নগদ-এর অনিয়ম তদন্তে যৌথ ফরেনসিকের নির্দেশ

ডাক বিভাগের মালিকানাধীন মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা নগদ থেকে ২ মাসে অন্তত দেড়শ’ কোটি টাকা সরানোর অভিযোগ তদন্তে ‘যৌথ ফরেনসিক’ করতে যাচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ। ভুয়া বিল ভাউচারে টাকা উত্তোলন, ডাটাবেইজ থেকে তথ্য মুছে ফেলা, গণছাঁটাই, ইভেন্ট দেখিয়ে বিল তোলা, মেইনটেন্যান্স কোম্পানির বকেয়া দেখিয়ে এই অর্থ নগদ থেকে সরানোর অভিযোগ উঠলেও এর বিস্তারিত এখনো অজানা।
তাই পুলেশের তদন্ত সংস্থা সিআইডি, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেনিক বিভাগ এবং আইসিটি বিভাগের অধীন সিসিএ ফরেনসিক দলের যৌথ উদ্যোগে নগদে ব্যবহৃত ডিভাইসের নিবড় ফরেনসিক শুরু করতে সদ্য নিযুক্ত নগদের সিইও আবু তালেবের নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের বোর্ডকে নির্দেশনা দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেছেন, সম্প্রতি নগদ লি. এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শ্যামল বি দাস ডাক বিভাগের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করে নিজ দায়িত্ব নগদ এর মালিকানা ও পরিচালনা পদ্ধতি এবং অভ্যন্তরীণ বর্তমান সকল শেয়ার-সহ অপারেশনাল কার্যক্রমের দায় দায়িত্ব ডাক অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর এটিকে সুরক্ষায় আমরা এর নগদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়েছি। টাকা সরানোর অভিযোগ পাওয়ার পর আমি নগদের কাছে পরিচালনা ব্যয় ও যাবতীয় বিলসহ ২ মাসের হিসাব জানাতে চেয়েছিলাম। তখন জানতে পারি সব মিলিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে ওঠানো হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোম্পানির পরিচালনা ব্যয়, বেতন-ভাতা সবই রয়েছে। তাই অভিযোগ ওঠা দেড় শো কোটি’র অংক আমি বুঝতে পারছি না। তাই কোনো একক সংস্থা নয়; নতুন সিইওকে ত্রিপাক্ষিক ফরেন্সিক করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।
এছাড়াও নতুন ভারপ্রাপ্ত সিইও'কে প্রতিষ্ঠানে শৃংখলা আনতে, ফায়ার ও বদলি করা কর্মকর্তাদের স্বপদে ফেরাতে এবং ঈদের আগে বেতন ও বোনাস প্রদান এবং প্রায় ৪ বছর ধরে বন্ধ থাকা ফিচার আপগ্রেড, সফটওয়ার আপগ্রেডের নির্দেশনা দিয়েছেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
এ নিয়ে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি নগদ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। এতে তিনি লিখেছেন, মূল লাইসেন্স ধারী হিসেবে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ তার দায়িত্ব পালন করেছে বলে আমি মনে করি এবং নগদ পরিচালনায় বাংলাদেশ বাংকের বিশেষজ্ঞ দেশের সাথে নিয়ে এগিয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এবং চলমান ফরেন্সিক তদন্তে সহযোগীতার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নগদের সকল অনিয়ম তদন্তে আইন শৃংখলা বাহিনী কাজ করছে এবং সিআইডিকেও বিষয়াদি সার্বিকভাবে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৯ মে ডাক বিভাগ নিযুক্ত নতুন সিইও বলেছেন, তিনি মিশুক ও শাফায়ত সহ বাংলাদেশ ব্যাংককের দায়েরকৃত মামলার আসামীদের ইমেইল একাউন্ট ব্লক করেছেন। আশা করা যায় নগদ থেকে অতি দ্রুত মানি লন্ডারিং, জুয়া, জালিয়াতির চক্রকে বের করে এখানে শৃংখলা ফেরানো সম্ভব হবে।
পোস্টে নগদ ডেপুটি সিইও মুয়ীজ নাসনিম ত্বকি বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগ বিষয়ে ফয়েজ নিজের অবস্থানও স্পষ্ট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মুইজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকের পরে অনুরোধ করা হয়েছিলো। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন মামলা না থাকায় পারে তাকে ছেড়ে দেয়। তখন ছাড়ার আগে মুচলেকা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়। ফলে নগদের সাবেক লোকেদের কোনো হেল্প করবে না এই মর্মে মুচলেকা দেয় মুইজ। তবে সিআইডি তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। নতুন কোনো অনিয়ম প্রমাণ হলে তাকে গ্রেফতারের অনুরোধ করা হয়েছে।
সূত্রমতে, ব্যাপক অস্থিরতার পরে ২৭ মে নগদ কর্তৃপক্ষ মূল লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান ডাকবিভাগকে পরিচালনা দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়। ওই দিনই প্রথম বৈঠকে নগদ লিমিটেডে স্থিতিশীলতা ও আর্থিক স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নতুন কমিটি।