বিচ্ছিন্ন ডিজিটাল আইল্যান্ডকে যুক্ত করছে সরকার
উদ্যোক্তা ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি করবে ‘নাগরিক সেবা’

জিটাল পদ্ধতিতে জনগণের ভূমি সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, স্বচ্ছ, দ্রুত ও দুর্নীতিমুক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখা এবং নতুন প্রযুক্তিনির্ভর সেবার সঙ্গে জনগণের সরাসরি পরিচয় ঘটানোর লক্ষ্যে দেশজুড়ে চলছে তিন দিন ব্যাপী ভূমি মেলা।
রবিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ভূমি ভবনেমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভূমি মন্ত্রণালয়য়ের কর্মরতদের ডিজিটাল জরিপের প্রশিক্ষণ কোর্স মডিউল ‘রিডিজাইন’ করতে ভূমি মহাপরিচালককে নির্দেশনা দিয়েছেন ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
‘ডিজিটাল রূপান্তর সর্বরোগের মহৌষধ নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আমি দেখছি, আমরা অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে ন্যয্যতা দিতে পারছি না। এর জন্য ডিজিটাল ব্যপারটা যে দায়ী, তা না। এখানে দায়ি কিন্তু আমরা যেসব আইন কানুন আরোপ করে রেখেছি। এই যেমন- যারা জরিপ করেছেন সেখানে প্রকৃত মালিকের নাম লেখেননি। অন্য একজনের নাম লিখে রেখেছেন। আমাদের আইন অনুযায়ী, কালেক্টরের কেবল ক্লারিকাল মিসটেক ঠিক করার সুযোগ থাকে। বাকিটা সিভিল কোর্টে মামলা করে আনতে হয়। এই সমস্যা ফ্লাট বাড়ীতে বেশি। নাম জারি ও খাজনা দেয়ার পরও সমস্যায় পড়তে হয়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের ব্যক্তিদের প্রকৃত অবস্থা অনুধাবনে ভূমি মন্ত্রণালয় দুর্নীতির প্রথম ধাপে রয়েছে স্বীকার করে উপদেষ্টা বলেন, এই মন্ত্রণালয়ের যথেষ্ট ডিজিটাল উন্নতে হয়েছে- তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এটি সর্ব রোগের মহৌষধ না। আমাদের অনেকগুলো রোগ আছে যেটা ডিজিটালি সমাধান হবে না। এই ডিজিটাল সেবার পেছনে যারা কাজ করছেন সেই মানুষ ভুল করলে কিংবা অন্য কিছু করলে সেটা রয়েই যাবে।
তাই মাঠকর্মীদের প্রশিক্ষণ কোর্স নতুন করে ঢেলে সাজানোর নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেছেন, আগামী এক মাস পর মেশিনের বিপরীতে কাজ করা ব্যক্তিরা কতটা এগিয়েছে তা দেখবো। পাশাপাশি এসিল্যান্ডের অনেকেই সেটেলমেন্ট ট্রেনিং নেন নি। এ পর্যন্ত দুইটি কোর্স সনদ বিতরণ থেকে দেখেছি, এখানে প্রশাসনের ৫০ শতাংশ আছে। কিন্তু বিচারিক বিভাগের সিংহভাগই যোগ দেন। তাই আগামীতে প্রশিক্ষণ নেয়া ছাড়া কাউকেই প্রশাসনে নিয়োগ দেয়া হবে না। অসুখ না জানলে দাওয়ায়ই দেয়া সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ‘নাগরিক সেবা’ প্লাটফর্ম দিয়ে আউটসোর্স উদ্যোক্তা ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।
বাংলাদেশের সেবার ডিজিটাল রূপান্তরকে সরকার দুই ভাবে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়গুলো বিভিন্ন বিভাগের নিজস্ব প্রসেসে ডিজিটাল রূপান্তর করবে। পাশাপাশি বাড়তি কোনো রিসোর্স বা ফান্ড বরাদ্দ না করেই একটি একক প্লাটফর্ম ‘নাগরিক সেবা’ এর অধীনে আনতে কাজ করছে আইসিটি বিভাগ। এর মাধ্যমে আমরা মন্ত্রণালয় ও নাগরিক সেবাদাতাদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা তৈরি করতে চাই। এর মাধ্যমে আমাদের কর্মকর্তা এবং উদ্যোক্তোদের মধ্যে একটি সুস্থ ও মিনিংফুল প্রতিযোগিতা তৈরি করতে চাই। দুই জায়গাতেই র্যাংকিং করা হবে। র্যাংকিয়ে যারা পিছিয়ে থাকবে তাদের টার্মিনেট করা হবে।
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ডিজিটাল সাইলোর মধ্যে ‘ডিজিটাল রূপান্তর’ প্রক্রিয়ায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’এর নামে একটি ‘ কিছু ডিজিটাল আইল্যান্ড’ গড়ে তোলা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, আমরা এখন এই আইল্যান্ডগুলোর মধ্যে ইন্টার কানেক্টিভিটি গড়ে তুলছি। বিচ্ছিন্ন সেবাগুলোকে অন্তঃসংযোগের মাধ্যমে এক জায়গায় নিয়ে আসছি। এতে করে একজন নাগরিককে ৫৭টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগেরে কয়েকডজন সেবার জন্য কয়েক হাজার ওয়েব সাইটে যেতে না হয়।
ফয়েজ বলেন, নাগরিক সেবা করছে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে। আর আমাদের ল্যান্ড সার্ভিসের মতো সিঙ্গেল গেটওয়েগুলো করছে অন্তঃমন্ত্রণালয়ের কাজ। এ দুয়ের সমন্বয়ে আমাদের ডিজিটাল রূপান্তর গতি পাবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী জানালেন, এর মাধ্যমে খতিয়ান, দাখিলার ছবি তোলার ঝামেলা কমিয়ে এপিআই কল করে অন্য একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় সনাক্ত করা হবে। সনাক্ত হওয়া অ্যাকাউন্ট থেকে লগইন করে যেই সিস্টেমে ডক্যুমেন্ট রয়েছে সেখান থেকে ডিজিটালি পুল করে আনবো। ব্যক্তিকে আর ছবি তুলে পাঠাতে হবে না।
সভাপতির বক্তব্যে দেশব্যাপী ভূমি উন্নয়ন কর শতভাগ অনলাইনে আদায়ের ফলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে মন্তব্য করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে অনলাইনে প্রতি মাসে প্রায় ৫ লাখ নামজারি মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। দেশের ৫১৬টি উপজেলা ও সার্কেল ভূমি অফিস এবং ৩ হাজার ৪৬৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই-নামজারি চালু হয়েছে।
তিনি জানান, এই সিস্টেমে গত বছরের জুলাই থেকে গত ১৫ মে পর্যন্ত প্রায় ২৯০ কোটি ২২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা এবং অনলাইন খতিয়ান বাবদ প্রতিমাসে গড়ে ৩ লাখ ২১ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে। বর্তমানে ৬ কোটি ৫০ লাখের অধিক খতিয়ান অনলাইনে রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ হোল্ডিং ডাটা ম্যানুয়াল্ থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে। নাগরিককে অনলাইনে দাখিলা প্রদান করা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ। সার্ভারসহ অন্যান্য ব্যবস্থা সচল থাকলে দিনে (১০ থেকে ১২ কোটি টাকা) ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা সম্ভব।
ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান এজেএম সালাউদ্দিন নাগরী, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহম্মদ ইব্রাহিম, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।