গালি দেওয়া সংবাদ উপস্থাপিকার চাকরি ফিরিয়ে দিতে হাসনাতের স্ট্যাটাস ঘিরে সরব নেটিজেনরা

১৪ মার্চ, ২০২৫  
১৪ মার্চ, ২০২৫  
গালি দেওয়া সংবাদ উপস্থাপিকার চাকরি ফিরিয়ে দিতে হাসনাতের স্ট্যাটাস ঘিরে সরব নেটিজেনরা

একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমকে গালি দেওয়ার ঘটনায় সংবাদ উপস্থাপিকাসহ তিনজনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে মর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এবার সেই সংবাদ উপস্থাপিকার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার অহ্বান জানিয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজেই।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানিয়েছে। এরপরই স্ট্যাটাসে লাইক ও লাভের পাশাপাশি হাহা রিয়্যাক্ট দিতেও দেখা গেছে। 

ফেসবুক পোস্টে হাসনাত লেখেন, ‘এখন’ টিভির সাংবাদিকদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা এই দ্বিমত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্যই আন্দোলন করেছিলাম। আপনার এই গালির স্বাধীনতার জন্যই আন্দোলন করেছিলাম। শুধু মতপ্রকাশ নয়, দ্বিমত প্রকাশও অব্যাহত থাকুক।

তবে এই স্ট্যাটাসে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নেটিজেনরা। তাদের কেউ শুধু ধন্যবাদ দিয়ে হাসনাতের উদারতাকে স্বাগত জানিয়েছেন। লিখেছেন, ‘আপনি আমাদের দেশের গর্ব’। 

ব্রাত্য রাইসু লিখেছেন, !গালি দেওয়ার ঘটনায় চাকরি হারানো এখন টিভির সাংবাদিকদের চাকরি ফিরাইয়া দিতে দাবি জানাইছেন হাসনাত আবদুল্লাহ।এইটা গুড জেশ্চার। আপনি ভাবতে পারেন, এই দাবি এনসিপি বা হাসনাতের চমক দেওয়ার রাজনীতির অংশ। পুরানো রাজনৈতিক দলগুলি থিকা তাদের দল যে আলাদা তা দেখানোর জন্যে ভবিষ্যতেও এই রকম নানান চমক দেখাইবেন তারা। চমক থিকা যদি ভাল কিছু হয়, তাইলে চমকই ভাল। মানবিক কারণের চাইতে দলরে জনপ্রিয় করার স্বার্থে চাকরি ফিরানোর দাবি জানানোটা হাসনাত ও তার দলের বেটার ডিসিশান হইছে। শুভেচ্ছা জনাব হাসনাত আবদুল্লাহ।”

 অবার অন্যরা গালি আর দ্বিমত ভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে দুষ্টের লালন না করার বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কমেন্ট ঘেটে দেখা গেছে এই পাল্লাটাই ভারী এদের মধ্যে মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, ‘দ্বিমত অর্থ গালি নয়, আপনি গালিগালাজকে উৎসাহিত করতে পারেন না।’

মোঃ মহিউদ্দিন হাসান খান লিখেছেন, “তাহলে আমরাও উরাধুরা গাইলাইতে থাকি আপনাদের। দেখি বাকস্বাধীনতা কতক্ষণ থাকে আমাদের”। 

এবি জুবায়ের লিখেছেন, “গালির স্বাধীনতা জিনিসটা আসলে কতটুকু লজিকাল ভাই? গালি দিয়ে তারা অপরাধ করেছে। সেই অপরাধের বিচার হওয়াও জরুরি। (বিচারটা যে চাকরি চলে যাওয়া-ই হতে হবে এমন না), ন্যায্য বিচার হোক৷ শুধুশুধু কাউকে গালি দিলে তার বিচার হবে না কেন? দ্বিমত পোষণ করার মানে তো আর গালি দেয়ার লেজিটিমেসি না!”

ভিভিড ওয়াদুদ লিখেছেন, “এইটা ভালো মুভ হইল না। এইটারে দিমত বলে না... এগুলো নিয়ে ভাবুন। সবাইকে সন্তুষ্টি করাও ভালো কিছু বয়ে আনে না...”

জান্নাতুন নাঈম প্রীতি লিখেছেন, “হাসনাত, এইযে প্রতিবাদ করলা তোমার বিরুদ্ধ মতের জন্য, এজন্য সাধুবাদ নাও। গালি দেয়ার স্বাধীনতাই যে বাক স্বাধীনতা সেটা নিয়ে আমরা কয়দিন আগেই না কথা বললাম?

এনসিপিকে আমরা(রাজনীতি সচেতন লেখকরা) তখনই পাত্তা দিব যখন তারা বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে, নিজেরা দেখাবে যে দ্বিমত হওয়াকে তারা এপ্রিশিয়েট করে।”
ঘটনার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট টেনে হাসনাতকে ট্যাগ করে দেয়া কমেন্টে শাহীন হাসনাত লিখেছেন, “কে গালটা দিলে সে ক্ষমা করতেই পারে। কিন্তু এসব গালি তো জুলাই বিপ্লবের বিরুদ্ধে এবং ফ্যাসিবাদের পক্ষেই উচ্চারিত। হাসনাত, জার্জিসরা ক্ষমা করলেও যাঁরা কোন নায়কোচিত তকমা ছাড়াই নিরন্তর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে তারা কিন্তু জানে এই ক্ষমা মানেই অতিমানবিকতার পাপ। গণমাধ্যমের পরতে পরতে চেতনার বরকন্দাজরা যে কোমল মিহিন খঞ্জর হাতে উদ্যত রয়েছে তা কেবলই সিরাজ হত্যায় মীরণ চরিত্র ছাড়া আর কেউনা। মুর্শিদাবাদ থেকে জিঞ্জিরা প্যালেস সবখানেই এখন পলাশীর কুশীলব।”

এসব মন্তব্য ছাপিয়ে ইলিয়াস হোছাইন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে লিখেছেন, সারজিস ভাইকে গালি দেওয়ার অপরাধে ইতিমধ্যেই "এখন টিভি" এর উপস্থাপিকার চাকরি চলে গেছে। গুড, আমরাও চাই বিচার হোক। কিন্তু আমার আল্লাহ, আল্লাহর রাসুলকে গালি দেওয়ার এতোদিন পার হয়ে গেলেও রাখাল রাহার কি কোনো বিচার হয়েছে? রাষ্ট্রীয় কোনো পদক্ষেপ তার বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছে? হয়নি। কেন হয়নি?

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যাওয়া শিশুটির জানাজায় অংশ নিতে মাগুরায় যান হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। এসময় টেলিভিশনটির লাইভ প্রচারণায় হাসনাত ও সারজিসকে নিয়ে দুই উপস্থাপকের মধ্যে কথা বলার সময় ওই নারী উপস্থাপিকা গালি দেন৷ এরই একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷ পরে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিচ্যুত করে বলে খবর ছড়ায়।