জুলাইয়ে আসছে এআই নীতিমালা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ও নৈতিক উন্নয়ন ও ব্যবহারের জন্য দিকনির্দেশনা নিয়ে আগামী জুলাই নাগাদ জারি হতে পারে জাতীয় এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) নীতিমালা। নীতিমালার খসড়া বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। আগামী ২১ ও ২২ জুন রাজধানীর সেনাপ্রাঙ্গণ ভেন্যুতে অনুষ্ঠিতব্য বিপিও সামিটের সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দিয়েছিলেন তিনি।
এরপর খসড়ার অগ্রগতি বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের এআই নীতিমালার খসড়ার কাজ শুরু হয়েছে বেশ আগেই। আমরা আশা করছি, উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর এটা জুলাই নাগাদ অনবোর্ড (জারি) হয়ে যাবে। জুনে হয়তো উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন হয়ে যাবে।’
একইভাবে নীতিমালার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, নীতিমালা নিয়ে কাজ চলছে। শিগগির চূড়ান্ত হবে।
এআইয়ের অপব্যবহারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হ্যাকিং, স্প্যাম ই-মেইলের মতো ঝুঁকিকে আমলে নিয়ে নীতিমালার খসড়ায় ৩.৬ ধারায় (‘মানব-কেন্দ্রিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’)-তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহার পরিচালিত হবে আইনশৃঙ্খলা, মানবাধিকার, মর্যাদা, মূল্যবোধ এবং পছন্দকে সমুন্নত রাখার মাধ্যমে। যেখানে প্রয়োজন, সেখানে মানুষের হস্তক্ষেপ ও তত্ত্বাবধানের সুযোগ রাখা হবে। পাশাপাশি ৩.২ ধারায় (‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি’) নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, নীতিমালাটি ডেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়া ব্যাখ্যাযোগ্য হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিনিয়োগ ও অর্থায়নের জন্য একটি বাস্তবায়ন পরিকল্পনার সুযোগ রেখে নীতিমালার ৪.৬ ধারাতে (‘অর্থ, বাণিজ্য ও অর্থনীতি’) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত প্রভাব মূল্যায়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া ৫ নম্বর অধ্যায়, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতি বাস্তবায়ন পদ্ধতি’ অংশে প্রাতিষ্ঠানিক, আইনি ও নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর ৫.২.২ ধারায় ‘আইনি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো’ অংশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিশাস্ত্রসংক্রান্ত দিকনির্দেশনা ও নীতিমালা সংযোজনের লক্ষ্যে জাতীয় কৌশল হালনাগাদের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ রয়েছে।
নীতিমালার ৭ নম্বর অধ্যায় ‘নীতি পর্যালোচনা’-তে উল্লেখ করা হয়েছে যে জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা প্রতি তিন বছর অন্তর নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় অংশীজনদের অংশগ্রহণ একটি মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত হবে।
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মিলে গত এপ্রিলে ‘বাংলাদেশ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’-এর খসড়া তৈরি করেছে ইউনেসকো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এটুআই, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং ইউএনডিপির সমন্বয়ে এই খসড়া তৈরি করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা, ২০২৪ এবং জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশল (২০১৯-২৪), দুটোই খসড়া আকারে রয়েছে। খসড়া নীতিমালাটি ইউনেসকোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিসংক্রান্ত সুপারিশের মূল মূল্যবোধ ও নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে সাম্প্রতিক শাসনকাঠামোগত পরিবর্তনগুলো প্রতিফলিত করতে নীতিমালাটি হালনাগাদ করা গুরুত্বপূর্ণ; যাতে বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় থাকে।