ফিনটেক উইগ্রো নিয়ে পরস্পর বিরোধী তথ্য প্রকাশ

জয়পুরহাটে প্রায় এক হাজার ক্ষুদ্র কৃষককে কৃষি উপকরণ ও প্রশিক্ষণসহায়তা দিয়েছে কৃষিভিত্তিক ফিনটেক প্ল্যাটফর্ম উইগ্রো। বিপরীতে অনুমতি ছাড়াই ওই অঞ্চলে ব্যবসায় পরিচালনা এবং জমির দলিল, স্বাক্ষর করা ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ইন্স্যুরেন্সের নামে নেয়া টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।
তবে সেখানে কৃষকদের মধ্যে অনেকেই ঋণসুবিধা নিয়ে সফলভাবে মৌসুমভিত্তিক চাষাবাদ সম্পন্ন করেছেন; বাকিরা এখনো এ প্রকল্পের অধীনে চাষাবাদ ও গবাদিপশু পালনের সঙ্গে যুক্ত বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে উইগ্রো টেকনোলজি লিমিটেড। এতে বলা হয়েছে, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের প্রায় ১৩০ কৃষক উইগ্রোর সহায়তা লাভ করেছেন উইগ্রোর সহায়তা পাওয়া ৫০ জনের বেশি কৃষক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গত সোমবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে গত দুই বছরে প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। উইগ্রোর চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) ফাইয়াজ সাফির, প্রতিষ্ঠানটির হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট আরিফ রহমান ও আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আলম ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানাগেছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের ৪০টির বেশি উপজেলায় প্রায় ১২ হাজার কৃষকের সঙ্গে কাজ করছে উইগ্রো প্ল্যাটফর্ম। এ পর্যন্ত কৃষকদের প্রায় ১ কোটি ২ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে উইগ্রো। এর মধ্যে সফল কার্যক্রমের ফলে কৃষকেরা ৭৮ লাখ ডলার পরিশোধ করে দিয়েছেন।
সূত্রমতে, ওই অনুষ্ঠানের পরদিন বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলার আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে জয়পুরহাটের ১৫৪ কৃষকের জমির দলিল, স্বাক্ষর করা ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ইন্স্যুরেন্সের নামে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে উইগ্রো টেকনোলজি লিমিটেড। গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনজুরুল আলম। ভুক্তভোগী দিলবর হোসেন, মুক্তার হোসেন প্রমুখ টাকা ফেরত পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে উইগ্রোর চিফ অপারেটিং অফিসার ফাইয়াজ সাফির গণমাধ্যমেকে বলেছেন, ‘সোহেল রানা নামে এক কর্মকর্তার কারণে গ্রাহকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এ কারণে আমরা দুঃখিত। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১৫৪ জনের টাকা, দলিলসহ যাবতীয় ডকুমেন্ট ফেরত দিয়েছি। ৩০ জুনের মধ্যে অন্য ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’
প্রতারণার প্রমাণ পাওয়ার পর সোহেল রানাকে ৭ দিনের কারাদণ্ড এবং সেই সঙ্গে সংস্থাটির কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনজুরুল আলম। তিনি জানান, ১৫৪ কৃষক দলিল, টাকা পেয়েছেন। অন্যদেরও ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সংস্থার কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত সময় প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি না নিয়ে তিন বছর ধরে জেলা সদরের বারিধারা মহল্লায় উইগ্রো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে প্রকাশ, ফিনটেক প্রতিষ্ঠানটি কৃষিঋণ দেওয়ার কথা বলে কৃষকদের কাছ থেকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর, ব্যাংক চেকের ফাঁকা পাতা, জামানত হিসেবে বাড়ি-জমির দলিল ও ইন্স্যুরেন্সের কথা বলে এক হাজারের বেশি কৃষকের কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার করে টাকা নেয়। পরে তাদের ঋণ দেওয়া হয়নি। আটকে রাখা হয়েছে স্বাক্ষরিত ফাঁকা স্ট্যাম্প, চেকের পাতা ও ইন্স্যুরেন্সের টাকা। আড়াই মাস তাদের পেছনে ঘুরে না পেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে উইগ্রো ‘বাংলাদেশ ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ডস’-এ বেষ্ট স্টার্টআপ ইনোভেশন ও কৃষি খাতে বেস্ট ইনোভেশন পুরস্কার লাভ করে এবং ২০২৪ সালে সিঙ্গাপুর ফিনটেক ফেস্টিভ্যালে উইনার হিসেবে পুরস্কার লাভ করে।