মাদরাসা শিক্ষকদের অনুপস্থিতি রোধে প্রযুক্তি নির্ভর নজরদারি

১০ জুলাইয়ের মধ্যে মাদরাসায় বায়োমেট্রিক হাজিরা বাধ্যতামূলক

৯ এপ্রিল, ২০২৫  
৯ এপ্রিল, ২০২৫  
১০ জুলাইয়ের মধ্যে মাদরাসায় বায়োমেট্রিক হাজিরা বাধ্যতামূলক
দেশের মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুপস্থিতি এবং নিয়মিত ক্লাসে অংশ না নেওয়ার প্রবণতা রোধে আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সব মাদরাসায় বায়োমেট্রিক হাজিরা চালুর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড।  নির্দেশনায় বেধে দেয়া সময়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে শিক্ষকদের নিয়মিত হাজিরা নিশ্চিত করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উভয়ের বিরুদ্ধেই প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছে। 
জানাগেছে, শিক্ষকদের অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত থাকা, ক্লাসে নিয়মিত অংশ না নেওয়া কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক দায় এড়িয়ে যাওয়া নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে, কিছু মাদরাসায় বছরের নির্দিষ্ট সময় বা বিশেষ কারণে ক্লাস কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় বলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে একটি কেন্দ্রীভূত, প্রমাণযোগ্য ও ডিজিটাল রেকর্ড সিস্টেম চালু করার কথা বহুবার উঠলেও এবার প্রথমবারের মতো নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলো।
এ নিয়ে বোর্ডের নির্দেশনায় স্পষ্ট বলা হয়েছে—১০ জুলাইয়ের পর মাদরাসাগুলোতে আকস্মিক পরিদর্শনে যাবে বোর্ড কর্মকর্তারা।
যদি বায়োমেট্রিক হাজিরার কোনো ব্যবস্থা না থাকে, কিংবা শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়মিত অনুপস্থিতি পাওয়া যায়, তবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মোঃ আবদুছ ছাত্তার মিয়া এ তথ্য তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।  এ নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, তারা চান দেশের সব মাদরাসা নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলুক। প্রযুক্তি এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পথে সহায়ক হবে। বায়োমেট্রিক হাজিরা শিক্ষকদের মধ্যে দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করবে। 
 
সূত্রমতে, দীর্ঘদিনের অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় গত সোমবার (৭ এপ্রিল) সব মাদরাসা সুপার ও অধ্যক্ষদের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সব মাদরাসায় বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করতে হবে। এতে অনুপস্থিতির তথ্য ডিজিটালভাবে সংরক্ষিত থাকবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরিদর্শক ও নীতিনির্ধারকরা তা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। তবে দেশের মোট ৯,২৫৬টি মাদরাসার বেশিরভাগ গ্রামে ও শহরতলীতে অবস্থিত হওয়ায় মাদরাসাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগকে এই প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কিছু প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় বাজেট বা কারিগরি সক্ষমতা না থাকায় তারা সময়মতো মেশিন কিনতে পারবে কি না তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি হাজিরার উপাত্ত সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় বোর্ড বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় সমন্বয় এবং সব প্রতিষ্ঠানের হাজিরা রিপোর্ট কেন্দ্রীয়ভাবে অ্যাক্সেসযোগ্য রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বোদ্ধারা। 
তবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরপরই মাদরাসা পর্যায়ে প্রশাসনিক সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পন্ন হবে বলে মনে করছেন শিক্ষানীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে, শিক্ষকরা সময়মতো উপস্থিত থাকলে শিক্ষার্থীদের ক্লাস সংখ্যা বাড়বে, শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটবে এবং অভিভাবকদের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে।
বাংলাদেশ শিক্ষাতত্ত্ব ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)–এর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৪১ লাখ ২৬ হাজার ৬২৬ জন শিক্ষার্থী মাদরাসায় অধ্যয়নরত—যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাই এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে মাদরাসা পর্যায়ে প্রশাসনিক শৃঙ্খলার পাশাপাশি বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করার উদ্যোগকে সময়োপযোগী মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।