ইন্টারনেটের দাম না কমালে কঠোর হবে সরকার

তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশষ করে ফ্রিল্যান্সার ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কম। মেট্রপলিটন থেকে পিছিয়ে গ্রাম। সমাজের পরতে পরতে থাকা বৈষম্য ঘুচে দেয়ার নিরিখে এবার গত এক বছরের কৃতী তরুণদের নিয়ে ১৭ মে বিশ্ব টেলিকম ও তথ্যসংঘ দিবস পালন করবে সরকার। সম্মেলনের খরচ কমিয়ে দিবসটির মূল অনুষ্ঠান বিটিআরসি প্রাঙ্গনে করা হচ্ছে।
দিবসটি পালন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিটিআরসিতে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জুনে নতুন লাইসেন্স নীতিমালা এবং আগামী ১ জুলাই থেকে ইন্টারনেটের দাম কমানোর পথে বুক বিল্ডিং বাধা দূর করা হবে। আর দাম না কমালে সেবার মান, অমিমাংসিত বকেয়া পাওনা ও প্রদত্ত সুবিধা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি পূর্ণর্বিবেচনা করা হবে। দেয়া হবে নতুন ডিটিএইচ লাইসেন্স। একই সঙ্গে বুধবার ৪০ মিনিট নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্নতার কারণ জানতে বিটিআরসি গ্রামীনফোনকে শোকজ করেছে বলেও জানানো হয়।
স্টারলিংকের মতো স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদানকারী আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী জানিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, ‘আমরা এনজিএসও (বাংলাদেশে নন-জিওস্টেশনারি অরবিট) গাইডলাইন করেছি। এর আওতায় স্টারলিংক বাংলাদেশে কাজ শুরু করেছে। স্টারলিংকের মতো আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করছে।’
সম্মেলনে মুখোরচক প্রকল্প থেকে বেরিয়ে সরকার ব্যয় কমিয়ে এরই মাধ্যমে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল ও খুলনা ক্যাবল কোম্পানি লাভবান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।
তিনি বলেছেন, আমরা ক্ষতিতে থাকা ৬টি টেলিকম প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করা হচ্ছে। এনজিএসও লাইসেন্স দেয়ার পর স্টারলিংক বিএসসিসিএল ২ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথ নিচ্ছে। তিন মাসের মধ্যে তাদের প্রবিদ্ধি দ্বিগুণ হয়েছে। নতুন বাজেট না করে বিদ্যমান প্রকল্পকে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবসের অনুষ্ঠান বিগত সরকার ‘এ’ ক্যাটাগরি থেকে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে নিয়ে এসেছিল। এটা আবারও ‘এ’ ক্যাটাগরিতে নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে জ্ঞানের বা যোগাযোগের ঘাটতি থাকলেও দায়িত্ব ও উদ্যোগ বাস্তবায়নে নিজেদের নিষ্ঠার কথা ব্যক্ত করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়ব।
ঘরে ও টাওয়ারে টেলকো ফাইবার পৌঁছে দেয়া, মুঠোফোন থেকে সরকারি সেবা গ্রহণে অ্যাপে আস্থার ঘাটতি দূর করতে জুনের প্রথম ভাগেই নতুন লাইসেন্স নীতিমালা পাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অপারেটরগুলো ইন্টারনেটের দাম না কমালে সরকার পদক্ষেপ নেবে প্রশ্নের জবাবে ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, ‘দাম কমানোর পর্যাপ্ত রেগুলেটরি ও বাস্তবিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্টেকহোল্ডারেরা পার্টিসিপেট করেছেন। যাঁরা এখনো পার্টিসিপেট করেননি, তাঁদের পার্টিসিপেট করা উচিত। আর তারা যদি আমাদের সঙ্গে কো-অপারেট না করেন, তাহলে তাদের সঙ্গে আমাদের যে দ্বিপক্ষীয় নেগোসিয়েশনগুলো আছে, সেগুলো আমরা আলোচনার টেবিলে আনব। সেখানে আনসেটেল্ড ডিউ (অনিষ্পন্ন দেনা) আছে, সেগুলো আলোচনায় চলে আসবে এবং তাদের পারফরম্যান্সও আলোচনার টেবিলে আসবে।’
ফয়েজ আহমদ জানান, নারী- পুরুষ এবং শহর ও গ্রামে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েছে। এমনকি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের সুযোগ সমানভাবে পৌঁছেনি। তিনি বলেন, ‘ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন হয়েছে, বেসরকারি পর্যায়ের বাংলা মাধ্যমের কিছু কিছু স্কুলেও ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, কিন্তু গ্রামীণ অঞ্চলের মাদ্রাসাগুলো, বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসায় ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের সুফল পৌঁছায়নি।’
অপর প্রশ্নের জবজবে বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী বলেছেন, আমরা বাজারকে ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে চাই। প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই বাজার দাম প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। স্টারলিংক এখনো প্রাইসিং আবেদন করেনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবসের অনুষ্ঠান বিগত সরকার ‘এ’ ক্যাটাগরি থেকে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে নিয়ে এসেছিল। এটা আবারও ‘এ’ ক্যাটাগরিতে নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে টেলিকম মন্ত্রণালয়ের রুটিন দায়িত্বে থাকা সচিব মোঃ জহিরুল ইসলাম ও আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শীষ হায়দার জানান, আসছে অর্থ বছরে আইসিটি খাতের বাজেট কমবে। গতবছর উন্নয়ন বাজেট ৪৫৩ কোটি থাকলেও এ বছর তা কমিয়ে ৪০৪ কোটি টাকায় কমিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, এবছর এপ্রিলে আইটিইউ দিবস উদযাপন না হলেও আগামী বছর থেকে দিবসটি পালনে সতর্ক থাকবো।
এসময় আগামী বছরে টেলিকম দিবসকে ক শ্রেণীতে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। টেলিকম সচিব মোঃ জহিরুল ইসলাম। এ বছর সরাসরি বিভাগ বা জেলা পর্যায়ে দিবসটি পালন না হলেও ‘মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে হ্যাকাথন প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে সবাইকে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।