শুল্ক নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন প্রধান উপদেষ্টা

৫ এপ্রিল, ২০২৫  
৫ এপ্রিল, ২০২৫  
শুল্ক নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন প্রধান উপদেষ্টা

আমদানি বৃদ্ধির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘাটতি কমানোর প্রচেষ্টার পাশাপাশি রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ' নীতির আওতায় বাংলাদেশের ওপর আরোপকৃত শুল্ক নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানোর প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের জরুরি বৈঠক শেষে  শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় তিনি বলেন,  আমাদের করণীয়গুলো বুঝার চেষ্টা করছি। আমরা এখানে সম্ভাবনাও দেখছি। বিপরীত বিষয়গুলো উপলব্ধি করে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে এনে তুলনামূলকভাবে আমাদের প্রতিযোগী দেশ থেকে ভালো অবস্থানে যাওয়ার প্রচেষ্টায় রত আছি।

দুই পক্ষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট রেখে কীভাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো হবে প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমদানি বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো যেতে পারে। সয়াবিন তেল, পোশাক শিল্পের জন্য তুলা, মেটাল স্ক্র্যাপ আমদানি করি যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এছাড়া শিল্প যন্ত্রাংশ, জ্বালানি পণ্য আমদানি করি। জ্বালানি পণ্য আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে করি। সামষ্টিকভাবে আমাদের অর্থনীতির জন্য যা ভালো সেগুলো সমন্বয় করে আমদানি করব। 

তিনি বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। যেহেতু আমাদের নিশ্চিতভাবে সবচাইতে বড় সম্পদ প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়। উনার যে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা সেটাকে আমরা ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করব।

সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে ব্রিফিংয়ে খলিলুর রহমান বলেন, ''মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ ধার্য করার ঘটনাটি আমাদের জন্য আকস্মিক কোনো ঘটনা না। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংযোগ করতে বলেছিলেন, সেই সূত্রে আমি নিজে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ওয়াশিংটনে আমেরিকান পররাষ্ট্র দপ্তর, ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার এবং অনন্যাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।

”সেই থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে আমরা ক্রমাগত এই বিষয়ে আলোচনা করে আসছি। সুতরাং ব্যাপারটা আকস্মিক নয়, আমরা এর জন্য প্রস্তুত।”

এ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা শিগগিরই কিছু ব্যবস্থা নেব এবং সেটা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করেই নেব। এখানে ভয় পাওয়ার আতঙ্কিত হবার কিছুই নেই। আমরা এই বিষয়ে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।''

জরুরি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার।

এর আগে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠকে ডিউটি কমাতে পাইপে ব্যবহৃত বাল্ব, জেনারেটর, জেনারেটিং সেট, ইলেক্ট্রিক্যাল আইটেমসহ ১০টার মতো প্রোডাক্টের লিস্ট করা হয়েছে। বস্তুত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা স্ক্র্যাপ আয়রন, গাড়ির ইঞ্জিন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হয়।  একইসঙ্গে পোশাক চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্য, ওষুধ, প্লাস্টিক ও মনোহারি পণ্যের বাইরে প্রযুক্তি ও আইটি সেবা রফতানি বাড়ানোর বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেছেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের বৈঠকে।