জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করলো এটুআই

৩ জুন, ২০২৫  
৩ জুন, ২০২৫  
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করলো এটুআই

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক দক্ষতা উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করবে আইসিটি বিভাগের অধীন "এস্পায়ার টুI ইনোভেট (a2i) প্রোগ্রাম।  এ লক্ষ্যে ৩ জুন, মঙ্গলবার আইসিটি টাওয়ারে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে।  চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এটুআই প্রকল্প পরিচালক মোঃ রাশেদুল মান্নাফ কবীর এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানউল্লাহ।

এ সময় অনুষ্ঠানের প্রদান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। 

আইসিটি সচিব শিষ হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এটুআই প্রকল্পের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত সচিব মোঃ মামুনুর রশিদ ভূঁইয়া; ‘ডিজিটাল ইন্টারেক্টিভ ন্যাক ফর নলেজেবল হিউম্যান অ্যাসেটস ইনিশিয়েটিভ (দীক্ষা)’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ কবির হোসেন; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোঃ লুৎফর রহমান এবং অধ্যাপক ড. মোঃ নুরুল ইসলাম; এটুআই-এর ফিউচার অফ এডুকেশনের প্রধান মোঃ আফজাল হোসেন সারওয়ার প্রমুখ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এটুআই-এর প্রোগ্রাম ব্যবস্থাপনার প্রধান আবদুল্লাহ আল ফাহিম।

 অবিলম্বে প্রকল্প শুরুর বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠানে  প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, "আমাদের প্রথম কাজ হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রক্রিয়াগুলোকে ডিজিটালাইজ করা, যাতে শিক্ষার্থীরা বিলম্ব ছাড়াই সহজে তাদের সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট এবং অন্যান্য কাগজপত্র পেতে পারে।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, লার্জ  ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল এবং অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করে কোর্সগুলোকেও কর্মজগতের সাথে সঙ্গতি রেখে আধুনিকীকরণ করব। মুখস্থবিদ্যার চেয়েও শিক্ষার্থীদের আরো বেশি কিছু প্রাপ্য; তারা নিজেদের আইডিয়া, সমস্যার সমাধান এবং দেশের কল্যাণে অবদান রাখতে নতুন ভ্যালু অ্যাড করার মতো সুযোগ চায়। 

শিক্ষকদেররও দক্ষতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে ফয়েজ তাইয়্যেব বলেন, মিশ্র শিক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রভাষকরা নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন। এক্ষেত্রে অনলাইন উপকরণ ক্লাসরূমকে প্রাণবন্ত করবে।

তিনি বলেন, "আমরা দীক্ষা (DIKKHA) এবং মুক্তপাঠ (MuktoPaath)-এর মতো প্রকল্পগুলোকে নতুন করে ঢেলে সাজাব। এতে করে প্রতিটি শিক্ষার্থী তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবেন।" 

 "শিক্ষকদের আত্মবিশ্বাস বাড়লে শিক্ষার্থীদের সক্ষমতাও বাড়বে"- যোগ করেন ফয়েজ। 

এটুআই এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা চুক্তিকে ‘বৃহত্তর সংস্কার কর্মসূচির অংশ’ উল্লেখ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, "বহু বছর ধরে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো আধুনিক প্রত্যাশার সাথে সঙ্গতি রেখে একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে কসরৎ করেছে। ডিজিটাল রূপান্তর এখন আর কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়। এটুআই (a2i)-এর সহায়তায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (National University) সরকারি উচ্চশিক্ষার জন্য একটি নতুন মান নির্ধারণ করতে শুরু করতে পারে।"

 জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর দশ লক্ষেরও বেশি স্নাতক বের হচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. আমানুল্লাহ বলেন, “আমরা দেশের উচ্চ শিক্ষার প্রায় ৭০ শতাংশের যোগান দেই। আমাদের শিক্ষকরা নিষ্ঠার সাথে কাজ করেন। আমাদের অবকাঠামোর উন্নতি হচ্ছে। তবুও আমাদের পাঠ্যক্রম সবসময় বর্তমান সময়ের চাহিদার সাথে সামসঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই চুক্তিটি  আমাদের কারিকুলামকে শিল্পের চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করতে এবং অধ্যয়ন ও কর্মসংস্থানের মধ্যে যোগসূত্র প্রতিষ্ঠায় শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।”

এই অংশীদারিত্ব পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে উপাচার্য বলেন, “আমরা এই সহযোগিতা শুধু কাগজে কলমে রাখব না। কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা যৌথ উদ্যোগ শুরু করব।  নতুন কোর্স পরীক্ষা করব এবং শিক্ষার্থীদের তাদের পড়াশোনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইন্টার্নশিপে নিযুক্ত করব বলে আশা রাখি।”

চুক্তি অনুযায়ী, উভয় পক্ষই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার মান বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় দক্ষতা তৈরি এবং টেকসই চাকরি সৃষ্টিতে কাজ করবে। এটুআই (a2i) বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঠ্যক্রমে ডিজিটাল এবং তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক দক্ষতা যুক্ত করতে সহায়তা করবে। এই প্রোগ্রামের বিশেষজ্ঞরা শিক্ষকদের সাথে সম্মিললিত ভাবে পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা, নতুন মডিউল তৈরি এবং অনলাইন রিসোর্স প্রস্তুত করবেন। এছাড়াও, এটুআই ভবিষ্যতের শিক্ষা মডেল নিয়ে যৌথ গবেষণা করবে। ফ্লেক্সিবল স্ট্যাডিতে উৎসাহিত করতে পরামর্শ দেবে। শিক্ষকদের  ব্লেন্ডেড লার্নিং পদ্ধতিতে দক্ষ হতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ইন্টার্নশিপ এবং চাকরি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রোজেক্টের মাধ্যমে কাজের সুযোগ তৈরিতে এটুআই, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে বিভিন্ন নিয়োগদাতাদের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। 

অন্যদিকে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে নিজেদের অধিভুক্ত কলেজগুলোর মধ্যে পাঠ্যক্রম সংস্কার, ডিজিটাল গভর্ন্যান্স এবং ই-সার্ভিসগুলোর জন্য বিস্তারিত কৌশল তৈরি করবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার নির্দেশনা এবং দক্ষতা মূল্যায়ন করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) টুলস পরীক্ষা করবে। অনলাইন অধ্যয়নের জন্য শিক্ষার্থীরা যেন সম্পূর্ণ একাডেমিক ক্রেডিট পায়, সেজন্য ডিজিটাল কোর্সগুলোকে সত্যায়ন করবে। এছাড়া, শিক্ষক এবং শিল্প উপদেষ্টাদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের ব্যবসায়িক ধারণা বিকাশের জন্য  এমন একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্ম তৈরি করবে যেখান থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করবে।