সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে ট্রেনের টিকিটের অবৈধ বাণিজ্য

২১ মার্চ, ২০২৫  
২১ মার্চ, ২০২৫  
সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে ট্রেনের টিকিটের অবৈধ বাণিজ্য

যাত্রীদের নিজস্ব জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে টিকিট কেনার ওপর জোর দেয়ার পরও সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেনের টিকিট বিক্রির অসাধু চক্রের কার্যক্রম থেমে নেই। ফেসবুকে বিভিন্ন নামে অ্যাকাউন্ট খুলে এই চক্রটি রেলওয়ের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দুই থেকে আড়াইগুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রি করছে। আবার একই টিকিট একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার অভিযোগও মিলছে। 

অফিসিয়ালি বৃহস্পতিবার শেষ হলেও ফেসবুকে ট্রেন টিকিট (টিকিট বাজার), ট্রেন টিকিট বায় অ্যান্ড সেলিং, অনলাইনে ট্রেনের টিকিট তথ্য, ট্রেনের টিকিট ক্রয় এবং বিক্রয় নিরাপদ গ্রুপ�Train Ticket Buy and Sell এবং হোয়াটস অ্যাপ অনলাইনে ট্রেনের টিকিট গ্রুপের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় বিক্রি হচ্ছে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট।  

এসম মাধ্যমে অফার দেখে হাফিজুর রহমান আকন্দ নামে একজন ব্যবহারকারী ‘ট্রেন টিকিট বায় অ্যান্ড সেলিং’ নামক ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন, গতকাল এক প্রতারক তিস্তা ট্রেনের টিকিট দেওয়ার কথা বলে ১ হাজার টাকা নিয়ে ফেসবুকে তাকে ব্লক করে দিয়েছে। তিনি প্রতারকের বিকাশ নম্বরও শেয়ার করেছেন।

ফেসবুকে টিকিটের বিজ্ঞাপন দেখে অসাধু চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সোহরাব হোসেন নামে আরেকজন যাত্রী। দরদাম কষাকষির পর টিকিট মূল্য কিছুটা কম রাখার আশ্বাস দেওয়া হলে সোহরাব তাদের দেওয়া ঠিকানায় যান। সোহরাবের বর্ণনা অনুযায়ী, অসাধু চক্রটি প্রথমে নিজেদের নামে টিকিট কিনে নেয়। পরে ক্রেতার কাছে বিক্রির সময় তাদের নিজস্ব অ্যাপের মাধ্যমে টিকিটের গায়ে থাকা পূর্বের জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর মুছে ফেলে ক্রেতার তথ্য যুক্ত করে দেয়।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত একজন টিকিট কালেক্টর (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, টিকিটের সঙ্গে যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্রের মিল আছে কি না, তা প্রাথমিকভাবে চেক করা হয়। যদি টিকিট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য না মেলে, তবে সেই যাত্রীকে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।

এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার শাহদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রত্যেক ট্রেনে নিরাপত্তার দায়িত্বে টিজি পার্টি (ট্রেন গার্ড) এবং জিআরপির সদস্যরা থাকেন। তারা প্রথম বগি থেকে শেষ বগি পর্যন্ত টহল দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে যাত্রীসেবা দিয়ে আসছে। এবার রেলওয়ে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করছে। ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’Ñ এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করছি। তিনি যাত্রীদের নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে রেলওয়ের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে টিকিট কিনতে পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন, রেলওয়ের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ছাড়া অন্য কোনোভাবে বা থার্ড পার্টির মাধ্যমে টিকিট কিনে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করলে যাত্রীদের জরিমানা এবং রেলওয়ে আইন অনুযায়ী শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ থেকে শুরু করে ট্রেনে ওঠা পর্যন্ত কয়েক স্তরের নিরাপত্তা চেকিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান শাহদাত হোসেন। প্রথমত, স্টেশনের প্রবেশ পথে চেকিং করা হয়। এরপর ট্রেনে ওঠার সময় টিকিট ও জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করা হয়। এ ছাড়া ট্রেনে ট্রাভেল টিকিট এক্সামিনার (টিটিই) পজ মেশিনের মাধ্যমে টিকিট স্ক্যান করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো যাত্রী ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

টিকিট কালোবাজারি বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ে পুলিশের একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, এই বিষয়টি আমাদের আওতায় পড়ে না। শুধু ট্রেনের মধ্যে এবং এর আশপাশে সংঘটিত অপরাধের দায়িত্বে আমরা থাকি। এই ধরনের অনলাইন প্রতারণার জন্য সাইবার ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর জানিয়েছেন, পুলিশের সাইবার প্যাট্রলিং অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের অনলাইন প্রতারণাকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নেয়া হচ্ছে। জনগণ যাতে প্রতারণার শিকার না হয় এজন্য সবাইকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।