নাশকতায় অচল রবির ৫১ পাওয়ার
পার্বত্য চট্টগ্রামে মোবাইল নেটওয়ার্কে বড় বিপর্যয়

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় দুর্বৃত্তদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে মোবাইল অপারেটর রবির নেটওয়ার্ক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। গত তিন মাসে একাধিক স্থানে অপরাধী গোষ্ঠী রবির মোবাইল টাওয়ারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে এবং ফাইবার কেটে ফেলেছে, যার ফলে অর্ধশতাধিক টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে। এমনকি কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মীও অপহরণের শিকার হয়েছেন।
নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় জরুরি সেবা ব্যাহত হচ্ছে, পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্র মতে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, লক্ষীছড়ি, পানছড়ি, দিঘীনালা, মানিকছড়ি, নানিয়ারচর, রাউজান, ফটিকছড়ি ও বাঘাইছড়িসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় মোট ৫১টি মোবাইল টাওয়ার নাশকতার শিকার হয়েছে। জানা গেছে, এ ধরনের কার্যকলাপের পেছনে মূলত চাঁদাবাজির উদ্দেশ্য রয়েছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র খাগড়াছড়িতেই ৩২টি টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি সচল করা গেলেও ২৫টি এখনো বন্ধ রয়েছে। পার্বত্য তিন জেলার ২৬টি টাওয়ারও সন্ত্রাসীদের হাতে নাশকতার শিকার হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় ফাইবার সংযোগ পুনরুদ্ধার করা হলেও, তা আবার কেটে ফেলা হচ্ছে।
এরমধ্যে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ইতোমধ্যে তিনজন নিরাপত্তাকর্মী অপহৃত হয়েছেন। অপরিচিত নম্বর থেকে রবির কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। টাওয়ার পুনরুদ্ধারের কাজেও কোনো অগ্রগতি নেই, কারণ ইডটকো বাংলাদেশ লিমিটেডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপরাধীদের প্রতিহত করতে পারছে না।
রবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ধরনের অব্যাহত নাশকতায় প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের রাজস্ব ক্ষতির মুখে পড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ইডটকোর নিরাপত্তা দল এবং প্রশাসন যৌথভাবে সমস্যার সমাধানে কাজ করলেও এখনো কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
স্থানীয় দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে খাগড়াছড়ির বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, “মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় জরুরি যোগাযোগও সম্ভব হচ্ছে না। ওষুধপত্রও সব সময় পাওয়া যাচ্ছে না। দ্রুত টাওয়ারগুলো চালু না হলে সংকট আরও বাড়বে।”
রাঙ্গামাটির জুনাং তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “টাওয়ার না থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে গেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।”
রবি ও ইডটকো বাংলাদেশ লিমিটেড ইতোমধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই)-এর সঙ্গে বৈঠক করেছে। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছে।
রবি কর্তৃপক্ষ বলছে, অবিলম্বে টাওয়ারগুলো সচল করা ও নাশকতাকারীদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান না হলে স্থানীয়রা আরও বড় সংকটের মুখে পড়বে এবং অর্থনীতিতেও মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
এ বিষয়ে রাঙামাটির পুলিশ সুপার এস এম ফরহাদ হোসেন জানান, রবি তাদের কাছে আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ জমা দেয়নি। খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, “আমরা খবর পেয়ে থানাগুলোর আশপাশে টাওয়ারগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়েছি।”