মধ্যরাতে উত্তাল বুয়েট

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বুয়েটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী মুনতাসির আল জেমি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেল থেকে পলায়নের ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। হত্যাকারী জেমির গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলে ‘ফাসির দড়ি ঝুলাই দে, সব খুনীদের গর্দানে’, ‘আবরার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’, আমার ভাই কবরে, খুনী কেন বাহিরে’, ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’—ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। এভাবেই প্রতিবাদে গভীর রাতে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট ক্যাম্পাস।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা বুয়েটের শহিদ মিনার থেকে মিছিল বের করেন। মিছিলটি পলাশী মোড়, ভিসি চত্বর হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশে মিলিত হয়। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলন করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
রাজু ভাস্কর্যে সংবাদ সম্মেলনে শহীদ আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, ‘আজ আমার ভাই আবরার ফাহাদের হত্যা মামলায় হাইকোর্টে শুনানি ছিল। সেখানে আমরা জানতে পারি, আমার ভাইয়ের খুনী মুনতাসির আল জেমি পালিয়ে গেছে। আমার ভাইয়ের খুনীর পলায়নের জন্য রাষ্ট্র দায়ী। বর্তমান সরকার এই দায় এড়াতে পারবে না। সরকারের উর্ধ্বতনরা এটা জানতে পেরেছিল কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতই সেটা লুকিয়ে রেখেছিল। হাইকোর্ট থেকে আজ জানানো হয়, সে ৫ আগস্টের পরেই পালিয়েছে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসন এ ব্যাপারটি কেন লুকিয়েছে, এত দিনে কেন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, আমরা এর স্পষ্ট কোনো জবাব পাইনি। এটা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক বিষয়। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জবাব চাই। পলাতক আসামিকে দ্রুত আটক করার পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানাই। এছাড়া পলায়নের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।’পলাতক আসামিকে দ্রুত আটক করার পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানাই। এছাড়া পলায়নের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।’
এদিকে কারা অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. ফরহাদ হোসন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি মুনতাসির আল জেমি (২৬), কয়েদি নং-৫১৭৭/এ, পিতা আব্দুল মজিদ, সাং-কালিয়ান, থানা-কেন্দুয়া, জেলা-নেত্রকোনা গত ৬ আগস্ট ২০২৪ তারিখে হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার, গাজীপুর থেকে ২০২ জন বন্দির সাথে একত্রে কারাগারের দেয়াল ভেঙে পালিয়ে যায়। পলাতক বন্দিদের মধ্যে ৮৭ জন ছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। ঘটনার পর গত বছরের ১৫ আগস্ট কোনাবাড়ী থানায় মামলা (৪(৮)২৪) দায়ের করা হয় এবং বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে জানানো হয়। এখন পর্যন্ত ৩৫ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তসহ মোট ৫১ জন পলাতক বন্দিকে গ্রেফতার করে পুনরায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অবশিষ্ট বন্দিদের ধরতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কারা কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, আবরার হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত মোট ২২ জন বন্দির মধ্যে বর্তমানে ২১ জন কারাগারে আটক রয়েছেন।
অপরদিকে বহুল আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে যেকোনো রায় ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে বি রুমি। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ ও জামিউল হক ফয়সাল। এছাড়া এই মামলায় শুরুর দিন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানি করেছিলেন। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী শিশির মনির।