তিন স্তরে ডিজিটাল অ্যাক্সেসিবিলিটি সংস্থানের উদ্যোগ
পোর্টাল ও অ্যাপে ডিজিটাল এক্সেসিবিলিটি নিশ্চিতের আহ্বান

অনলাইন পোর্টালে ডিজিটাল এক্সেসিবিলিটি ফিচার সংযুক্তের আহ্বান জানিয়ে এবছর বাংলাদেশে পালিত হলো বৈশ্বিক অভিগম্যতা সচেতনতা দিবস (গ্লোবাল অ্যাক্সেসিবিলিটি অ্যাওয়ারনেস ডে - GAAD)। বৃহস্পতিবার ডিজিটাল সেবা, শিক্ষা উপকরণ, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ, ডিজিটাল কনটেন্ট প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীবান্ধব বৈশিষ্ট্য যুক্তের ওপর এই তাগাদা দেয়া হয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায়।
এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) এবং ফ্রেন্ডশিপ এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল এবং ফ্রেন্ডশিপের ইনক্লুসিভ সিটিজেনশিপ সেক্টরের ঊর্ধ্বতন পরিচালক আয়েশা তাসিন খান।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপার্সন মনসুর আহমেদ চৌধুরী, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গুরুতর আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ।
বক্তব্যে তিনি সরকারি ও বেসরকারি সকল ডিজিটাল সেবা প্রতিবন্ধী-ব্যক্তিবান্ধব করার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সকলকে অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব এবং এটুআই প্রোগ্রামের যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এটুআই-এর হেড অব প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট আবদুল্লাহ আল ফাহিম।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এবং বিশেষজ্ঞরা ওয়েব বা ই-সেবার অভিগম্যতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদে উদ্দেশ্যে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “আমরা ‘ন্যাশনাল ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন স্ট্র্যাটেজি এবং আইসিটি রিফর্ম রোডম্যাপ-এ ডিজিটাল অভিগম্যতাকে সুস্পষ্টভাবে স্থান দিয়েছি, যা সরকারি নীতির সঙ্গে প্রযুক্তির সমন্বয়ের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। পাশাপাশি আমরা ইতোমধ্যে প্রযুক্তিগত মানদণ্ড, সিকিউরিটি এবং ইনক্লুসিভ ডিজাইন—এই তিনটি স্তরে ডিজিটাল অ্যাক্সেসিবিলিটির সংস্থান নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।“
এসময় এটুআই-এর ডিজিটাল এক্সেসিবিলিটি উদ্ভাবনগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পরা জনপদের কাছে পোঁছে দিতে আহবান জানান তিনি।
এছাড়াও গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “গণমাধ্যমের উচিত তাদের অনলাইন পোর্টালগুলোতে ডিজিটাল এক্সেসিবিলিটি ফিচার সংযুক্ত করা। এর জন্য নতুন সিস্টেম না তৈরী করেই খুবই সহজেই এই সেবাটি সংযোজন করা যায়।“
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ, যেখানে সকল নাগরিক, বিশেষত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা, সমানভাবে সকল ডিজিটাল সেবা ব্যবহার করতে পারেন। আর সেই লক্ষ্যেই আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।“
স্বাগত বক্তব্যে এটুআই-এর সেন্টার অফ ইনোভেশন ক্লাস্টারের প্রধান নাহিদ আলম এটুআই-এর ডিজিটাল অ্যাক্সেসিবিলিটি কার্যক্রম এবং প্রতিবন্ধীবান্ধব উদ্ভাবনগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা তুলে ধরেন। তিনি উপস্থিত অংশীজনদের ডিজিটাল অ্যাক্সেসিবিলিটি নিয়ে এটুআই এর সাথে যৌথভাবে আরো বৃহৎ পরিসরে কাজ করার আহ্বান জানান।
দিবসটি উপলক্ষে অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এ বছর সম্মাননা পেয়েছে গ্রামীণফোন এর সাইনলাইন (বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের জন্য ইশারা ভাষা অনলাইন কাস্টমার সার্ভিস), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড - এনসিটিবি (প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিমিডিয়া টকিং বই) এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ (প্রতিবন্ধীবান্ধব ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা চালু করার জন্য 'সেলফিন' অ্যাপ)।
আয়েশা তাসিন খান উল্লেখ করেন, “ডিজিটাল দুনিয়া সবার জন্য ব্যবহারযোগ্য হতে হবে। কারণ যারা এটি ব্যবহার করতে পারে না, তারা বাস্তব জীবনেও অনেক পিছিয়ে পড়ে। এই গ্লোবাল অ্যাক্সেসিবিলিটি অ্যাওয়ারনেস ডে-তে আসুন শুধু সচেতন না থেকে কাজে এগিয়ে আসি; যেন বাংলাদেশে সবার জন্য অভিগম্যতা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়।“
প্রসঙ্গত, ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছর মে মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় বৈশ্বিক অভিগম্যতা সচেতনতা দিবস। এই দিবসের মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বের এক বিলিয়নেরও বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করা। এটুআই বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি উদ্যোগ, যারা বিশেষভাবে প্রতিবন্ধীদের ডিজিটাল অ্যাক্সেসিবিলিটি নিশ্চিত করতে কাজ করছে।