অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা নিয়ে ভুল প্রশ্ন উত্থাপন

সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিমকোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা দেয়নি বলে নিষিদ্ধ ঘোষিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দাবি করা হয়েছে। তবে দলটির সভাপতির ছেলের শেয়ার করা এই তথ্যটি গুজব বলে অভিহিত করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর ফ্যাক্ট চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আইএসপিআর থেকে প্রকাশিত সেনানিবাসে আশ্রয়গ্রহণকারীদের নামের তালিকা শেয়ার করে এই গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে।
তবে দলটির ভেরিফায়েড পেজের পরিবর্তে সুশান্ত দাশ গুপ্ত নামের একটি ভেরিফায়েড প্রোফাইলের অপতথ্য শেয়ার করে বাংলাফ্যাক্ট বলছে, বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত অ্যাক্টিভিস্টরা গুজব ছড়াচ্ছে।
তথ্য-উপাত্ত ও বিশ্লেষণ তুলে ধরে অনুসন্ধানী দলটি শনিবার জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সেনানিবাসের অভ্যন্তরে প্রাণ রক্ষার্থে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে সেনাবাহিনী। সেই তালিকার ১৭ নং-য়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং ১৮ নং-য়ে বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিমের নাম রয়েছে।
তালিকা প্রকাশের পর আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত অ্যাক্টিভিস্টরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করেন- ‘৫ আগস্টের পর প্রধান বিচারপতি ছিলেন ক্যান্টনমেন্টে। তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে বলেছিলো সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে সূপ্রীম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে এসেছে, সেই দাবি পুরোটাই মিথ্যা। এটি সাজানো ছিলো।’ বিষয়টি সত্য নয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এক ভার্চুয়াল শুনানিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পক্ষে বৈধতা দেন ও রুলিং ইস্যু করেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ঘণ্টাখানেক শুনানি শেষে ১৭ পৃষ্ঠার রুলিং ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পক্ষে মত দেন। ভবিষ্যতে যাতে এই অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে, তাই এ বৈধতা দেওয়া হয়। শুনানিতে নবনিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান অংশ নেন। আপিল বিভাগ সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মতামত দিয়ে বলেন, সংসদ না থাকা অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা যেতে পারে প্রধান উপদেষ্টা ও কয়েকজন উপদেষ্টা নিয়ে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আপিল বিভাগের এই মতামত পাওয়ার পর উপদেষ্টাদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন (যুগান্তর)।
ফলে আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত অ্যাক্টিভিস্টরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে দাবি করছেন তা সত্য নয়। কারণ, রুলিং ইস্যু ও সরকারকে বৈধতা দেওয়ার বিষয় ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে হয়েছে, তিনি সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না। সুতরাং সেনানিবাস থেকে ভার্চুয়াল মিটিংয়ে যুক্ত হয়ে রুলিং ইস্যু করা সম্ভব।
তবে গত ১০ আগস্ট সকালে আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগের সকল বিচারপতির অংশগ্রহণে ফুলকোর্ট সভা ডেকেছিলেন ওবায়দুল হাসান। এ সিদ্ধান্তকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ আখ্যা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিবাদ করে এবং হাইকোর্ট ঘেরাও করে। পরে আল্টিমেটামের মুখে সভা বাতিল করে পদত্যাগ করেছেন ওবায়দুল হাসান (বিবিসি)।
অর্থাৎ তিনি (ওবায়দুল হাসান) ১০ আগস্টও প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন এবং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ফলে ৫ আগস্টের পর সেনানিবাসে থাকার ফলে তিনি রুলিং দিতে পারেনি, এই দাবি সত্য নয়।