শহর-গ্রামে এটিএম বুথে নগদ অর্থ উত্তোলনেভোগান্তি!

এবার ঈদুল আজহায় সরকারি ছুটি ১০ দিন। এ সময় দেশের সব ব্যাংকও বন্ধ রয়েছে।কিন্তু ছুটি শুরুর প্রথম দিন থেকেই এবার টাকা লেনদেনের বিকল্প মাধ্যম হচ্ছে এটিএম বুথে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহককে। দিন যত গড়াচ্ছে ভোগান্তি ততই বাড়ছে। অনেক এটিএম বুথে টাকা নেই বা সীমিত পরিমাণে আছে। ১০ হাজারের ওপর টাকা তুলতে গেলে দফায় দফায়, কিংবা এ বুথ সে বুথ করে তুলতে হচ্ছে। হর হামেশাই বুথ গুলোতে লেখা ভেসে আসছে ‘আউট অব সার্ভিস’। অন্য ব্যাংকের কার্ডে লেনদেনে সীমাবদ্ধতা, কারিগরি সমস্যায় অচল অনেক বুথে সাঁটিয়ে দেয়া হয়েছে বুথের টাকা শেষ।
গ্রাহকদের বিকল্প ব্যবস্থায় ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলো পড়ায় মহল্লায় খোলা থাকলেও এমএফএস-এ অতিরিক্ত চার্জ গুনতে হচ্ছে।
এমন অবস্থা রাজধানী ঢাকা সহ দেশজুড়েই বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। খবরে প্রকাশ, গ্রামাঞ্চলে বুথ সংকট আরো প্রকট। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত বুথগুলোয় নজরদারি দুর্বল। গত বৃহস্পতিবার থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু এটিএম বুথ বন্ধ কিংবা টাকা সংকটে অচল অবস্থায় রয়েছে। রাজধানীর মিরপুর, আদাবর, মগবাজার, ধানমন্ডি, উত্তরা-এসব এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, অনেক বুথে টাকা নেই। আবার প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে বন্ধ রয়েছে কিছু বুথ। যেসব বুথ থেকে টাকা তোলা যাচ্ছে, সেগুলোতেও সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া রয়েছে।
রাজধানীর মধুবাগ এলাকার বাসিন্দা হারুনুর রশীদ জানান, রবিবার দুপুর থেকে অন্তত চারবার তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের বিভিন্ন বুথ থেকে টাকা তোলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রতিবারই বিফল হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত টাকা না তুলেই ফিরতে হয়েছে তাকে।
মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত এক বেসরকারি ব্যাংকের বুথে গিয়ে দেখা যায়, বুথের দরজায় একটি নোটিশ ঝোলানো—‘টাকা নেই, দুঃখিত!’ সাউথইস্ট ব্যাংকের এক বুথে গিয়ে দেখা যায়, অন্য ব্যাংকের গ্রাহকরা তাদের কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলতে পারছেন না। সীমিতসংখ্যক বুথে টাকা থাকলেও, সেখানে আবার ৫ হাজার টাকার বেশি উত্তোলন সম্ভব নয়। বসুন্ধরা আবাসিকের গেটের মুখে থাকা ডাচবাংলা’র বুথেও একই দশা। ২০ হাজার টাকা তুলতে গিয়ে একজন গ্রাহকের লেগেছে ৪০ মিনিট। এ বুথ সে বুধ করে; টাকার অংক কমিয়ে কমিয়ে তুলতে হয়েছে এই অর্থ।
সরেজমিনে দেখা যায়, যেসব ব্যাংকের বুথ চালু, সেগুলোর কোনো কোনোটিতে অন্য ব্যাংকের গ্রাহকের কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলার সুযোগ বন্ধ রয়েছে। আবার যেসব ব্যাংকের বুথ থেকে অন্য ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলা যাচ্ছে সেখানেও সীমা আরোপ রয়েছে।। ফলে ছুটির এই সময়ে বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
শুধু শহরেই নয়, জেলা শহর এমনকি গ্রামাঞ্চলেও একই অবস্থা। রাজধানীর পাশাপাশি অনেক জেলাতেও ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে গ্রাহকেরা ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে জানা গেছে। নোয়াখালী, ঝিনাইদহ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ অনেক জেলায় ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথে গিয়ে গ্রাহকেরা খালি হাতে ফিরছেন। কিছু বুথে সকালবেলা টাকা রাখা হলেও দুপুর বা বিকেলের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় একমাত্র বুথটিতে টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে সেটি দুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিকাশ বা নগদের ওপর নির্ভর হতে বাধ্য হচ্ছেন। তাও আবার চার্জ বেশি হওয়ায় অনেকে বিরক্ত।
বেসরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি সফটওয়্যার জনিত সমস্যার কারণে গত মাস থেকে বিকল সোনালী ব্যাংক (পিএলসি) কুড়িগ্রাম জেলা শাখার দুটি এটিএম বুথ। বুথের একটি নিজস্ব কার্যালয় সামনে অন্যটি ডিসি অফিসের পাশে অবস্থিত। বুথ দুটি অধিকাংশ সময় কখনো বন্ধ আবার কখনো নেটওয়ার্ক সমস্যা নোটিশ দেখা যায়। ঈদের ছুটিতেও এটি ঠিক হয়নি।
এ নিয়ে একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, একটি এটিএম বুথে সর্বোচ্চ ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত রাখা যায়। ঈদের সময় টাকার চাহিদা বেশি হওয়ায় সেই টাকা দ্রুত শেষ হয়ে যায়। নিকটবর্তী শাখা থেকে টাকা সরবরাহ করা গেলেও দূরবর্তী বুথগুলোর ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ, এসব বুথ তৃতীয় পক্ষ (থার্ড পার্টি ভেন্ডর) দ্বারা পরিচালিত হয়। ছুটির সময় তারা অনেক সময় সঠিক সময়ে টাকা রিফিল করতে পারে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১২ হাজার ৯৪৬টি এটিএম বুথ এবং ৭ হাজার ১২টি ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম) রয়েছে। ঈদ বা অন্যান্য উৎসবের সময়ে এসব বুথে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত টাকা রিফিল না হলে গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ে।