টেলিকম নীতিমালা নিয়ে তড়িঘড়িতে বিএনপির উদ্বেগ
নতুন খসড়া টেলিকম নীতামালায় বড়দের স্বার্থ রক্ষা ও ছোটদের বিদায় ঘণ্টা?

নতুন খসড়া টেলিকম নীতামালায় বড়দের স্বার্থ রক্ষা ও ছোটদের বিদায় ঘণ্টা বাজাবে শঙ্কায় আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে জাতীয় টেলিকম নীতিমালা প্রণয়নের পক্ষে নয় বিএনপি। দলটি মনে করে, এই নীতিমালা বড় মোবাইল কোম্পানির পক্ষে বাড়তি সুবিধা দেবে। বিএনপি বলেছে, বড় মোবাইল কোম্পানিকে এন্টারপ্রাইজ ব্রডব্যান্ড বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে এই লাইসেন্স সংস্কারের মাধ্যমে।
২ জুন, বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর সাম্প্রতিক “ড্রাফট টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি ২০২৫” উদ্যোগের বিষয়টি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও আমরা এই মুহূর্তে এ ধরণের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিষয়ে আশংকা প্রকাশ করছি। এই নীতির উদ্দেশ্য হলো লাইসেন্সিং পদ্ধতি সহজ করা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি উৎসাহিত করা এবং গ্রামীণ জনগণের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো- যা অবশ্যই ইতিবাচক একটি বিষয়। তবে, খসড়া নীতিমালাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, এতে কিছু গুরুতর সমস্যা রয়েছে যা টেলিকম খাতে সমতাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়নে বাধা দিতে পারে। বিএনপি গঠনমূলক মনোভাব নিয়ে এই খসড়ার সম্ভাব্য দুর্বলতা, অস্পষ্টতা এবং বড় মোবাইল অপারেটরদের (MNO) পক্ষে অধিক সুবিধা পাওয়ার কিছু ধারা তুলে ধরছে — যা ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (SME) এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
নির্বাচনের আগে এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়নকে বিএনপি অযৌক্তিক মনে করছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে টেলিকম নীতিমালা প্রণয়ন সমীচীন হবে না। সরকারের এমন সব পদক্ষেপ নেয়া উচিত, যা দেশ ও জনগণের কল্যাণ বয়ে আনে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আগামীর রাজনীতি ও গণতন্ত্র উত্তরণের পথ যাতে মসৃণ রাখা যায়, সতর্কতার সঙ্গে সেই পথেই হাঁটছে বিএনপি।
জরুরী সংবাদ সম্মেলনে বড় মোবাইল কোম্পানিকে সুযোগ করে দিতে টেলিকম নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
নীতিমালা সংস্কারে তড়িঘড়ি না করে "এই গুরুত্বপূর্ণ নীতি বাস্তবায়নের আগে তারা যেন পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের (SME, বিশেষজ্ঞ, ভোক্তা সংগঠন) সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা করার পর নীতিমালা চুড়ান্ত করার" আহ্বান জানানো হয়েছে। দেয়া হয়েছে ৩টি প্রস্তাবনা।
এতে বলা হয়েছে, একাধিক সেবাখাতে মালিকানা রাখার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে বড় মোবাইল অপারেটররা একাধিক খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এতে প্রতিযোগিতা কমে যাবে এবং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়বে। ডি-রেগুলেশনের (নিয়ন্ত্রণ শিথিল) পরে SME, বিশেষ করে স্থানীয় ISP বা ছোট টেলিকম অপারেটরদের সম্পদ ও দায়বদ্ধতা নিয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় তারা বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়তে পারে। এছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য মালিকানার সীমা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে, যা বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে এবং খাতের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে।
অপরদিকে উল্লম্ব ও সমান্তরাল মালিকানার বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যার অভাবে বড় কোম্পানিগুলো আরও বাজার দখল করে নিতে পারে বলে শঙ্কা বিএনপি'র। নীতিমালায় এন্টারপ্রাইজ সার্ভিসের সীমা অস্পষ্টতা তুলে বলা হয়েছে, মোবাইল অপারেটরদের ফাইবার-ভিত্তিক ব্যবসা সংযোগ সেবা কোথায় সীমাবদ্ধ তা স্পষ্ট নয়, ফলে বিবাদ ও অসাম্য তৈরি হতে পারে। স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড বা নতুন ডিজিটাল সেবা নিয়ে নীতিতে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই, যা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে।
বড় মোবাইল অপারেটরদের প্রতি পক্ষপাত নিয়ে বিএনপির পর্যবেক্ষণ, ISP লাইসেন্স একীভূত করার ফলে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সুবিধা পাবে। ANSP লাইসেন্সে স্পেকট্রামের ওপর নির্ভরতা বড় কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে রাখবে। ‘ফিক্সড টেলিকম’ লাইসেন্স খোলা থাকলেও সারা দেশে সেবা দিতে হবে এবং উচ্চ মান বজায় রাখতে হবে — যা SME-দের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।