ধর্ষণের ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে অনলাইন ও ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ

১৯ মার্চ, ২০২৫  
১৯ মার্চ, ২০২৫  
ধর্ষণের ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে অনলাইন ও ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ

ধর্ষণের ক্ষেত্রে অ্যাপে নালিশকে এফআইআর গ্রহণের মতো অনলাইনে অভিযোগ গ্রহণ এবং সাক্ষী গ্রহণ এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছে ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট। একই সঙ্গে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দ্রুত স্বল্পমেয়াদী ৮টি এবং দীর্ঘমেয়াদী ২টি (মোট ১০ দফা দাবি) বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

বুধবার (১৯ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ধর্ষণ ও নির্যাতন: আইনগত সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব দাবি জানানো হয়। এতে ১৭টি সংগঠনের সদস্যসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজ্ঞ এবং গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বক্তারা বলেন, ধর্ষণ আইন সংস্কারের প্রচারণা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। এর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ধর্ষণ অপরাধ প্রতিরোধে এবং ভুক্তভোগী ব্যক্তির ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনি এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করা। একইসঙ্গে এসব সমস্যা দূর করতে সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রণয়ন করা।

তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আবারও দেশজুড়ে আশঙ্কাজনক হারে যৌন ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা বেড়েছে। এসব প্রতিরোধ এবং ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ধর্ষণ আইন সংস্কার প্রয়োজন। সেজন্য ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট সমসাময়িক এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে ১০ দফা দাবি তুলে ধরছে।

এরমধ্যে স্বল্প মেয়াদি দাবিগুলো হচ্ছে-

মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধর্ষণ আইনের সংস্কার করতে হবে। ধর্ষণের সংজ্ঞাকে বিস্তৃত করে সেটি বৈষম্যহীন করতে হবে। ধর্ষণের আইনে পেনিট্রেশনকে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ণ করতে হবে। ধর্ষণ মামলায় অভিযোগকারী ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী ব্যক্তির চরিত্রগত সাক্ষ্যের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধি করতে হবে এবং দুই আঙ্গুলি পরীক্ষা নিষিদ্ধ করতে হবে। বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যক্রম সম্মতি সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদি ২ দফা দাবি হচ্ছে- শাস্তির আনুপাতিকতা প্রদান করা এবং সাজা প্রদানের নির্দেশিকা প্রবর্তন করা এবং ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র পরিচালিত একটি ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠন করা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা মতবিনিময় সভার সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন। স্বাগত বক্ত্যব্য দেন- ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া বিষয়ক সুপারিশমালা তুলে ধরেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ব্লাস্টের লিগ্যাল স্পেশালিস্ট এডভোকেট আয়েশা আক্তার ও ব্লাস্টের সিনিয়র গবেষণা কর্মকর্তা ফাহাদ বিন সিদ্দিক।

আলোচনা অংশ নেন ব্লাস্টের প্যানেল আইনজীবী ড. কাজী জাহেদ ইকবাল, ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির উপদেষ্টা এডভোকেট সালমা আলী, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. মাহীন সুলতান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ।