সোশ্যাল মিডয়ায় জিরো টলারেন্সে ডাকসু টাস্কফোর্স

৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  
৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  
সোশ্যাল মিডয়ায় জিরো টলারেন্সে ডাকসু টাস্কফোর্স

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-১ এবং শিক্ষার্থী সংসদ-২ নামের দুইটি পেইজ নিয়ে গলদঘর্ম অবস্থায় নির্বাচন বোর্ড। এরমধ্যে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’ নামের ফেইসবুক গ্রুপে ৬৭ হাজার সদস্য রয়েছেন। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী।

আর শিক্ষার্থী সংসদ-২ নামে আরেকটি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৪৯ হাজার। আগে এই গ্রুপের নাম ছিল ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-২’। আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিস দেওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিয়ে শুধু ‘শিক্ষার্থী সংসদ-২’ করা হয়।

এই দুই গ্রুপসহ বিভিন্ন পাতা বন্ধের জন্য এরই মধ্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বরাবর চিঠিও দেয়া হয়েছে ডাকসু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। তবে তার পরেও কোনো কাজ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ৪ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের ওই দুটি ফেইসবুক গ্রুপসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘অপপ্রচার’ নিয়ে সতর্ক করেছে ডাকসু ভোটে পরিচালনায় গঠিত নির্বাচন কমিশন।

এ বিষয়ে জিরো-টলারেন্সের কথা জানিয়েছে এক ব্রিফিংয়ে ডাকসু ভোটের আচরণবিধি সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের প্রধান অধ্যাপক গোলাম রব্বানী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন,  এক্ষেত্রে প্রার্থী হলে ‘প্রার্থিতা বাতিল, শিক্ষার্থী হলে ‘বহিষ্কার/ এবং বাইরে কেউ হলে ‘মামলা’  করা হবে।  সাইবার বুলিং নিয়ে ‘সবচেয়ে বেশি সমস্যায়’ ভুগছেন উল্লেখ করে অধ্যাপক রব্বানী বলেন, “আমাদের আইসিটি সেল আছে, পাশাপাশি এখানে টাস্ক ফোর্স আছে, আসলে আমরা চেষ্টা করছি পেইজগুলোর এডমিনদের সাথে যোগাযোগ করে বন্ধ করার জন্য।”

তিনি আরো বলেন, “সাইবার বুলিং কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। আমরা আপনাদের মাধ্যমে এটা জানিয়ে দিতে চাই যে, কেউ যদি এগুলো অপপ্রচারগুলো চালিয়ে যায়, এ ধরনের অপরাধমূলক কাজগুলো করে, তাহলে আমরা আমাদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দিকে আমাদের যেতে হবে।”

এক প্রশ্নে ডাকসু ভোটের এই রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থী দ্বারা পরিচালিত পেইজগুলো যাদেরকে আমরা আইডেন্টিফাই করতে পারব এবং যারা আমাদের ছাত্র, তাদের জন্য আমাদের এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর বাইরে যারা আছে, তারা হয়ত আমাদের ছাত্র না, সেটাতে আমরা মামলা করব প্রয়োজনে এবং আইনে যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, সেটা আমরা করব।

ফেইসবুক গ্রুপে আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন থেকে অভিযোগ পাওয়ার কথা তুলে ধরে রিটার্নিং কর্মকর্তা রব্বানী বলেন, “অভিযোগ বিভিন্ন সংগঠন থেকে আমরা পাচ্ছি। প্রার্থীদের কাছ থেকে পাচ্ছি। তো আসলে আজকে সকালে আমরা কমিশন থেকে নোটিস করেছি এবং খুব শক্ত করে নোটিসটা করেছি। আমরা আসলে আমরা এখন ব্যবস্থা নিতে চাই। 

“এই যে পেজগুলোতে যে ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে, এতে আমাদের এখন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই”- যোগ করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ওই দুই গ্রুপসহ বিভিন্ন পাতা বন্ধের জন্য বিটিআরসি চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তাদের (বিটিআরসি) কিছু লিমিটেশনস আছে, তারা (বন্ধ) করতে পারছে না। এটি হচ্ছে তাদের বক্তব্য।

“তাদের এখানে যে লিংকগুলো আছে, সেগুলো অন্য দেশ থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। আইসিটি বিষয়ে আমি বিশেষজ্ঞ নই, আমি যেটুকু শুনেছি, এটুকু বলছি যে, আমাদের এখানকার যে ডোমেইনগুলো আছে, সে ডোমেইনগুলো তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কিন্তু এগুলো তারা ওভাবে বন্ধ করতে পারে না।”

বিটিআরসির পক্ষ থেকে বন্ধ করা সম্ভব না হওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই বলে মন্তব্য করেন রব্বানী।

তিনি বলেন, “আমাদের তো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই পেজগুলো যারা চালাচ্ছে, তাদেরকে আইডেন্টিফাই করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।

“আমরা হয়ত সেই ব্যবস্থার দিকে যাব। আপনাদেরকে এটুকু নোটিস করলাম। এখন আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে এই পেজগুলোর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি।”


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-১ এবং শিক্ষার্থী সংসদ-২ নামের পেইজ নিয়ে বারবার অভিযোগ আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি তাদের সাথে কথা বলেছি ফোনে। তারা একদিন বন্ধ করে আরেকদিন চালু করে দেয়। এর মধ্যেতো আপনারা দেখেছেন দুয়েকদিন বন্ধ রেখেছিল, আবার চালু করেছে এবং সেখানে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচারের নিউজগুলো আসছে।”

বিকাল পৌনে ৪টার দিকে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিন ও অধ্যাপক রব্বানীর ব্রিফিংয়ের আগে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান এবং এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ।

এসব গ্রুপে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ নিয়েই তারা কথা বলতে এসেছিলেন, সে কথা এক প্রশ্নের উত্তরে জানান অধ্যাপক জসীম উদ্দিন।

এদিন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’ গ্রুপে ২০০২ সালের ২২ জুলাই রাতে শামসুন নাহার হল ট্র্যাজেডি নিয়ে এআই দিয়ে তৈরি একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। ওই পোস্টে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের ব্রিফিংয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতেও ‘সাইবার অপরাধে ছাড়’ না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

সেখানে বলা হয়, “নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের প্রচারকালে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতীতের কর্মকাণ্ড নিয়ে সাইবার বুলিং এবং ব্যক্তিগত চরিত্রহননের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিশেষত ছাত্রী প্রার্থীদের নিয়েও নানাভাবে সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা ঘটছে। যা মানবাধিকার পরিপন্থি।

“কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে রিটার্নিং কর্মকর্তাগণ কর্তৃক গঠিত ডাকসু আচরণবিধি সংক্রান্ত টাস্কফোর্স এবং সাইবার নিয়ন্ত্রণ সেলের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সাইবার বুলিং কিংবা অপপ্রচারের বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।”