বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর দিনে বিএসসিএল এর সঙ্গে চুক্তি করল স্টারলিংক
‘আর কখনওই বন্ধ হবে না ইন্টারনেট’

বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু দুই মাস পর আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিলো স্টারলিংক। ১৮ই জুলাই থেকে এই ইন্টারনেট সেবা প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশী হোলসেলার নিযুক্ত হলো বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড। এছাড়াও বর্তমানে মালয়েশিয়া থেকে স্টারলিংকের সেবা ব্যবহার করতে হলেও আগামী ৩০ দিনের মধ্যেই দেশে গেটওয়ে তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টেনেন্টালে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। এ সময় দ্ব্যার্থহীন ভাষায় তিনি ঘোষণা করেন, আগামীতে কোন সরকারি জানো ইন্টারনেট বন্ধ করতে না পারে সেই আইন করা হচ্ছে। জটিলতার কারণে আইনটি তৈরিতে একটু সময় লাগছে।
এর আগে বিএসসিএল এর সঙ্গে বিটু বি চুক্তি করে স্টারলিংক। বিএসসিল এমডি ইমাদুর রহমান ও স্টারলিংক এর ব্যবসা পরিচালনা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার চুক্তিতে সই করেন। এ সময় আন্তর্জাতিক কৌশল ও সরকারি সম্পর্ক পরিচালক রিচার্ড গ্রিফিথস উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে লরেন ড্রেয়ার বলেন, ১৮ বছর আগে স্পেস এক্স এ যোগ দেওয়ার সময় ছোট একটা পরিবেশ ছিল। এখন এখানে ১৫ হাজার কর্মী কাজ করে। বাংলাদেশের জনগণের জন্য নজিরবিহীন সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য।
তিনি জানান, ১৫০ দেশ ও অঞ্চলে স্টারলংক এর কার্যক্রম আছে। আপনাদের নেতৃত্ব নতুন প্রযুক্তিতে গ্রহণ করেছেন। উচ্চ গতির ইন্টারনেট এখন আর কল্পনা নয়। ক্রিটিক্যাল এন্ড রিলায়েবল লাইফ লাইন যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ঘটনায়।
‘স্টারলিংক শুধু ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী নয় বরং স্পর্শকাতর এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেটের লাইফলাইন, মন্তব্য করে লরেন বলেন, আমরা শুধু স্যাটেলাইট চালু করছি না, টেলিমেডিসিন, শিক্ষা সহ নানান সুবিধার নতুন দুয়ার উন্মোচন করছি। অন্যদের জন্য অনুকরণীয় জাতি আপনারা। নিজেদের জীবনের উন্নয়নে মানুষ স্টারলিংক ব্যবহার করবে। এদেশের মানুষ স্টারলিঙ্গ ব্যবহার করে কিভাবে তাদের জীবনযাত্রার বৈপ্লবিক পরিবর্তন করছে, সেটি দেখতে আমরা মুখিয়ে আছি।
রিচার্ড বলেন, বাংলাদেশে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস খুবই দারুণ ছিল। নতুন ব্যবসা উদ্যোগগুলোকে বাংলাদেশ গ্রহণ করছে।
জরুরী কাজে বক্তব্যের পরই সংবাদ সম্মেলন ত্যাগ করলে গণমাধ্যম কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্ন মুখোমুখি হন প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি ও টেলিকম বিষয়ক বিশেষ সহরকারি।
লিখিত বক্তব্য পাঠে ফয়েজ আহমদ বলেন, এক বছর আগে ঠিক আজকের দিনে বাংলাদেশ ডিজিটাল ডার্কনেস এ পড়েছিল। আজ নতুন শুরু করলাম । স্টারলিংক এর মাধ্যমে পরিষ্কার বার্তা দিতে চাই যে, বিশ্বের সাথে আমাদের জনগণের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার দু:সাহস যেন আর কেউ না করে। নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট শুধু একটা সুবিধা না, অধিকার। স্টারলিংক। বাংলাদেশের প্রতিটি স্থানে থাকবে, বিশেষ করে দূরবর্তী তৃণমূল এলাকায়। আজ বাংলাদেশ কানেক্টেড, এবং এটা আর কখনও ডিসকানেক্টেড হবে না।
প্রশ্নোত্তর পর্বে এক প্রশ্নের আইসিটি ও টেলিকম বিষয়ক বিশেষ সহরকারি ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সংশ্লিষ্ট আইন অত্যন্ত জটিল হওয়ায় কিছুটা সময় লাগছে। তবে আগামী এক বছরের মধ্যে এর কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্টারলিংকের প্যাকেজ কী বেশি দামে হচ্ছে কিনা এবং কোনও কাস্টমাইজড অফারের পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসায়িক দিকগুলো কোম্পানির নিজস্ব। তবে আমরা দেখছি, শ্রীলঙ্কার তুলনায় আমাদের প্রাইস অনেক কম। ভবিষ্যতে উপকূলীয়, দ্বীপ ও দুর্গম এলাকার জন্য ইউজ কেস ডেভেলপ হলে প্রাইস ফ্লেক্সিবিলিটিও আসবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) জহিরুল ইসলাম, বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী ও আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ইমাদুর রহমান, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আসলাম হোসেন সেসময় উপস্থিত থাকবেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।