোনো পোস্ট দেখা যায়নি। 

জুলাইয়ের কথা ফেসবুকে পেজে সেদিনের পত্রিকায় পাতায় প্রকাশিত খবরের ক্লিপিং প্রকাশ কারার সাথে টুকুরো টুকরো ভিডিও প্রকাশ করা হচ্ছে ঘণ্টায় ঘণ্টায়। 

অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে নিষিদ্ধ দল হিসেবে স্বীকৃত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক-এ  জুলাইয়ের প্রথম প্রহরে জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে ব্যঙ্গ করে একটি পোস্টার পোস্ট দেয়া হয়েছে। যেই পোস্টটি নিয়ে নেটিদুনিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি পাল্টা ব্যঙ্গ পোস্টার ছুড়ে দেয়া হয়েছে। পোস্টে “জুLie মানে ধোঁকা, চক্রান্তের অধ্যায় ও মিথ্যা” দাবি করা হয়। ফেসবুকে ওই পোস্টটিতে হা হা রিয়্যাক্ট দিয় নেটিজেনরা ওই পোস্টটির বাস্তবতা তুলে ধরে পাল্টাজবাব দিয়ে লিখেছেন, “বিদেশে পালাও, ভারতে পালাও হিলিকপ্টার দিয়ে পালাও” উল্লেখ করে দলের সদস্যদের ইঙ্গিত করে লেখা হয়েছে। ‘জুলাই মানেই পালাই পাLie"। 
আওয়ামী লীগের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কামাল সব বিদেশে পালাতক নেতাদের ফেসবুক প্রোফাইলে জুলাইকে ব্যঙ্গ করে জুLie লেখার প্রতিবাদে লাল জমিনে জুLie  পাLie ব্যানান দিয়ে নেটিজেনরা প্রতিবাদের ভাষায় ব্যঙ্গ করে লিখছেন “জুLie মা‌নে, পালাব না ব‌লে পালাই”। সময় যতই বাড়ছে ফেসবুকে যুক্ত হচ্ছে নতুন করে প্রতিবাদের গ্রাফিতি। 
প্রসঙ্গত, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করেছিল হাসিনা-পলক প্রশাসন। প্রথম দফায় ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় দেশজুড়ে মোবাইল ইন্টারনেটের কাভারেজ সীমিত করা হয়। ১৮ জুলাই থেকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই দিন রাত থেকে দেশজুড়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে দেশের সাধারণ নাগরিকরা ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে। কিন্ত ২৭ জুলাই তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী পলকের ‘সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করেনি। ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে’ এবং ডাটা সেন্টার পুড়িয়ে দেয়া ইন্টারনেট বন্ধ’ এমন বক্তব্যে ফুঁসে ওঠে জনতা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় মোবাইল ইন্টারনেট। ২৩ জুলাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। যদিও তার গতি ছিল ধীর। অবশ্য ইন্টারনেট চালুর কয়েক দিনের মধ্যে আবার সেটি বন্ধ করা হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তীব্রতা বাড়লে ৪ আগস্ট আবারও বন্ধ করে দেওয়া হয় সব ধরনের ইন্টারনেট। শেষমেশ ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর চালু হয় ইন্টারনেট। এরপর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন কোনো বাধা ছাড়াই নিজেদের মত প্রকাশ করছেন নাগরিকরা।