শিগগিরই কয়েকটি কারাগারে বসছে মোবাইল জ্যামার

কারাগারে বসেই আসামীদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ বন্ধ করতে কারাগারগুলোতে নেটওয়ার্ক জ্যামার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শিগগির কয়েকটি কারাগারে নেটওয়ার্ক জ্যামার বসানো হবে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোতাহের হোসেন।
তিনি জানিয়েছেন, যখন বন্দিরা কারাগারে আসেন তখন তাদের তল্লাশিতে অবহেলা এবং অসাধু কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতা ছাড়াও কিছু কিছু কারাগারে বাইরে থেকে ছুড়ে মেরেও কারাগারের ভেতরে জিনসপত্র সাপ্লাই দেয়া হয়। এরইমধ্যে গত নয় মাসে শুধু কেরানীগঞ্জ কারাগারে আকস্মিক তল্লাশি করে বন্দিদের কাছ থেকে এক হাজারের বেশি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
একটি গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে কারা মহাপরিদর্শক বলেছেন, উদ্ধার করা মোবাইলগুলো এত ছোট সাইজ দেখে মনে হয় শুধু কারাগারের জন্যই তৈরি। মোবাইল সংক্রান্ত ৯০ শতাংশ সমস্যা সমাধান করা হয়েছে কেরানীগঞ্জ কারাগারে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোতাহের হোসেন বলেছেন, এ বিষয়ে বিটিআরসি এবং মোবাইল অপারেটরগুলোর সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে, যাতে ওই জায়গায় নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য কারাগারগুলো লোকালয়ের কাছাকাছি হওয়ার কারণে নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ কঠিন। এজন্য কারাগারগুলোতে নেটওয়ার্ক জ্যামার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগির কয়েকটি কারাগারে নেটওয়ার্ক জ্যামার বসানো হবে।
কারা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের মোট ৬৮টি কারাগারের মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগারে মোটামুটি আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা স্থাপন করা হয়েছে। তবে ৫৫টি জেলা কারাগারে বন্দি ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির তেমন ব্যবহার নেই। এর ফলে কয়েদি বা হাজতিদের সঙ্গে কোনো অবৈধ সামগ্রী বা দ্রব্য ঢুকছে কি না, তা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগারের বাইরে কোনোটিতেই বডি বা লাগেজ স্ক্যানার নেই। এর ফলে অনেক সময় বন্দিরা পায়ুপথে মিনি মোবাইল ফোন বা মাদকদ্রব্য নিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারেন।
প্রসঙ্গত, কারাগারের অভ্যন্তরে তো বটেই, আদালতে যাওয়ার পথে কিংবা আদালত চত্বরেই নিরাপত্তা রক্ষীদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন আসামিরা ব্যবহার করে, এমন অভিযোগও আছে। অথচ আইনানুযায়ী, ডিভিশনপ্রাপ্ত সহ কারাগার থেকে কোনো বন্দিরই গোপনে মোবাইল ফোনে কথা বলা সম্পূর্ণ বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নিরাপত্তার স্বার্থে কেউ যাতে অবৈধ এ কাজ করতে না পারে, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ কারাগারগুলোতে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধকারক যন্ত্র বা জ্যামার বসানো হয়ে থাকে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, সেগুলোর অধিকাংশই অকেজো করে রাখা হয় বলে ইতঃপূর্বে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। গত বছরের নভেম্বরে খবর রটে, কারাগারে বসেই মোবাইল ফোনে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে বন্দি থাকা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খানের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডির একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। সবশেষ গত ৬ জুন ফাঁস হয়, ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর জেলা কারা কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছে এবং তোলপাড় শুরু হয়েছে। এরপর অতি গোপনীয়ভাবে তাকে ঝিনাইদহ কারাগার থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। খবরে প্রকাশ, অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।