রংপুরে অকেজো পিসিআর মেশিন, করোনা পরীক্ষা বন্ধ, প্রস্তুত আইসোলেশন ওয়ার্ড

১৭ জুন, ২০২৫  
১৭ জুন, ২০২৫  
রংপুরে অকেজো  পিসিআর মেশিন, করোনা পরীক্ষা বন্ধ, প্রস্তুত আইসোলেশন ওয়ার্ড

গত তিন বছর ধরে বিকল পড়ে আছে রংপুর বিভাগের তিনটি আরটি-পিসিআর ল্যাবের মেশিন। নেই পরীক্ষার কিটও। ফলে ফের করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও বন্ধ রয়েছে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা। এতে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। সিটি করপোরেশনে গিয়ে নগরের মুন্সিপাড়ার, হনুমানতলার কয়েকজন বাসিন্দা পীরক্ষা করাতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নগরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, তারা করোনা পরীক্ষার জন্য সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে বারবার গিয়ে ফিরে আসছেন। তাদের বলা হচ্ছে, করোনা পরীক্ষার কিট না থাকায় নমুনা নেওয়া যাচ্ছে না।

তবে রোগীর পরীক্ষা শুরু না হলেও আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা। করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া করোনার নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় কিটের চাহিদা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কিট এলেই কার্যক্রম শুরু হবে।

সূত্রমতে, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আখতারুজ্জামান সই করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো চাহিদাপত্রে তিন হাজার র্য্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট কিটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও পিসিআর (করোনা পরীক্ষার মেশিন) ল্যাবের ইনচার্জ ডা. এমএ আজিজ মেডিকেল কলেজের চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন। চাহিদাপত্রে কিট, জনবল, পিপি, সার্জিক্যাল গ্লাভসসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের কথা উল্লেখ রয়েছে।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভাগের মানুষের করোনা পরীক্ষার জন্য দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি এবং রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুটিসহ তিনটি পিসিআর মেশিন রয়েছে। এর সবগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। ফলে বিভাগের আট জেলায় করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা বন্ধ আছে। কবে চালু হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

তবে দ্রুততম সময়ে এটি চালুর আশ্বাস দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক ডা. ওয়াজেদ আলী স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছৈন, ‘করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পিসিআর মেশিনগুলো সচল করার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সচল করা সম্ভব হবে।’।

তিনি জানান, ২০২২ করোনা মহামারি কেটে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন মেশিনগুলো বন্ধ থাকায় অকেজো হয়ে যায়। এজন্য বিভাগের সব জেলার সিভিল সার্জনকে নিয়ে সভা করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। করোনা প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

বিভাগের আট জেলায় জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা সূত্রে প্রকাশ, ইতিমধ্যে অনেকেই নানা উপসর্গ নিয়ে আসছেন। কিন্তু ২০২৩ সাল থেকে পিসিআর মেশিনগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এজন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাচ্ছে না। রোগী এসে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার কোনও উপায় নেই। কারণ এখনও নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা শুরু হয়নি। এমনকি পরীক্ষার কিট এখনও সরবরাহ করেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। 

সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, করোনা পরীক্ষার কিট না থাকায় তাদের কাছে আসা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে না। পরীক্ষা করাও যাচ্ছে না। কিট আসলে তারা নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার কাজ শুরু করবেন। তবে কবে নাগাদ কিট আসবে, তা বলতে পারেননি কোনও কর্মকর্তা।

সিটি করপোরেশনের মেডিক্যাল অফিসার ডা. পলাশ কুমার রায় জানিয়েছেন, আগের মতোই করোনা থেকে নিরাপদ থাকতে হাত ধোয়া ও মাস্ক পরার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ‌যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে, তাদের সতর্ক অবস্থায় চলাফেরা করতে হবে। 

এছাড়াও কিট সরবরাহ না থাকায় নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার কাজ শুরু হয়নি জানিয়ে কিট আসলেই নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা শুরু হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। তবে কবে নাগাদ কিট আসবে স্বাস্থ্য বিভাগকে তিনি এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তারিখ জানতে পারেননি। 

ইতিমধ্যে করোনা পরীক্ষার জন্য সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য শাখায় গিয়ে ফিরে এসে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।  বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জ্বর-সর্দিসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে গিয়ে পরীক্ষা করাতে পারিনি। মেডিক্যাল অফিসার বলেছেন, কিট সরবরাহ নেই। আসলে করা হবে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ কেন কিট সরবরাহ করছে না, বুঝতে পারছি না। এতে করোনা আবারও সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়বে বলে আতঙ্কে আছি আমরা।’