কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে প্রবেশের ঘোষণা কুয়েট শিক্ষার্থীদের

১৩ এপ্রিল, ২০২৫  
১৩ এপ্রিল, ২০২৫  
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে প্রবেশের ঘোষণা কুয়েট শিক্ষার্থীদের

কর্তৃপক্ষের নিষেধ উপেক্ষা করে বন্ধ থাকা ক্যাম্পাসে রবিবার  (১৩ এপ্রিল) দুপুর ২টায় প্রবেশের ঘোষণা দিয়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা।   কুয়েট শিক্ষার্থীদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ কুয়েট-১৯ পেজ থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়াও কুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে রবিবার ‘লং মার্চ টু কুয়েট’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা। শনিবার রাতে খুবি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফেসবুক পেজে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

ঘটনার প্রায় ২ মাস পর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়েরের পর এই ঘোষণা এলো। নগরীর মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার মো. হোচেন আলী নামে এক ভুক্তভোগী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলাটি করেন। আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে খানজাহান আলী থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত মামলায় কুয়েটের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক, জাহিদুর, ওবাইদুল্লাহ, মোহন, গালিব রাহাত, তানভীর মাহিন, রায়হান, শেখ মুজাহিদ, সাজ্জাদ ফরহাদ, হিমেল, শোভন, ইছা আনছারী, আবু হাসান খালিদ, ইয়াছিন রোওয়ান, ফজলে রাব্বি, জাহিদুল ইসলাম নায়েল, সাফতি আনছারী, আব্দুর রাহিম মৃধা, আজমাইন ইসরাক অর্নব, মুজাহিদ, মাহাদি হাসান ও অভি ছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১৫/২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে শিক্ষার্থীরা গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোববার দুপুর ২টায় বন্ধ থাকা কুয়েট ক্যাম্পাসে ঢুকে হলে ওঠার ঘোষণা দিয়ে আসছেন। তা ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাধিক সভা, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি, বিজ্ঞপ্তি জারি ও অভিভাবকদের মোবাইলে এসএমএস দিয়ে শিক্ষার্থীদের কুয়েটে না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ও হলে প্রবেশের এই ঘোষণায়  জবাবে কর্তৃপক্ষ তাদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়ে ছাত্রদের প্রবেশ ঠেকাতে কুয়েটে প্রবেশের প্রধান ফটক এবং আইটি পার্কের গেটে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ নিয়ে কুয়েটে উত্তেজনা বিরাজ করছে। 

তবে তা ‍উপেক্ষা করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেছেন, প্রায় দেড় মাস হল বন্ধ থাকায় লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেকের টিউশনিসহ আয়ের উৎস নষ্ট হচ্ছে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে একসঙ্গে ক্যাম্পাসে ঢুকবেন। তারা যাতে ক্যাম্পাসে ফিরতে না পারেন সেজন্য কুয়েট কর্তৃপক্ষ নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। এমনকি কুয়েট প্রশাসন বাইরের একজনকে উসকানি দিয়ে তাকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে।

কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে বন্ধ থাকা ক্যাম্পাসে না ফেরে সেজন্য শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বিভিন্নভাবে বোঝানো হয়েছে। বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ কমিশনারকেও অবহিত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (নর্থ) আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, কুয়েটের পরিস্থিতি বিষয়ে তারা অবগত আছেন। ক্যাম্পাসের ২টি গেটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তারকে ছাত্র কল্যাণের পরিচালক পদে নিয়োগ নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার (১২ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের নির্দেশক্রমে রেজিস্টার প্রকৌশলী মো. আনিছুর রহমান ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ অনুযায়ী আগামী ২০ এপ্রিল থেকে তিনি এই পদে আসীন হবেন। আর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এর ছাত্র কল্যাণ পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদকে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেলেন। 

ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কমিটির সভাপতি প্রফেসর আবু ইউসুফ জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে সার্বিক দিক বিবেচনা করে। শিক্ষার্থীদের প্রবেশ ঠেকাতে নিরাপত্তা জোরদার কিংবা পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি। শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা করলে আইডেন্টি কার্ড প্রদর্শন করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে। তবে আবাসিক হলগুলো খোলার সিদ্ধান্ত না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের হলে থাকার সুযোগ নেই। ১১ এপ্রিল ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট থানায় দুই গাড়ি পুলিশ চাওয়া হয়েছিলো।

প্রসঙ্গত, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়।  এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এর  পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হলগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছিল কুয়েট কর্তৃপক্ষ।