প্রাক-বাজেট আলোচনায় ২৩ প্রস্তাব পেশ করেছে অ্যামটব

মোবাইল ফোনের সিম কার্ড ও ভার্চুয়াল সিম বা ই-সিম সরবরাহে আরোপিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং রিটার্ন দাখিলের প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে ব্যর্থতা হলে ৫০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত কর প্রত্যাহারের মতো আয়কর ও মূসক নিয়ে রাজস্ব বোর্ড-কে ২৩টি প্রস্তাব দিয়েছে দেশের মোবাইল অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটব।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের রাজস্ব বোর্ড ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বুধবার সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ নিয়ে পাঠানো বিস্তারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার বলেছেন, “একটি জরুরি সেবা হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের মোবাইল শিল্পকে খাতওয়ারি কর প্রদান করতে হয় এবং বৈশ্বিক বিবেচনায় আমরাই সবচেয়ে বেশি কর প্রদান করি। তদুপরি সরকার প্রায় প্রতি বছর এই খাতে কর বৃদ্ধি করে আসছে যার বিরূপ প্রভাব গ্রাহকদের উপর পড়ছে।”
তার দাবি, “কর বৃদ্ধির কারণে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে দেশে উল্লেখযোগ্যভাবে মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহক আশংকাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা অব্যাহত রয়েছে।”
আগামী অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে এমটব যেসব প্রস্তাব দিয়েছে সরকার সেগুলো বিবেচনায় নেবে এবং এই খাতে কর যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অ্যামটবের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সিম কার্ড সরবরাহে আরোপিত ভ্যাট অপসারণ করা হলে গ্রামাঞ্চলে মোবাইল ফোন সম্প্রসারণে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, কার্যত যা সরকারের দেশকে ডিজিটালাইজ করার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এছাড়া মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্পখাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
এ জন্য ই-সিমসহ ও সিম কার্ড সরবরাহের উপর ধার্য্য ভ্যাট অপসারণের প্রস্তাব দিয়েছে মোবাইল অপারেটররা।
রির্টান দাখিলের প্রমাণ জমা দিতে ব্যর্থ হলে আয়কর আইন অনুযায়ী ৫০ হারে অতিরিক্ত কর আরোপের বিধান থাকার কথা তুলে ধরে অ্যামটব বলেছে, এতে করে একই খরচের ওপরে ‘দ্বৈতকর’ আরোপ করা হয় যা আয়কর আইনের ‘মূলনীতি পরিপন্থি’।
এই নীতি পরিহারের অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।
যে সকল সরকারি সংস্থা যেমন- বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, বাংলাদেশ রেলওয়ে, নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি চার্জ গ্রহণ করে থাকে তাদের ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিল হবে না, এ ধরনের বিষয় স্পষ্ট করার অনুরোধ করা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরেছে অ্যামটব।
বর্তমান করের হার স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির জন্য ৪৫ শতাংশ; অন্যদিকে সাধারণ করপোরেট কর হার তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির জন্য ২৭.৫ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ২০ শতাংশ।
অ্যামটবের তরফে বলা হয়েছে, “আমরা মোবাইল অপারেটরদের পৃথক শ্রেণিভুক্ত না করে বরং অন্যান্য কোম্পানির সারিতে পুনর্বিন্যস্ত করা এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কর হ্রাস করার প্রস্তাব করেছি।
“মোবাইল খাতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। সাধারণত অপ্রয়োজনীয়, অবাঞ্ছিত, বিলাশবহুল পণ্য ও সেবায় এ ধরণের কর আরোপ করা হয়। আমরা সম্পুরক শুল্ক ও সারচার্জ পুরোপুরি তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।”
এছাড়াও বর্তমানে কোম্পানিসমূহ ব্যবসায় লোকসান করলেও ন্যূনতম কর পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছে তুলে ধরে অ্যামটব বলেছে, “যদিও কর বিধি অনুযায়ী ব্যবসার আয় পূর্ববর্তী বর্ষসমূহে সংঘটিত লোকসানের সঙ্গে নিস্পন্নকরণ অনুমোদিত, তবুও কোম্পানিকে ন্যূনতম কর পরিশোধ করতে হচ্ছে। আমরা সরকারের রাজস্ব এবং মূল্যায়নকারীর অধিকার উভয় বিষয় নিশ্চিত করার জন্য ন্যূনতম কর সমন্বয়ের সুযোগ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রেখেছি।
“সরকারি প্রতিষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহ মূল্য সংযোজন কর নিয়ন্ত্রণ আনুপাতিকভাবে অনুসরণ করছে না। যার ফলে অপারেটরদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা প্রয়োজন। সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের উপর মূল্য সংযোজন কর অপসারণ করার প্রস্তাব রেখেছি।”
টেলিকম অপারেটরদের জন্য পৃথক এইচএস কোডিং সিস্টেম না থাকায় অপারেটরদের এন্টেনা ডিজাইনিং ও কাস্টমাইজেশন সলিউশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তুলে ধরে এক্ষেত্রে পৃথক এইচএস কোডের সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।