আন্তর্জাতিক কল ব্যবসা সিন্ডিকেটের অনিয়মের খোঁজে দুদকে যাচ্ছে বিটিআরসি

১৬ এপ্রিল, ২০২৫  
১৬ এপ্রিল, ২০২৫  
আন্তর্জাতিক কল ব্যবসা সিন্ডিকেটের অনিয়মের খোঁজে দুদকে যাচ্ছে বিটিআরসি

সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এবং ভারত সীমান্ত দিয়ে আইটিসি’র মাধ্যমে দেশে আসে ইন্টারনেটের রসদ ব্যান্ডউইথ। এই ব্যান্ডইথ ২৬টি ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটর ও ৩০টি বিদেশি ও দেশি ভয়েস কল নির্ধারিত অপারেটরে সংযুক্ত করার প্রযুক্তি সেবা প্রতিষ্ঠান আইসিএক্স এর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটর সমান সুযোগের পরিবর্তে প্রভাবশালীদের তত্ত্বাবধানে গঠিত সংগঠন আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরামের (আইওএফ) মধ্য থেকে সাতটিকে আন্তর্জাতিক কল পরিচালনার কর্তৃত্ব দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। 

আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইজিডব্লিউ অপারেটরদের ব্যবসা কুক্ষিগত করার পর নিজ কোম্পানির নামে ৬২৫ কোটি টাকা লোপাট করেছে এই আইওএফ চক্র। আর আইজিডব্লিউ অপারেটরদের কাছ থেকে বাজার উন্নয়ন ফান্ডের নামে এই টাকা জমা হয়েছে আইজিডব্লিউ কম্পিউটারের লাইসেন্স না থাকা ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কোম্পানি বেক্সিমকো কম্পিউটার্সে। 

সূত্রমতে, আইওএফ এর টাকা ব্যয়ের অস্বচ্ছতা নিয়ে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর একটি চিঠি দেয় বিটিআরসি’র অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগ। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে যে হিসাব পাওয়া গেছে তা ছিলো জটিল। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ সময়ের হিসাবে তহবিল সংগ্রহ ও বিতরণ সংক্রান্ত তথ্য এবং তহবিলের প্রাপ্য ও প্রদেয় হিসাব বিবরণী বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে মোট জমা রয়েছে  ৬২৫ কোটি ৮৩ লাখ ৫২ হাজার ৪৫৬ টাকা। স্থিতি আছে ৫ কোটি ৩২ লাখ ২৬ হাজার ৮১০ টাকা। 

এদিকে অপর এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জানুয়ারি আইওএফ বিটিআরসি’র কাছে দুইটি দাবি দিয়েছে। একটিতে বলা হয়েছে, নন আইওএস অপারেটরদের আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন ২০ লাখে উন্নীত করা হলে আন্তর্জাতিক  কলরেট নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে। তাই তারা আগের নিয়েমে ১০ লাখ করার পক্ষে দাবি তুলেছে। 

জানাগেছে, সার্বিক দিক দিয়ে হিসাবে অস্বচ্ছলতা দেখা দেয়ায় এসব অনিয়মের বিচারে দুদক এর স্মরণাপন্ন হতে যাচ্ছে বিটিআরসি। সাম্প্রতিক কমিশন বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানাগেছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিগত ১৬ বছরে আইজিডব্লিউ লাইসেন্স হাতিয়ে এই অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাশালী নেতা শামীম ওসমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শামসুল হক টুকু’র মতো ব্যক্তিরা। তাদের পরিচালি ও আশীর্বাদপুষ্ট ভিশন টেল লিমিটেড ২৩৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, রাতুল টেলিকম ১৩০ কোটি ৪০ লাখ টাকা, কাই টেলিকম ১২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, টেলেক্স লিমিটেড ১১৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা, অ্যাপল গ্লোবাল টেল ১১৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা,  বেস্টটেক টেলিকম ১৯৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বকেয়া রেখে ব্যবসায় বন্ধ করে দিয়েছে। 

এসব বকেয়া আদায় এবং অবৈধ ভিওআইপি রোধ করার নামে সালামান এফ রহমানের কোম্পানি এই অর্থ নেয় বলে জানিয়েছেন টেলিভিশন চ্যানেল যুমুনা টিভি। টিভিটির প্রতিবেদক মাসুজ্জামান রবিন জানিয়েছেন, আইওএফ নিয়ন্ত্রণ করে আন্তর্জাতিক কলের ৪ শতাংশ হাতিয়ে নিয়ে বাজার উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়। কলের প্রকৃত দর গোপন করে আন্তর্জাতিক কল বন্টনে অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে।  সালমানের করা অনুশাসনে ৫ বছরে সব আইজিডব্লিউ অপারেটরকে প্রতিমাসে টাকা দিতে হতো তার মালিকাানাধীন বেক্সিমকো কম্পিউটার্স এর হিসাবে। ২৪৯ বারে এই হিসাবে ৬৩১ কোটি টাকা জমা দেয়া হয়েছে। আইজিডব্লিউ এর বাকি টাকা ২৫ বারে বাংলাট্র্যাক কমিউনিকেশনের অ্যাকাউন্ট, ৪২ বারে গ্লোবাল ভয়েস টেলিকম অ্যাকাউন্ট, ২৫ বারে ডিজিকনে অ্যাকাউন্ট এবং একবার গিয়েছে ইউনিক ইনফোয়ের হিসাবে অথচ এই অর্থ থেকে মোবাইল অপারেটরদের কাছে বকেয়া ৩২০ কোটি টাকার একটি টাকাও পরিশোধ করা হয়নি।