এককালীন ব্যয় ৪৭ হাজার টাকা
মাসিক ৬ হাজার টাকায় দেশে স্টারলিংক সেবা চালু; গতি ৩০০ এমবিপিএস

বিনিয়োগ সম্মেলনে মক টেস্টের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে সেবা দেয়া শুরু করলো স্টারলিংক। বাণিজ্যিক সেবার শুরুতে মাসিক ৬ হাজার ও ৪ হাজার ২০০ টাকার দুইটি প্যাকেজে কৃত্রিম উপগ্রহ ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা নিতে পারবেন গ্রাহকরা। শ্রীলঙ্কার পরে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এই সেবা চালু করলো শতকোটিপতি ইলনমাস্কের কোম্পানিটি। বাংলাদেশের জন্য ঘোষণা করা প্যাকেজের একটিতে খরচ বেশি। আরেকটিতে তুলনামূলক কম। আর স্টারলিংকের সেটআপ যন্ত্রপাতির জন্য এককালীন খরচ হবে ৪৭ হাজার টাকা।
সোমবার (১৯ মে) বিকালে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক সেবা চালুর বিষয় বিশেষ সহকারীকে নিশ্চিত করেছে স্টারলিংক কর্তৃপক্ষ। এরপর মঙ্গলবার সকালে নিজেদের এক্স হ্যান্ডেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।’
মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লিখেছেন, ‘শুরুতে স্টারলিংক দুটি প্যাকেজ দিয়ে শুরু করছে- স্টার্লিংক রেসিডেন্স এবং রেসিডেন্স লাইট। মাসিক খরচ একটিতে ৬০০০ টাকা, অপরটিতে ৪২০০। সেটাপ যন্ত্রপাতির জন্য ৪৭ হাজার টাকা এককালীন খরচ হবে,’ যোগ করেন তিনি।
![]() |
ঘোষণা
স্টারলিংক অফিশিয়ালি বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে। গতকাল বিকালে তারা ফোন কলে আমাকে বিষয়টা জানিয়েছে এবং আজ সকালে তাদের এক্স হ্যান্ডেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
শুরুতে স্টারলিংক দুটি প্যাকেজ দিয়ে শুরু করছে- স্টার্লিংক রেসিডেন্স এবং রেসিডেন্স লাইট। মাসিক খরচ একটিতে ৬০০০ টাকা, অপরটিতে ৪২০০। তবে সেটাপ যন্ত্রপাতির জন্য ৪৭ হাজার টাকা এককালীন খরচ হবে। এখানে কোন স্পীড ও ডাটা লিমিট নেই। ব্যক্তি ৩০০ এম্বিপিএস পর্যন্ত গতির আনলিমিটেড ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন।
বাংলাদেশের গ্রাহকরা আজ থেকেই অর্ডার করতে পারবেন। এর মাধ্যমে ৯০ দিনের মধ্যে যাত্রা শুরুতে স্যারের প্রত্যাশাটি বাস্তবায়িত হলো।
খরুচে হলেও এর মাধ্যমে প্রিমিয়াম গ্রাহকদের জন্য উচ্চমান এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রাপ্তির টেকসই বিকল্প তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি যেসব এলাকায় এখনো ফাইবার কিংবা দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছেনি, সেখানে কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণ এর সুযোগ পাবেন, এনজিও ফ্রিল্যান্সার এবং উদ্যোক্তারা বছরব্যাপী নিরবিচ্ছিন্ন উচ্চগতির ইন্টারনেটের নিশ্চয়তা পাবেন।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
|
মূহূর্তের মধ্যে পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। লাইক, লাভ রিয়্যাক্টের বন্যা বয়ে যায়। জমা পড়ে শতাধিক মন্তব্য। শেয়ার হয় ততোধিক।
এর আগে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট প্রাঙ্গণে গত ৯ এপ্রিল ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পান মেলায় যাওয়া দর্শনার্ধীরা। সামিটে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) স্টলে বিশেষ কিউআর কোড ব্যবহার করে দর্শনার্থীরা বিনা মূল্যে স্যাটেলাইট-চালিত ইন্টারনেট প্রযুক্তির গতি পরীক্ষার সুযোগ পান। তথন ওই স্টল থেকে একটি নেটওয়ারর্কে একইসঙ্গে ৪৫ জনের মতো যুক্ত হওয়া গিয়েছিলো। ফাস্টডটকম থেকে ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষায় দেখা যায়, সর্বোচ্চ ২২০ মেগাবিট পার সেকেন্ড (এমবিপিএস) ও সর্বনিম্ন ১৭০ এমবিপিএস । তখন মালয়েশিয়ান আইআইডি থেকে যুক্ত করা হয়েছিলো বাংলাদেশকে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ মার্চ স্টারলিংক বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ) থেকে বিনিয়োগ নিবন্ধনের অনুমোদন পায়। এরপর গত ২৯ এপ্রিল স্টারলিংককে কার্যক্রম শুরু করার জন্য ৯০ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়। সর্বশেষ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক সার্ভিসেস বাংলাদেশ, লিমিটেডকে দুটি লাইসেন্স হস্তান্তর করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সেদিন বিকেলে স্টারলিংককে ১০ বছর মেয়াদে “ননজিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অরবিট অপারেটর লাইসেন্স” ও “রেডিও কমিউনিকেশন অ্যাপারেটার্স লাইসেন্স” নামে দুটি পৃথক লাইসেন্স হস্তান্তর করে বিটিআরসি।
সেসময় ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রথম আলোকে বলেছিলেন, মে মাসের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানিয়েছিলেন, স্টারলিংক বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে সেবা চালুর জন্য একটি অনুরোধ করেছে, যেটা লোকাল গেটওয়ে ছাড়া। সরকার ৯০ দিনের জন্য সে অনুমতি দেবে। এ ছাড়া তারা ট্যারিফ প্ল্যানের (সেবা মূল্য) জন্য কাজ করছে। এ বিষয়ে তারা বিটিআরসিতে আবেদন করবে। এরপর মঙ্গলবার তিনি সেবা চালুর বার্তা দিলেন।
এখন স্টারলিংক সংযোগ পেতে হলে, গ্রাহকদের প্রথমে স্টারলিংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (starlink.com) গিয়ে আগ্রহী গ্রাহক হিসেবে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর প্রি-অর্ডার কনফার্ম করতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হতে হবে। ডেলিভারির পর, স্টারলিংক কিট (স্যাটেলাইট ডিশ ও রাউটার) সেটআপ করতে হবে। এরপর স্টারলিংক অ্যাপের মাধ্যমে সংযোগ সক্রিয় করতে হবে।
তবে যেকোনো প্যাকেজ গ্রহণের জন্য গ্রাহককে শুরুতে এককালীন ৪৭ হাজার টাকা ব্যয় করে স্টারলিংকের সেটআপ কিট (যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম) কিনতে হবে। এতে থাকবে স্যাটেলাইট ডিশ, রাউটার ও পাওয়ার সাপ্লাই ইত্যাদি, যা ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন নিশ্চিত করবে।
ইলন মাস্কের স্পেসএক্স মালিকানাধীন স্টারলিংক মূলত লো-আর্থ অরবিট (এলইও) স্যাটেলাইট ব্যবহার করে ইন্টারনেট পরিষেবা দিয়ে থাকে। এটি বিশেষ করে দুর্গম ও গ্রামীণ অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে এখনও অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় ফাইবার অপটিক বা ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছায়নি, সেখানে স্টারলিংক সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতে পারে। দুর্গম এলাকায় এলাকায় স্টারলিংকের সেবা হতে পারে গেমচেঞ্জার।