হোয়াটসঅ্যাপে হ্যাকিং ফাঁদ; টার্গেটে ‘সাংবাদিক’ ও ‘উপাচার্যরা’

ঈদকে সামনে রেখে হোয়াটসঅ্যাপে ফাঁদ পেতেছে সাইবার দুর্বৃত্তরা। পুলিশের পোশাক পড়া ছবি দিয়ে এবং নিজেকে এসআই পরিচয় দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিয়ে নিরাপত্তা ত্রুটির কথা বলে ফোনের অ্যাকসেস নেয়ার ফাঁদ পেতেছে চক্রটি। এরই মধ্যে না বুঝেই অনেকে হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন। হ্যাক হওয়া নম্বর থেকে পাঠানো হচ্ছে সাহায্যের বার্তা।
তাই অচেনা ফোন নম্বর এবং অজ্ঞাত বা জ্ঞাত হোক হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো লিংকে ক্লিক করা এবং ফোনে ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাইলে তা না শেয়ার করার আহ্বান জানিয়েছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি জানিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিয়ে এরই মধ্যে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) সভাপতি শহীদুল ইসলামের ফোনে গুলশান থানার এসআই পরিচয় দিয়ে হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়। তৎক্ষণাৎ থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় এটি একটি প্রতারক চক্রের কাজ। একই ধরনের বিড়ম্বনায় পড়েন দেশ সংবাদ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন।
তবে তারা সচেতন ভাবে হোয়াটসঅ্যাপ ফাঁদ থেকে বাঁচলেও ফেসে গেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে শনিবার (২২ মার্চ) জরুরি ১৫ হাজার টাকা লাগবে। এখন ( বিকাশ নাম্বার উল্লেখ করে) এই নাম্বারে পাঠিয়ে দেবেন’- এমন ক্ষুদেবার্তা (মেসেজ) পাঠানো হয় আরেক সাংবাদিকের কাছে। পরে নিশ্চিত হতে ওই সাংবাদিক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে ফোনকল করলে তিনি জানান, তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার হ্যাক হয়েছে। ওই নাম্বার থেকে বিভিন্নজনকে একই মেসেজ পাঠানো হয়েছে।
শুধু ড. মো. আখতারুজ্জামান নয়, সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার হ্যাক কিংবা ভুয়া হোয়াটসঅ্যাপ আইডি খুলে টাকা চাওয়ার অভিযোগ করেছেন একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এসব ঘটনায় সতর্কতার পাশাপাশি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, তারা হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন। নতুবা ফেক আইডি ব্যবহার করে প্রতারক চক্র বিভ্রান্তিমূলক মেসেজ দিচ্ছে।
গত কয়েকদিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিমের নামে হোয়াটসঅ্যাপে ফেক আইডি ও ছবি ব্যবহার করে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার ভুক্তভোগীরা থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন।
শনিবার (২২ মার্চ) জগন্নাথের উপাচার্যের নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি সতর্কতামূলক পোস্ট দেওয়া হয়। পোস্টে উপাচার্য উল্লেখ করেন, ‘আমার অফিসিয়াল ছবি ব্যবহার করে
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর একটা ফেক আইডি ব্যবহার করে অর্থ চাওয়া হচ্ছে। এই ফেক আইডি ব্যবহার করে ভুয়া ও বিভ্রান্তিমূলক মেসেজ দেওয়া হচ্ছে। ভাইস চ্যান্সেলরের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি একটা ফেক আইডি। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
শনিবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের নামে ফেক হোয়াটসঅ্যাপ আইডি খুলে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার নাম ও ছবি ব্যবহার করা ফেক হোয়াটসঅ্যাপ আইডিতে দেখা যায়
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগে হ্যাকার ও প্রতারকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের টার্গেট করছে। সবাইকে এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
এ বিষয়ে জবি উপাচার্যের পিএস মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, একটি নম্বর থেকে উপাচার্যের ছবি ব্যবহার করে ৪০ হাজার টাকা দাবি করার বিষয়টি সামনে এসেছে। সকলকে এ বিষয়টি নিয়ে সচেতন থাকার অনুরোধ করছি।