মুনাফার সুখ থেকে সবার মুখে হাসি ফোটানো স্বর্গীয় সুখ: প্রধান উপদেষ্টা
ফেব্রিক লাগবে, ওয়ালটন, বিকাশ, স্কয়ার পেলেন সম্মাননা; নাগরিকত্ব পেলেন কিহাক সাং

রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে শুরু হওয়া বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের তৃতীয় দিনে চলছে চার দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের (বিডা) আয়োজনে চলমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তার উপস্থিতেই অনুষ্ঠানে জমা পড়া ৬৭টি আবেদনের মধ্যে ৫ জন ব্যক্তি ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। এরা হলেন - উদ্ভাবন ও ইনক্লুসিভিটিতে টেক স্টার্টআপ ফেব্রিক লাগবের উদ্যোক্তা নাজমুল ইসলাম, ইএসজি ক্যাটাগরিতে ওয়ালটনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস মাহবুবুল আলম; বিদেশী বিনিয়োগকারী ক্যাটাগরিতে বিকাশ এবং স্থানীয় ব্যবসা ক্যাটাগরিতে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরিক এস চৌধুরী।
এছাড়াও বিশেষ সম্মাননা পান কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং। অনুষ্ঠানে তাদের হাতে সম্মানানা তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা। কিহাককে দেয়া হয় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দিয়ে তাদেরকে ‘বাংলাদেশের নায়ক’ বলে সম্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা। অপরদিকে নোবলজয়ী ইউনুসের কাছ থেকে নাগকিত্ব পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন কি হক।
বক্তব্যের শুরুতে ভাষা হারিয়ে ফেলেন অধ্যাপক ইউনুস। মহান মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এসময় তিনি কিছু সময়ের জন্য চুপ হয়ে থাকেন। স্বাধীন বাংলাদেশের ক্ষুধা-দারিদ্র পীড়িতদের কথা বলতে গিয়ে ভিজে আসে কণ্ঠস্বর। এরপর জানালেন, দুর্ভিক্ষের অভিঘাত মোকাবেলায় শুরু করা তার উদ্যোক্তা জীবনের। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে ক্রেইজি আইডিয়ার দেশ। তাই আমরা সব করতে পারি। সমাজকে বদলে দিতে পারে তারা শুধু দেশ নয় বিশ্বেও অবদান রাখতে পারবে। সামাজিক ব্যবসায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, মুনাফা করা সুখকর। কিন্তু মানুষের মুখে হাসি ফোটানো আরো বেশি সুখের। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নতির ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমেই সম্ভব দারিদ্র্য বিমোচন। আর সামাজিক ব্যবসার আদর্শ স্থান বাংলাদেশ। ব্যবসায় বিশ্ব বদলের অন্যতম অস্ত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো অনেক জায়গা অনুন্মোচিত রয়েছে। প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সামাজিক প্রয়োজন মেটাতে তরুণদের সামনে রয়েছে দারুণ সুযোগ। |
তরুণদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তরুণ প্রজন্ম সম্মিলিতভাবে পৃথিবীকে বদলে দেবে। তারা সরকারের অপেক্ষায় বসে থাকবে না। সেই নতুন বিশ্ব গড়তে এখন থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে ব্যবসা করা শুধু এ দেশেই বিনিয়োগ নয়, বরং এর অর্থ বিশ্বব্যাপী সামাজিক ব্যবসার অংশ হওয়া।
তিনি আরো বলেন, তিনি বলেন, সবাই মিলে উপার্জন করে মানুষের ভাগ্য বদল করাটা স্বর্গীয় অনুভূতি। কার্বন নিঃসরণ বাদ দিয়ে আমরা নতুন সভ্যতা গড়তে পারি। বর্তমান সভ্যতা আত্মবিধ্বংসী।
বুধবার (৯ এপ্রিল) সকাল ১০টায় শুরু হয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানেই স্টারলিংকের পরীক্ষামূলক ব্যবহার উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এজন্য এরই মধ্যে ভ্যেনুতে স্থাপন করা হয়েছে স্টারলিংক ডিস। কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেটে অনলাইনে সম্প্রচার হচ্ছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সাবলীল সম্প্রচারের মধ্যেও সাড়ে ১০টার দিকে দেড় মিনেটর মতো শব্দ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় অস্বস্তি প্রকাশ করেন উপস্থিত এবং অনলাইনে সংযুক্ত দর্শনার্থীরা।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার দূত লুৎফে সিদ্দিকীর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিনিয়োগ বোর্ড চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরেন এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।